বিশেষ প্রতিবেদকঃ বন-জঙ্গল ভরা পাহাড় বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য। কিন্তু আজ আর সেই পুরোনো নিয়মটি নেই। গভীর বনেও মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলে গাছ ও পাহাড় কেটে আবাস গেড়েছে মানুষের দল। নিজেদের আবাস হারিয়ে পালিয়ে বেড়ায় বন্যপ্রাণী। অন্য প্রাণীর সাথে হাতিও তার আবাসস্থল আর খাবারের উৎস কলাবাগান হারিয়েছে। নিজের অস্থিত্ব রক্ষায় মানুষের সঙ্গে লড়াই করে হাতিরপাল। করে বাঁচার আকুতি। এরপরও সে লড়াইয়ে জিততে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে মানুষের দল। পরাজিত হয়ে নিজের আবাসের কাছে লুটিয়ে পড়ে বিশালাকায় হাতির পাল। এভাবে ধীরে ধীরে বিপন্ন হয়ে পড়ে বনাঞ্চল আর ধূসর ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয় সবুজ বন।
চারটি পোষা হাতিসহ নাট্যশিল্পীদের অংশগ্রহণে এমন একটি গল্পে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে প্রথম এলিফ্যান্ট শো।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) পর্যটন রাজধানীর মেরনি ড্রাইভ সড়কের প্যাঁচাদ্বীপ মারমেইড ইকো রিসোর্টের পোর্ট থিয়েটার প্রাঙ্গণে ছয় মাস ব্যাপী এ শো’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার।
কবির বিন আনোয়ার বলেন, বন্যপ্রাণীর আবাস রক্ষায় বাংলাদেশে এটি একটি অন্যরকম প্রয়াস। এ শো’র মাধ্যমে বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন খেকুসহ সর্বস্তরের মানুষ সচেতন হবে। প্রচার পেলে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা শোটি দেখতে কক্সবাজার মুখী হবেন। কক্সবাজারের ইতিহাস-ঐতিহ্য আর প্রকৃতি-পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান নিয়মিত করলে পর্যটনশিল্প প্রসার লাভ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, পর্যটনশিল্প সমৃদ্ধ করতে নানামুখী বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের বিকল্প নেই। বেসরকারি উদ্যোক্তরা এগিয়ে এলে এ শিল্পে প্রাণ সঞ্চার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক।
এলিফ্যান্ট শোর আয়োজক মারমেইডের পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ বলেন, ক্রমান্বয়ে বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। ছোট হয়ে আসছে বন্যপ্রাণীদের ঠিকানা। আবাসস্থল দখল হয়ে মারা পড়ছে হাতি। বন, জীববৈচিত্র্য, আর প্রকৃতি পরিবেশ বিনষ্টের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পে। বন্যহাতিসহ প্রাণীকুল ও পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে পর্যটনশিল্প সমৃদ্ধ করতে এলিফ্যান্ট শো’র আয়োজন করা হয়েছে। এই শো সপ্তাহে তিন দিন করে ৬ মাস মঞ্চস্থ হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এলিফ্যান্ট শো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মো. আলী কবীর ও নাট্য পরিচালক বিশিষ্ট মূকাভিনয় শিল্পী দেবাংশু হোর।
হাতির সাথে মানুষের এত দ্বন্দের কারণ তুলে ধরা হলো ১৫ মিনিটের এই প্রদর্শনীতে। হাতির যে বাঁচার আকুতি তা প্রদর্শণীটি না দেখলে বলা মুশকিল-মানুষ আসলে নিষ্ঠুর। আসুন হাতির জন্য সবুজ পরিবেশ গড়ে তুলি। হাতিকে সুন্দর ভাবে বাঁচতে দিই। কক্সবাজারের পর্যটনকে আরেক ধাপ এগিয়ে নেয়ার জন্য এ প্রদর্শনী আয়োজক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান স্থানীয় পরিবেশবিদরা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।