‘সুন্দরবনের জলদস্যুদের মতো আনুষ্টানিক ভাবে অবৈধ অস্ত্র জমা দেন, না হলে এলাকা ছাড়ার হুকার দিয়েছেন অপরাধীদের জম ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এলাকায় শান্তিতে থাকতে ইচ্ছে থাকলে অস্ত্র জমা দেন। না হলে শান্তিতে থাকতে পারবেন না, দেখবেন না ছেলে মেয়ের মুখ। কক্সবাজারের উখিয়ার মতো ডাকাত কবলিত এলাকায় এখন শান্তির সু বাতাস বইতেছে। সকলের সহযোগিতায় মহেশখালিকেও অপরাধ মুক্ত করা হবে। মহেশখালির জনগন শান্তিতে থাকলে পুলিশের শান্তি। শুধু অস্ত্র নয়,বন্ধ করুন মাদক, চোরাচালানসহ সব অপরাধ। নতুন, পুরাতন তালিকা ধরে ঘরে ঘরে অভিযান চালানো হবে। রেহায় পাবে না কোন অপরাধী।
এক সময়ের কক্সবাজার জেলার আলোচিত ক্রাইমজোন সাগর ঘেরা মহেশখালীতে শান্তির সু বাতাস শুরু হয়েছে। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ যোগাদানের ১৫ দিনের মাথায় বিপুল পরিমান অস্ত্র, মাদক,সন্ত্রাসী গ্রেফতারে ভুমিকায় রাখায় এলাকার সাধারন লোকজনের মাঝে স্বস্থি দেখা দিয়েছে। ওসি প্রদীপ জানিয়েছেন, এলাকার লোকজন শান্তিতে থাকলে, আমার শান্তি। এই শান্তি অব্যাহত রাখতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। দেশের মধ্যে অশান্তিপূর্ণ উপজেলার মধ্যে পুলিশে লিপিবদ্ধ একটি নাম মহেশখালি । রাজনৈতিক হিংসা থেকে শুরু করে সহিংস কর্মকান্ড সহ খুন খারাবি প্রায় ঘটেছে এই উপজেলায়। তবে কয়েকটি মাস আগেও খুন, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর, চুরি, ছিনতাই-এর মতো ঘটনা অনেকাংশে বেড়ে যাওয়ার ফলে মহেশখালি উপজেলা বাসী বেশ আতংকর মধ্যে দিয়ে দিন পার করেছিলো বলে জানা যায়।
জনপ্রতিনিধি হত্যা, ব্যবসায়ী হত্যা ও শিশু হত্যা এবং শিশু অপহরণ,চিংড়িঘের দখল,জমি দখল,ডাকাতি, জলদস্যু, ইয়াবা ও মাদক পাচার, মটর সাইকেল চুরির মতো বড় অপরাধের কারণে অশান্তিপূর্ণ উপজেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়। ক্রমানয়ে উপজেলার সুনাম বিলিন হতে চলেছিলো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হওয়ার কারণে থানা পুলিশ দিশেহারা হয়ে পড়েছিলো।
মাদক ব্যবসা ও মাদকসেবীদের আনাগোনা ও জুয়ার প্রকোপ বাড়ার কারণে এমন বড় বড় অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে নানা বার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এক সময়ের শান্ত জনপদ অশান্ত হয়ে উঠেছিলো। চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং-এর মতো ঘটনা অহরহ ঘটছিলো। যার কারনে দ্বীপ বাসীকে আতংকিত করে তুলেছিলো। এসব অপরাধীদের থেকে রেহায় পায়নি পরশ কারবারীর মতো মুক্তিযোদ্ধা ও তাজুলের মতো সাহসী পুলিশের কর্মকর্তাও।
মাদকের ছোবলে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যে মাদকের স্পট গড়ে উঠেছিলো। অপরদিকে জুয়া খেলার প্রবণতা বাড়ার কারণে চুরি, ছিনতাই ও ইভটিজিং-এর মতো ঘটনা বাড়তে থাকে। মহেশখালিতে সর্বত্র ভ্রাম্যমান মাদক বিক্রেতার দাপট বেড়ে যায়।
তবে বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মহেশখালি থানায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ যোগদানের পর থেকেই দৃশ্যপট কিছুটা পাল্টাতে থাকে। ওসি মাদক ও মদ জুয়াকে এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী ও জুয়া খেলার অপরাধের আস্তানা গুড়িয়ে আটক করে যাচ্ছেন । থানা পুলিশের সক্রিয়তা বাড়ার কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী ও জুয়াড়িরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। গত দুই মাসের পরিসংখ্যান বলছে মহেশখালি থানায় এর আগে এতো পরিমাণ মদ, অস্ত্র ব্যবসায়ী, জুয়াড়ি ও মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদক সেবী পুলিশের হাতে এতো আটক হয়নি।
ওসি প্রদীপের একের পর এক অভিযানে গত ১৫ দিনে সন্ত্রাসী, অস্ত্র ব্যবসায়ী, মাদক সেবী, ইয়াবা ব্যবসায়ী, জুয়াড়ি, ইভটিজার থেকে শুরু করে প্রায় নানাবিধ অপরাধীকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। উপজেলার হাজার হাজার তরুন সমাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তবে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখারও আহবান জানান তারা।
এদিকে নবাগত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বলেছেন এবং উপজেলার কোথাও তিনি মাদক ব্যবসা বা জুয়া চলতে দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এলাকাবাসীকে সোচ্চার হতে বলেছেন এবং পুলিশকে অপরাধ বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়াও তিনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে তদবির করতে বারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভালো কাজের জন্য ফোন করবেন।’
থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ই ফেব্রুয়ারি হোয়ানকের পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ৫টি দেশি বন্দুক,২০রাউন্ড গুলি ও ২জন সন্ত্রাসীকে আটক করে। ১০ই ফেব্রুয়ারি পুটিবিলা থেকে ইয়াবা সহ আটক করে ১জন,১২ই ফেব্রুযারীতে ফকিরাকাটার শফিউল আলম নামে এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করে উদ্ধার করে ৩টি অস্ত্র ২৫ রাউন্ড গুলি, একই দিনে পৌরসভার এক বাড়ি থেকে ১০হাজার লিটার ও নারী কর্মী সহ ২জনকে আটক করে। একই সময়ে ছোট মহেশখালীতেও মদের কারখানা গুড়িয়ে দেয় পুলিশ,১৩ই ফেব্রুয়ারিতে পৌর সদরের দক্ষিণ হিন্দুপাড়া মাটির নিচে পুতিয়ে রাখা চোলাই মদ উদ্ধার করে।
এছাড়া গত ১৩ই ফেব্রয়ারিতে মাতারবাড়ি ও হোয়ানকে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের পৃথক দু’টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ১ সন্ত্রাসী নিহত ও ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে হতাহতের সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। মোট ১১ টি বন্দুক ও ৫৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। মাতারবাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়েছে আরো ৩ জন। সূত্র জানায় সাত্তার নামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত ৪ নম্বর ক্রমিকের এক সন্ত্রাসী ও নিহত হয়েছে।
সুত্রে জানা যায়, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে মহেশখালী থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগদান করেন প্রদীপ কুমার দাশ। তবে মহেশখালী থানায় যোগ দেয়ার আগে তিনি উখিয়া থানা, কক্সবাজার সদর থানা, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা, পাঁচলাইশ থানা ও বায়েজিদ বোস্তামি থানায় একই দায়িত্ব পালন করেন। বোয়ালখালীর এই সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা ১৯৯৬ সালে চাকুরীতে যোগদান করেন। চাকুরী জীবনে দুইবার পুলিশ বিভাগের সর্বোচ্চ সম্মাননা পুরস্কার পিপিএম পেয়েছেন। পেয়েছেন জাতীয় শান্তি রক্ষা পদকও।
মহেশখালি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজার সময় ডটকমকে জানিয়েছেন, মাদক ও অস্ত্র মুক্ত করা হবে মহেশখালি উপজেলা।
এদিকে দীর্ঘদিন সন্ত্রাসীদের ভয়ে নিজ জন্মভুমি ছেড়ে কক্সবাজার, চট্রগ্রাম থাকতেন এমন লোকজনের মাঝে অনেকটা স্বস্থি দেখা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে অনেকই এলাকায় ফিরেছেন।
কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা হোটেল সাগরগাঁওতে কর্মরত টগবগে যুবক নোমান দাবি করেন, দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করে সামন্য বেতনে হোটেলে চাকরি করি। তেমন এলাকায় যেমন না, ভয়ে, আগে ঈদে- কোরবানে গেলে ও নতুন ওসি আসার পর কয়েকবার এলাকায় গেলাম।
বর্তমান পরিস্থিতি কেমন জানতে চাইলে নোমান আর দাবি করেন, এলাকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে শান্ত। নতুন ওসি বেশি গরম চালাচ্ছেন।
অপরদিকে আরেকটি সূত্র দাবি করেছেন, পূর্বে কোন ঘটনা সংঘঠিত হলে প্রতিপক্ষকে ফাসাতে ভোটার তালিকা নিয়ে আসামি করা হতো। এতে সাধারন লোকজন হয়রানীর শিকার হত। বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য ওসির প্রতি অনেকেই আহবান জানিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে ওসি প্রদী কুমার দাশ দাবি করেন, জীবনে অনেক ভালো থানায় চাকরি করেছি। তাঁর আমলে কোন নিরহ লোক আসামি হবে না বলে এক প্রতিক্রিয়ায় জানান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।