নাফ নদীর বুকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপার সম্ভার নিয়ে জেগে আছে বাংলাদেশের এক টুকরো ভূখন্ড জালিয়ার দ্বীপ। টেকনাফের এ দ্বীপে হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ট্যুরিজম পার্ক। নেটং পাহাড়ের নিকটবর্তী নাফ নদীতে আশির দশকে জেগে ওঠা এ চরের ২৭১ একর ভূমির উপর ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ইউনি কনসাল্ট নামের একটি জার্মান পরামর্শক সংস্থার মাধ্যমে এই দ্বীপে সব ধরণের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এটি অবকাঠামো উন্নয়নে ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজা।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে পুরো দেশের পর্যটন খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করতে চলেছে জালিয়ার দ্বীপ। একপাশে মিয়ানমার, অন্যপাশে বাংলাদেশের বিশাল নেটং পাহাড়ের আকর্ষনে ছোট্ট এই ভূ-খন্ড মুখর করে রাখবে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। এর ফলে টেকনাফ ও আশেপাশের এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়বে। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বাণিজ্যেও। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নেটং পাহাড়ের কাছে নাফ নদীর মাঝখানে অবস্থিত দ্বীপটিতে এখনো পর্যন্ত কোন জনবসতি গড়ে উঠেনি। টেকনাফের কিছু বাসিন্দা সেখানে অবৈধভাবে চিংড়ি ও লবণ চাষ করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে ওই দ্বীপে যাতায়াত করে লোকজন।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্র জানায়, জালিয়ার দ্বীপে যাতায়াতের জন্য কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক সংলগ্ন স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে একটি আকর্ষনীয় ঝুলন্ত সেতু নির্মান করা হবে। নদীর উপর ও খোলা আকাশের নিচে ঝুলে থাকা সেতুটি হেঁটে পার হয়ে পর্যটকরা প্রকৃতির নয়াভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে যাবেন জালিয়ার দ্বীপে। এছাড়াও দ্বীপে গড়ে তোলা হবে রিসোর্ট, ক্যাবল কার, ওশনেরিয়াম, ভাসমান রেস্টুরেন্ট, কনভেনশন সেন্টার, সুইমিং পুল, ফান লেক, অ্যাকুয়া পার্ক, ফিশিং জেটি, এমিউজমেন্ট পার্ক, শিশু পার্ক, ওয়াটার স্পোর্টস প্রভৃতি।
কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির সহ সভাপতি মোঃ সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, জালিয়ারদ্বীপে ট্যুরিজম পার্ক হলে টেকনাফসহ পুরো কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। কারণ কক্সবাজারে প্রতিবছর প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসেন। কিন্তু তাদের জন্য এখনও পর্যাপ্ত বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে টেকনাফে ট্যুরিজম পার্কটি হলে পর্যটন খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সরকার পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে নাফ নদের মধ্যখানের এই দ্বীপটিতে ট্যুরিজম পার্ক করছে। এজন্য বেজাকে পুরো দ্বীপটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ স্পটের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বিশেষজ্ঞরা এসেও জায়গাটি দেখে মুগ্ধ হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, কক্সবাজারকে ঘিরে বর্তমান সরকার যেসব মেগা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তারই একটি হচ্ছে জালিয়ারদ্বীপে ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ। আশা করি, দ্বীপটিতে ট্যুরিজম পার্ক হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আর কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা।
বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, নাফ ট্যুরিজম পার্কটি হবে বাংলাদেশের প্রথম ট্যুরিজম পার্ক। যা বিনোদন জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এই পার্কে সুস্থ বিনোদনের সব ব্যবস্থা থাকবে। আর ট্যুরিজম পার্কটি সফলভঅবে বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের সরকারি কর্মসংস্থান এবং পরোক্ষভাবে আরও ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
তিনি আরো জানান, এই দ্বীপে চলতি বছরের মধ্যেই ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ হবে এবং আগামী বছরের মধ্যে একটি ঝুলন্ত ব্রীজ নির্মাণ করা হবে। প্রসঙ্গত ‘২০১৫ সালের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পরিবেশ ও বন সচিব কামাল উদ্দিন আহমদসহ ১১ জন সচিব জালিয়ার দ্বীপে যান। নদী বেষ্টিত দ্বীপের সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হন সকলে। এরপর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্বীপটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় সরকার।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।