রাজনীতি ডেস্কঃ দেশে আপাতত কোনও নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও আপাতত নেই কোনও দ্বন্দ্ব-সংঘাত। সরকারবিরোধী দল বিএনপির যেসব নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তারাও বেশিরভাগ মামলায় জামিনে মুক্ত। এরপরও এই মুহূর্তে দলটির অধিকাংশ নেতা মনে করছেন, আপাতত নতুন মামলা বা গ্রেফতারের আশঙ্কা না থাকলেও ঈদের সময় পুরনো মামলার জামিন বাতিলের শঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। সবমিলিয়ে ঈদুল আজহার উৎসব আমেজের অনুভূতির পাশাপাশি মামলা-গ্রেফতারের শঙ্কা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়িমুখো হচ্ছেন।
রাজধানীতে অবস্থানরত বিভিন্ন বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরে বিএনপি মাঠের রাজনীতিতে কঠোর কর্মসূচিতে ছিল না। ভবিষ্যতেও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই কারণে দলের নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিও কম। আগের মামলাগুলোয় বেশিরভাগ নেতাকর্মী জামিনে মুক্ত। তবে, কিছু কিছু এলাকায় ঈদকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন দলটির নেতারা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, গত ৩টি ঈদে খালেদা জিয়া ছিলেন কারাগারে। বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মন তো কিছুটা খারাপ। তবে গত দুই ঈদের তুলনায় আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর ঝামেলা কম থাকায়, কিছুটা স্বস্তির পাশাপাশি গ্রেফতার-নতুন মামলার শঙ্কাও কাজ করছে তাদের মনে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। খালেদা জিয়া এখনও মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি। তাহলে আমরা কীভাবে স্বস্তিতে ঈদ করি? তবে, নেতাকর্মীরা বেশিরভাগ মামলায় জামিনে আছেন, এটা ঠিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার নামে ১৬টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় আমি জামিনে আছি।’
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা কীভাবে স্বস্তিতে ঈদ করবো? খালেদা জিয়া কারাগারে। কয়েকদিন আগেও দলের শীর্ষ নেতাদের নামে একটি মিথ্যা মামলা হয়েছে। বিএনপির ওপর সরকারের নির্যাতন থেমে নেই। তবে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর হয়তো এবার নির্যাতনের মাত্রাটা কম হচ্ছে।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুদু বলেন, ‘আমার নামে থাকা ১২টি মামলা আছে। তবে এখন জামিনে আছি। কিন্তু বলা তো যায় না কখন, কোন মামলার জামিন বাতিল হয়ে যায়!’
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘সামনে তো কোনও নির্বাচন না থাকায় এবারের ঈদে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা নির্যাতনের মাত্রাটা কম। আমার নামে থাকা ৩টি মামলায় এখন জামিনে আছি।’
নিজ নির্বাচনি আসন চুয়াডাঙ্গা এবার ঈদ উদযাপন করবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, ‘এবার হয়তো প্রকাশ্যে হামলা-মামলা গ্রেফতার কম। তবে নীরবে চাঁদাবাজি চলছে। এছাড়া, কখন নির্যাতন হবে, এটা তো বলা যায় না। এই জন্য নেতাকর্মীরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন।’
এবার লক্ষ্মীপুরে ঈদ করবেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নীল-নকশা বাস্তবায়ন করার জন্য বিরোধী দলের ওপর সব সময় নির্যাতন চালিয়ে আসছে। সেই নির্যাতনের মাত্রা কোনও কোনও ঈদে কম-বেশি হয়ে থাকে। এবার ঈদে হয়তো নির্যাতনের মাত্রা কম।’
এ্যানী জানান, তার নামে বিভিন্ন ধরণের ৪২টির মতো মামলা আছে। তবে, সব মামলায়ই তিনি জামিনে আছেন বলেও জানান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দফতর সম্পাদক সাঈদুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘এবার ঈদে এখনও নেতাকর্মীরা স্বস্তি নিয়ে যে যার গ্রামের বাড়িতে যেতে পারছেন। তবে কিছু কিছু এলাকায় যাদের মামলার জামিন নিতে পারেনি, তারা গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন।’ তিনি জানান, তার নামে থাকা ১২টি মামলায় এখন জামিনে আছেন।
ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ইশতিহাক কবীর বলেন, ‘অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের ঈদে নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক কম। ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক সময় হঠাৎ করে গ্রেফতার শুরু হয়ে যায়। তাই একেবারে স্বস্তি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি, এমন বলা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘২০-২৫ টির মতো মামলা আছে আমার নামে। এর মধ্যে অনেক মামলায় জামিনে আছি।’
বিএনপির নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন?
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন। এবারের ঈদে সেখানেই থাকবেন তিনি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজ সংসদীয় আসন ঠাকুরগাঁও ঈদ করবেন। এছাড়া, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ঢাকায় ঈদ করবেন। স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কেরানীগঞ্জে, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নোয়াখালীতে, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে ও ইকবাল মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জে ঈদ করবেন।
ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু চুয়াডাঙ্গায়, আহমেদ আজম খান ঢাকায়, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বরকত উল্লাহ বুলু নোয়াখালীতে এবং, আবদুল আউয়াল মিন্টু ঢাকায় ঈদ করবেন।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবারও দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঈদ করবেন। এছাড়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন নরসিংদীতে, হাবিব উন নবী খান সোহেল ঢাকায়; সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে আসাদুল হাবিব দুদু লালমনিরহাট, এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহে, নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনায়, ডা. শাখাওয়াৎ হোসেন জীবন সিলেটে ঈদ করবেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।