হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে অত্যাধুনিক করা হচ্ছে। নতুন টার্মিনাল সুবিধাসহ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আরো অবকাঠামো হবে। বিমানবন্দরকে ঢেলে সাজাতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের আরো সম্প্রসারণ ও বিশ্বমানের করতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পে অর্থ সাহয়তা দেবে জাইকা। এটি ২০২২ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেতে প্রস্তাবটি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের ১১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা ৭৯ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা ও ২ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে। যাচাই-বাছাই শেষে এটি খুব শিগগিরই একনেক সভায় উঠছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় ও একমাত্র আন্তর্জাতিক এ বিমানবন্দরের আয়তন হচ্ছে ১ হাজার ৯৮১ একর। ক্রমাগত ফ্লাইটের চাপ লাঘব, যাত্রীসেবা বৃদ্ধি আর যুগের চাহিদাকে সামনে রেখে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও অত্যাধুনিক করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত বছরের ৮ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য জরুরি সরঞ্জাম সরবরাহ ও সংস্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর ব্যয় ধরা হয় প্রায় কোটি টাকা। তার পরও শাহজালাল বিমানবন্দরের সার্বিক ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না দেশি-বিদেশিরা। শুধু তাই নয়, নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ২০১৬ সালের ৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। এতে দেশের ভাবমূর্তিসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা
থেকে রক্ষা পেতে সরকার মরিয়া উয়ে উঠেছে। ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রাসারণ (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এসএম গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ২ ফেব্রয়ারি প্রকল্প যাচাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ প্রকল্পের আওতায় নতুন একটি আন্তর্জাতিক মানের যাত্রী টার্মিনাল বিল্ডিং করা হবে। নতুন কার্গো কমপ্লেক্স, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স, মাল্টিলেভেল কার পার্কিংও নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া রেসকিউ অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং সুযোগ-সুবিধাও থাকবে। একই সঙ্গে বোর্ডিং ব্রিজ আর রানওয়ে নির্মাণের সঙ্গে পরিধি সম্প্রসারণ করার মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তাতে বদলে যাবে বিমানবন্দরের দৃশ্যপট। নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে মিলবে সব ধরনের সুবিধা। যাত্রীধারণ ক্ষমতা বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়বে।
সূত্রো আরো জানায়, এ টার্মিনাল থেকে বর্তমান ভিভিআইপি গেটের বিপরীতে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে একটি সাবওয়ে (আন্ডারপাস)। এ সাবওয়ের মাধ্যমে তৃতীয় টার্মিনাল থেকে যাত্রীরা গাড়ি নিয়ে সরাসরি চলে যেতে পারবেন এক্সপ্রেসওয়েতে। এতে একদিকে সময় বাঁচবে। অন্যদিকে যাত্রীদের পড়তে হবে না যানজটে। বিমানবন্দরের বর্তমান অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে শুরু করে ক্যান্টনমেন্টের কুর্মিটোলা গলফ মাঠের সীমানা পর্যন্ত, বিমানবন্দরের সীমানা যেখানে শেষ হয়েছে সেই স্থান পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দ্রুত কাজ শুরু এবং শেষ করার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি যাত্রীকে সেবা দিচ্ছে এই বিমানবন্দর। ফলে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের একাধিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট একই সঙ্গে অবতরণ করলে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২-এর কার্যক্ষমতা ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হবে। ২০১৮ সালের পর পুরনো দুটি টার্মিনালে অপারেটিং কাজ করা যাবে না। তাই ২০১৯ সালের মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণ করা একান্ত দরকার। এসব কথা চিন্তা করেই সরকার নতুন টার্মিনাল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। গত বছরের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, দ্বিতীয় রানওয়ে এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রণীত প্রাথমিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও খসড়া মাস্টার প্ল্যান উপস্থাপন করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেয়া এবং ক্রমবর্ধমান যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দেন। তার পরই মন্ত্রণালয় নড়েচড়ে বসে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।