এখানে বৈষম্য আছে। নিত্যদিন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই কোটি মানুষের বেঁচে থাকা। শত প্রতিবন্ধকতা পথ আগলে দাঁড়ায় এগিয়ে যাওয়া মানুষদের সামনে। রাজনৈতিক দৈন্যতা নাগরিক জীবনের উৎকর্ষ সাধনে বড় বাধা এখনও।
এমন হাজারো সমস্যা বুকে ধারণ করেই এগিয়ে যাওয়া এক বিস্ময়ের নাম ‘বাংলাদেশ’। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে এক অদম্য বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ হার না মানার উপাখ্যান তৈরি করে চলছে প্রতিনিয়ত।
ভিখারির তকমা দিয়ে যে বাংলাদেশে খবরদারি করত বিশ্ব মোড়লেরা, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সেই মোড়লেরাও এখন অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
উন্নয়নের মর্যাদায় নতুন এক বাংলাদেশের পরিচয় মিলছে। অনুন্নয়নের মাপকাঠিতে বাংলাদেশের আর মূল্যায়ন হবে না। এগিয়ে যাওয়ার হাজারো গল্প শুনিয়ে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশের আসনে আসীন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে বাংলাদেশের সৃষ্টি, তারই কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে সে বাংলাদেশের নতুন পরিচয়। উন্নয়ন প্রশ্নে বাংলাদেশ এখন নিজস্ব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে। পদ্মাসেতু প্রশ্নে বিশ্ব ব্যাংককে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অন্তত সেটাই প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ।
রোজ এখানে কেতন ওড়ে নতুনের স্বপ্ন নিয়ে। নতুন এক বাংলাদেশের বিজয়গাথা নিয়ে মাতোয়ারা বাঙালি। বাংলার আকাশে আজ আনন্দের ফানুস। রঙিন সাজে সাজছে বাংলাদেশ।
অভাব, দৈন্যতা আর অশিক্ষা দিয়ে যে বাংলাদেশের ঠিকানা, আজ সে বাংলাদেশের গ্রামের মেয়েরাও সাইকেলে চেপে স্কুলে যায়। অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত মেয়েরা অজোপাড়া থেকে গার্মেন্টে এসে কাপড় বুনে বিশ্বকে সভ্য করে। বাংলাদেশের নারীরা এখন বৈমানিক। এ দেশের মানুষের ঘাম ঝরানো অর্থে পদ্মা সেতু হচ্ছে। হাজারো স্বপ্ন বাস্তবায়নের নাম এখন বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২৫ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে গড়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হার সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি বাড়েনি। পরের ১০ বছর জিডিপি বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ হারে। আর গত ১২ বছর ধরে দেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ঘরে আসবে, প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এই রাজনীতিক বলেন, আজকের বাংলাদেশের যে পরিচয় তা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। নানা অসঙ্গতি থাকলেও সাধারণ মানুষ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ আস্থা রাখছেন। সরকার যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছে, তাতে আমরা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারব বলে আশাবাদী।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অবশ্যই বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। আমরা একটি ল্যান্ডমার্ক অতিক্রম করেছি। এটি আনন্দের কথা। তবে বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, রফতানি না বাড়া, রেমিটেন্স কমে যাওয়া, মানবসম্পদ না বাড়া, শিক্ষার মানোন্নয়ন না হওয়া, শিক্ষিত বেকার বৃদ্ধি পাওয়া, দারিদ্র্য, আয় বৈষম্যের মতো বিষয়গুলো আমাদের নিয়মিত চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে পারলেই উন্নয়ন টেকসই হবে।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নেই একটি দেশের মাপকাঠি নির্ধারণ করা সম্ভব না। রাজনীতি, গণতন্ত্র, সুশাসনকেও আমলে নিতে হবে।
এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা হয় আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সঙ্গে। তিনি বলেন, আজকের যে বাংলাদেশের রূপ, তার কাঠামো তৈরি করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করা হলে হয়তো স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীলের মর্যাদা পেত।
বাংলাদেশের উন্নয়নে সাধারণের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা নেতৃত্বের মডেল তৈরি করেছেন। আজকের বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সাধারণের আস্থা বাড়ছে। চ্যালেঞ্জ আসবেই। আর শেখ হাসিনা সকল চ্যালেঞ্জ মোকবেলা করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে বিশ্বাস করি। স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় আমরা কিছু সুবিধা হারাবো হয়ত, কিন্তু বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।