বিশেষ প্রতিবেদক:
পুলিশ প্রশাসনের অপহরণ বাণিজ্য আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চাঁদপুর জেলা পুলিশ লাইনের এসআই আলাউদ্দিন কক্সবাজারের এক নিরীহ ব্যক্তিকে অপহরণ করে এক লক্ষ টাকা আদায় করেছে। আরও সাড়ে চার লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। ২০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় চট্টগ্রামের মইজ্জার টেক থেকে কক্সবাজারের খোরশেদ আলমকে অপহরণ করে এক লক্ষ টাকা আদায় করে। ৭দিন পর চট্টগ্রামের টাইগারপাস এলাকায় তাকে ছেড়ে দেয় বলে জানা যায়। খোরশেদ আলম কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ার ছরার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃত আহমদ হোসেনের পুত্র। কক্সবাজার সোনালী ব্যাংক থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ২৫ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর সোনালী ব্যাংক শাখায় এক লক্ষ টাকা জমা দিলে ২৬ সেপ্টেম্বর তাকে ছেড়ে দেয়। ব্যাংক একাউন্ট সুত্রে জানা যায়, উক্ত একাউন্টের মালিক- এসআই আলাউদ্দিন নম্বর- ১৫০২৪০১০০৯২৭৩, মোবাইল নম্বর- ০১৮২৫০৭৫০৬৮, সোনালী ব্যাংক, চাঁদপুর শাখা।
ঘটনার বিবরণে খোরশেদ আলম জানায়, ২০ সেপ্টেম্বর আনোয়ারা মোহছেন আউলিয়ার মাজার থেকে সিএনজি নিয়ে সে চট্টগ্রামের মইজ্জার টেক নেমে আরেকটি সিএনজি নিয়ে পশ্চিম দিকে অপর একটি মাজারে যাওয়ার সময় সাদা পোষাকে ৩জন লোক এসে তাকে সিএনজি থেকে নামিয়ে জোরপূর্বক একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে ফেলে। পরে ১৫/২০ মিনিট গাড়ী চালিয়ে একটি পাকা দালানের উপর নিয়ে গিয়ে একটি রুমে আটকে রেখে তার কাছ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে, অন্যথায় মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। এ সময় তাকে মারধর করে একটি স্ট্যাম্পে সই নেয় এবং জোরপূর্বক কিছু কথা রেকর্ড করিয়ে নেয়। পরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলতে থাকে, তুই চট্টগ্রাম ডিআইজি অফিসে চাকরি করছ। তুই এসআই আলাউদ্দিনের ছেলেকে চাকরি দিবে বলে এবং আলাউদ্দিনকে ইন্সপেক্টর হিসেবে পদোন্নতি দিবে বলে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলি এ টাকা ফেরৎ দাও, না হয় তোকে জবেহ করে মেরে ফেলব। এ সময় সে তাদেরকে বলে, আমি একজন নিরীহ লোক। বিভিন্ন মাজারে গিয়ে আমি পানিপড়া ও তাবিছ দোয়া দিয়ে থাকি। আমার বাড়ীতে কোন টাকা নাই, এ কথা বলার পর ক্ষেপে গিয়ে আমাকে আরও গালিগালাজ করতে থাকে। পরে বাধ্য হয়ে আমি কক্সবাজারে বউ ও ছেলে মেয়েকে ফোন করে বলি আমাকে অপহরণ করেছে। এ মূহুর্তে এক লাখ টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলবে। এ সময় অপহরণকারীরা উপরোল্লিখিত ওই একাউন্ট নম্বরটি দিলে, অনলাইনের মাধ্যমে ওই নম্বরে টাকা জমা দিতে বলি। ২৫ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাংক কক্সবাজার শাখায় আমার ছেলে-মেয়ে গিয়ে টাকা জমা দিলে দীর্ঘ ৭দিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টায় চট্টগ্রামের টাইগারপাস নামক স্থানে আমাকে একটি মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর থেকে আমাকে বিভিন্ন সময় এসআই আলাউদ্দিনের মোবাইল নম্বর থেকে আরও সাড়ে ৪লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য ফোন করে এবং উক্ত টাকা না দিলে আমাকে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে আসামী করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। সোনালী ব্যাংক একাউন্ট অনুযায়ী উক্ত একাউন্টের মালিক এসআই আলাউদ্দিন।
প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা যায়, আলাউদ্দিন বর্তমানে চাঁদপুর পুলিশ লাইনে চাকুরীরত আছেন। খোরশেদ জানায়, অপহরণকারীদের গায়ে কোন সরকারি পোষাক ছিল না এবং তারা আমাকে অপহরণ করছে চট্টগ্রামে, মুক্তিপণ হিসেবে টাকা জমা নিয়েছে চাঁদপুর ব্যাংকে, এতেই বুঝা যায় অপহরণকারীরা এসআই আলাউদ্দিনের সিন্ডিকেটের সদস্য। খোরশেদ আলম এ প্রতিবেদককে জানায়, মুক্তিপণ বাবদ দেওয়া ১ লক্ষ টাকা আমি ফেরৎ চাই এবং উক্ত এসআই আলাউদ্দিনের দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবি করছি।
শনিবার বিকালে অভিযুক্ত আলা উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার পরিচয় দিতে অনীহা প্রকাশ করে বলেন, কি বলবেন বলেন, খোরশেদ আলমের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নিলেন কেন, জানতে চাইলে তিনি উত্তজিত হয়ে পড়েন এবং সাংবাদিক দিয়ে নতুন তালবাহনা শুরু করেছে বলে লাইন কেটে দেন।
তার ৪ টি নাম্বারে পুনরায় যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।