২৮ ডিসেম্বর অনুষ্টিত হচ্ছে কক্সবাজার জেলা পরিষদের বহুল প্রতিক্ষিত নির্বাচন। অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন এতদাঞ্চলের সর্বমহলের কাছে অধিক জনপ্রিয় ও হেভিওয়েট দুই নেতা। তাঁরা হলেন, জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ও আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি মোস্তাক আহমদ চৌধুরী এবং অপরজন হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান সাবেক এমপি বরণ্য রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। মোস্তাক আহমদ চৌধুরী আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের নতুন কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য। অন্যদিকে সালাহ উদ্দিন মাহমুদ বর্তমান মহাজোট সরকারের অন্যতম শরীকদল জাতীয় পাটির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য। জেপির চেয়ারম্যান হলেন সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। গত ১২ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও রির্টানিং কর্মকর্তা মো.আলী হোসেন দুই প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্ধ দিয়েছেন। এতে মোস্তাক চৌধুরী পেয়েছেন আনারস ও সালাহউদ্দিন মাহমুদ পেয়েছেন মোটর সাইকেল প্রতীক।
জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে মুলত চেয়ারম্যান পদে এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থী জেলার আট উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। গিয়েছেন সকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার ও পৌরসভার মেয়র কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে। মোস্তাক আহমদ চৌধুরী নির্বাচনী প্রচারণায় স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা মোস্তাকসহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে রেখেছেন। অপরদিকে সালাহউদ্দিন মাহমুদ হাতে গুনা কয়েকজন শুভানুধায়ীকে নিয়েই যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারনায় ভোটারদের কাছে।
জেলার আট উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদের জনসাধারণ ও ভোটাররাও দুই প্রার্থীকে কাছে পেয়ে খুশিতে পঞ্চমুখ। এতে করে বেশ উৎসাহ পাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বি দুই প্রার্থীও। জেলার রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক সুশাসন প্রতিষ্টা এবং অবহেলিত জনপদের উন্নয়নে নানাভাবে অবদান রাখার সুবাদে দুই প্রার্থীই ভোটারদের মাঝে জনপ্রিয় এবং অধিক পরিচিত। তবে নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মোস্তাক চৌধুরীর চেয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন মাহমুদ।
অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে বিরোধীদল বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কোন প্রার্থী না দেয়ায় জেলার আট উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জেলা পরিষদের প্রথম জেলা চেয়ারম্যান এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদের জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও আঞ্চলিকতার কথা বেশী উচ্চারিত হচ্ছে ভোটারদের মাঝে। সাধারণ ভোটাররা (তৃনমুলের জনপ্রতিনিধি) মনে করেন, নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তি ইমেজে দুই প্রার্থীই সমান যোগ্যতার অধিকারী। তবে তৃনমুলে সালাহউদ্দিন মাহমুদ জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছে।
ভোটার ও সাধারণ জনগনের অভিমত, জাতীয় পাটি (এরশাদ) সরকারের আমলে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সালাহউদ্দিন মাহমুদ যোগ্যতার বলে জেলার আট উপজেলায় উন্নয়নের নতুন বিপ্লবের সুচনা করেন। জেলা পরিষদের বর্তমান ভবনসহ জেলা জুড়ে তিনি সকল ধরণের সরকারি দপ্তরের অবকাঠামোগত এবং এলাকার রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন। যা এখনো সকল উপজেলার জনপদে স্বাক্ষী হিসেবে স্থিত রয়েছে। পাশাপাশি তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে জনগনের সকল ধরণের সেবায় জেলা পরিষদের দরজা খোলা রাখার প্রবণতা চালু করেন। এসব কারনে অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে গিয়ে সালাহ উদ্দিন মাহমুদ নিজেকে স্বাবলীল ভাবে ভোটারদের মাঝে উপস্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছেন।
স্থানীয় ভোটাররা দাবি করেন, প্রার্থী হিসেবে মোস্তাক আহমদ চৌধুরী নিসন্দেহে একজন সৎ ও যোগ্য প্রার্থী। কিন্তু তিনি বিগত পাঁচবছরে উন্নয়ন বলতে তিনি দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।
চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার সচেতন ভোটাররা মনে করেন, দায়িত্বপালনকালীন সময়ে উন্নয়ন কাজের ব্যর্থতা ও সংবর্ধনা অনুষ্টানে ঘোষনা দেয়া অনুদান না দেয়ার বিরূপ প্রভাবে নির্বাচনী মাঠে মোস্তাক আহমদ চৌধুরী অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। অপরদিকে সেই তুলনায় নিজের আমলে জেলার প্রত্যন্ত জনপদে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করার কারনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন সালাহউদ্দিন মাহমুদ।
জানা গেছে, জেলার আট উপজেলার মধ্যে চকরিয়া উপজেলায় রয়েছে ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। অপরদিকে পেকুয়া উপজেলার রয়েছে ৭টি ইউনিয়ন এবং কুতুবদিয়া উপজেলায় আছে ৬টি ইউনিয়ন। তারমধ্যে চকরিয়া পৌরসভা ও উপজেলার হারবাং, বরইতলী, কৈয়ারবিল, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, বদরখালী, পশ্চিম বড়ভেওলা, মানিকপুর. পূর্ব বড়ভেওলা, লক্ষ্যারচর, কাকরা, সুরজপুর মানিকপুর, চিরিঙ্গা, খুটাখালী, ডুলাহাজারা, ফাসিয়াখালী, সাহারবিল ও বমু বিলছড়ি সহ ১৯টি ইউনিয়নে মোট ভোটার হচ্ছে ২৪৭জন। অপরদিকে পেকুয়া উপজেলার মগনামা, উজানটিয়া, পেকুয়া সদর, শীলখালী রাজাখালী ও টৈইটং ইউনিয়ন এবং কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ, আলী আকবর ডেইল, উত্তর ধুরং, দক্ষিন ধুরং, লেমশীখালী ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নসহ মোট ১৩টি ইউনিয়নের মোট ভোটার ১৬৯জন। তিন উপজেলা পরিষদের ভোটার ৯জন। সর্বমোট মিলিয়ে তিন উপজেলার ভোটার সংখ্যা ৪২৫জন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী একজন সৎ ও গ্রহনযোগ্য প্রার্থী হলেও সালাহউদ্দিন মাহমুদের গ্রামের বাড়ি চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নে হওয়ার কারনে আঞ্চলিতকতার ইস্যুতে চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার ভোটের মাঠে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। তিনটি উপজেলার একাধিক ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ঘরের ছেলে। তিনি আমাদের ভোট পাওয়ার দাবিদার সবার আগে। অপরদিকে তিনি একজন পরীক্ষিত জনদরদী নেতা। তার কোন অহংকার নেই। তার কাছে সকল রাজনৈতিক দলের ও মতের মানুষের একই অবস্থান বিদ্যমান। তার কাছে কোন ধরণের ভেদাভেদ নেই। কাজেই অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে আঞ্চলিকতার ইস্যু ও সততার বিরল গুনে তিনি অতুলনীয় প্রার্থী। ভোটারদের পাশাপাশি এই তিন উপজেলার সাধারণ জনগনের মাঝেও সালাহ উদ্দিন মাহমুদের গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে বেশি।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে অনেক ভোটার দাবি করেন, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে থাকার জন্য আওয়ামীলীগ নেতাদের চাপাচাপির কারনে আমরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছিনা। কিন্তু অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে অনেকটা নীরবে তিনটি উপজেলার সিংহভাগ ভোট জমা পড়বে সালাহউদ্দিন মাহমুদের মোটর সাইকেল প্রতীকে। অনেকে মনে করেন, তিনটি উপজেলার আওয়ামীলীগ ঘরনার ইউপি চেয়ারম্যানদের বেশিরভাগ ভোট মোস্তাক আহমদ চৌধুরী পাবে। অপরদিকে নতুন প্রজন্মের ভোটার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও পৌরসভার কাউন্সিলররা ভোট দেবেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদকে। ভোটাররা মনে করেন, অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে কোন ধরণের প্রভাব না থাকলে শান্তিপুর্ণ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
জানা গেছে, চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ একজন বরণ্য রাজনীতিবিদ তেমনি সুবক্তাও বটে। এ কারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর তাকে সরকারিভাবে স্কলারশীপ দিয়ে বুলগেরিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। ওইসময় কারাভোগও করেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও কক্সবাজার মহকুমা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে বুলগেরিয়া সরকারের স্কলারশীপ নিয়ে সুফিয়া সোস্যাল সায়েন্স ও পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন একাডেমী থেকে প্রশাসনের উপর উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৮৫ সালে চকরিয়া উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদের এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে উপমন্ত্রীর পদমর্যাদায় কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রথম জেলা চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
সুত্রে জানা গেছে, সালাহউদ্দিন মাহমুদের আমলে জেলার মধ্যে অভুতপুর্ব উন্নয়ন ও প্রতিষ্টা হয়েছে। তারমধ্যে চকরিয়া উপজেলায় নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, চকরিয়া কলেজকে ডিগ্রি কলেজে উন্নীতকরণ, উপকুলীয় অঞ্চলের জনগনের অবাধ চলাচল নিশ্চিতে বাটাখালী সেতু নির্মাণ, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার জনগনের ভাগ্য উন্নয়নে পেকুয়া কাটাফাড়ি সেতু নির্মাণ, বাগগুজরা সালাহ উদ্দিন ব্রীজসহ বরইতলী মগনামা সড়ক, বদরখালী সড়কের উন্নয়ন, চিংড়ি জমির সঠিক বরাদ্দের মাধ্যমে চাষের উন্নয়ন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের উন্নয়নসহ গ্রামীণ সড়ক, ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণ, বিভিন্ন ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেন। কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে তার আমলে জেলার আট উপজেলার প্রত্যান্ত জনপদে দৃশ্যমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে। যা এখনো সাক্ষী হিসেবে প্রতিয়মান হচ্ছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।