সৌদি আরবে অবৈধভাবে বসবাস করা অন্য দেশের নাগরিক ও শ্রমিকদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে দেশটির সরকার। এই তিন মাসের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীরা বিনা সাজা ও বিনা জরিমানায় নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে। তবে আইনকানুন মেনে বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা থাকতে চাইবে, তাদের বিষয়ে বিশেষ বিবেচনা করবে সৌদি সরকার।
বাংলাদেশের সরকারি সূত্রের তথ্য মতে, সৌদি আরবে ২৫ লাখের মতো বাংলাদেশি বসবাস করছে। এর মধ্যে দুই-আড়াই লাখ অবৈধভাবে অবস্থান করছে, যারা হজ বা ওমরাহ হজ বা ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে আর দেশ ফিরে আসেনি।
সৌদি গেজেটের খবরে বলা হয়েছে, গত রবিবার ‘নেশন ফ্রি অব ভায়োলেটরস’ অর্থাৎ ‘জাতি হবে অপরাধমুক্ত’ এই কর্মসূচির উদ্বোধন করে তিন মাসের এই সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেন সৌদি আরবের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ মুহাম্মদ বিন নায়িফ।
সৌদি উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, বসবাসের অনুমতি (ইকামা) ছাড়াই সৌদিতে অবস্থান, অনুমতি ছাড়াই কাজ করা এবং অনুপ্রবেশের মতো অপরাধে জড়িতরা কোনো রকম বিচারের মুখোমুখি হওয়া ছাড়াই তিন মাসের মধ্যে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে। এমনকি ভবিষ্যতে কাজ নিয়ে আবারও বৈধভাবে সৌদি আরবে আসার সুযোগ থাকবে তাদের। আগামী ২৯ মার্চ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। যুবরাজ বলেন, ‘যারা সৌদি আরবের আইনকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বৈধভাবে থাকতে চাইবে, তাদের পাশে দাঁড়াবে সৌদি সরকার। ’
এমনিতে সৌদি আরবের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো অবৈধ অভিবাসী ধরা পড়লে তাকে জরিমানা বা শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। দেশে ফেরত পাঠানোর আগে তার আঙুলের ছাপ রেখে দেওয়া হয়, যাতে ওই ব্যক্তি ভবিষ্যতে আর সৌদি আরবে কাজের জন্য আসতে না পারে।
কিন্তু তিন মাসের এই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ যারা নেবে, তাদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল মনসুর আল-তুর্কি। তিনি বলেন, সরকারের ১৯টি এজেন্সি একযোগে এ অভিযান পরিচালনা করবে। যেসব অবৈধ অভিবাসীর কাগজপত্র নেই, অর্থাৎ যেসব বিদেশি হজ বা ওমরাহ করতে এসে থেকে গেছে, তাদের শিগগিরই নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনকারী বিদেশিদের কাজে নিয়োগ না দেওয়ার জন্যও সৌদি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র। সেই সঙ্গে আইন লঙ্ঘনকারী কারো বিষয়ে তথ্য জানা থাকলে তা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানাতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মনসুর আল-তুর্কি। তিনি বলেন, ‘যারা এই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নেবে না, তাদের জরিমানা ও সাজার মুখোমুখি হতে হবে। এরই মধ্যে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন বিভাগ কাজ শুরু করেছে। ’
আরব নিউজ জানিয়েছে, এর আগে ২০১৩ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে ইকামা পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছিল সৌদি সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের ‘নেশন ফ্রি অব ভায়োলেটরস’ কর্মসূচি। আগেরবার প্রায় ২৫ লাখ অবৈধ অভিবাসী ও অবৈধ শ্রমিক সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছিল, যাদের মধ্যে সাত লাখের বেশি বাংলাদেশি ছিল।
বাংলাদেশের সরকারি সূত্র সৌদি আরবে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি থাকার তথ্য জানালেও সৌদি গেজেট বলছে, বর্তমানে ১৩ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন, যার মধ্যে ৬০ হাজার নারী কাজ করছেন গৃহকর্মী হিসেবে। এ হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।