ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নে প্রায় ৬৪ কোটি টাকার ব্যয়ে নৌ-বাহিনীর তত্বাবধানে ঠেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য চলছে বøক নির্মাণের কাজ। তবে এখনো বেঁড়িবাধের কাজ শুরু হয়নি। সরকারের মেগা প্রকল্প কয়লা বিদ্যুৎ, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও গভীর সমুদ্র বন্দর এর নামে সরকার কোটি কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিলেও ধলঘাট বাসীর প্রাণের দাবী টেকসই বেড়ীবাঁধের। ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে দৃশ্যমান রাস্তাঘাট, কালভার্টও সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎতের খুঁটি দেখা গিয়েছে। তবে পানিতে ধলঘাট ডুবে গেলে তার সব কিছু মুছে যাবে ধলঘাটার মানচিত্র থেকে। পুরো বেড়িঁবাধ নিমার্ণের আগে আপাতত হলেও জোয়ারের পানি রক্ষার্থে ভারতঘোনা এলাকার অধিকাংশ বেড়িঁবাধ বিলীন হয়ে যাওয়ায় ভাঙ্গা অংশ মেরামত করা ধলঘাট বাসীর প্রাণের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ধলঘাটা দ্বীপবাসীর কথা চিন্তা করে বেড়িঁবাধের জন্য বøক নিমার্ণ কাজের খবর নিচ্ছেন ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান। স্থানিয় বেঁড়িবাধের পাশে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাসরত নাছির সওদাগর। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বেঁড়িবাধের পাশে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতে গিয়ে পরিবারসহ পানিতে ডুবেছে আমার কুড়ে ঘরটি। কখনো পানিতে ভিজেছি আবার কখনো রুদ্র্রে। তিনি আরোও বলেন, বিগত দিনে অনেক জনপ্রতিনিধি দেখেছি কিন্তু কোউ বেঁড়িবাধের কাজের ও আমাদের খবর রাখেনি। বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুল ভাই আমাদের খবর ও টেকসই বেঁড়িবাধ নিমার্ণের জন্য প্রাণ প্রণ চেষ্টায় চালিয়ে আমাদের খবর রাখায় এতে আমরা খুশি। বেড়িঁবাধের পাশে বসবাসরত রহিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, অতীতে অনেক ঠিকাদার বেড়িবাঁধ নির্মাণে অত্যন্ত নি¤œ মানের কাজ করায় বেঁড়িবাধ ভেঙে সাগরে গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবার আশা রাখি বøক উন্নত মানের হওয়ায় এবং বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর তত্বাবধানে বেড়িঁবাধ নিমার্ণের কাজ হতে যাওয়া আমরা টেকসই বেড়িঁবাধ পাব। আমাদের অনেক দিনের প্রাণের দাবী পূরর্ণ হবে।
জানা গেছে, বিশেষ করে বেড়িবাঁধের ভাঙা ভারত ঘোনার সামান্য যে অংশ রয়েছে সেটি যে কোন মুহুর্তে জোয়ারের ধাক্কায় ধসে যাওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে ধলঘাটার বাসিন্দাদের। তেমনটা হলে পুরো ইউনিয়ন সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেজ্ঞরা। বলতে গেলে নিয়তির সাথে যুদ্ধে চলছে ধলঘাট মানুষের। সিঙ্গাপুরের স্বপ্ন দেখা এই মানুষ গুলো এখন ঘুমের ঘোরে লাফিয়ে উঠে জোয়ারের পানিতে বসত বাড়ি ডুবে যাওয়ার আতঙ্কে।
সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে সাগর ও নদী ঘেরা উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নটি একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। পরবর্তিতে সৌদি অর্থায়ন ও বেসরকারী সাহায্যকারী সংস্থার উদ্যোগে কয়েকবার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও বøক বসানো হয়েছে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের প্রবল জোয়ারের পানির ধাক্কায় ধলঘাটার পশ্চিমের এবং দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। গেল বছর সুনামির পানির ধাক্কা এসে ধলঘাটা বেড়িবাঁধের উপর পড়লে নির্মাণ করা বেড়িবাঁধ নিমিষে বিলীন হয়ে যায়। যার ফলে পুরো ধলঘাটা এক বছর ধরে জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত ছিল।
জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অর্থায়ানে বেড়িঁবাধের দ্রæত কাজ করতেছে নৌ-বাহিনীর তত্বাবধানে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সরকার বিভিন্ন সময় বেড়িবাঁধ নির্মানে বরাদ্ধ দিলেও তদারকীর অভাবে বরাদ্ধকৃত টাকা লুটপাট করে নামে মাত্র বেড়িবাঁধ নির্মিত হওয়ায় একদিকে ঝুঁকিতে ধলঘাটাবাসি, অন্যদিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণের নামে অপচয় হয়েছে কোটি কোটি টাকা। অপরদিকে ধলঘাটা দ্বীপের পশ্চিমাংশে বেড়িবাঁেধর সরইতলী থেকে ভারত ঘোনা পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সম্পূর্ন অরক্ষিত থাকায় বর্ষা মৌসুমে জোয়ারে জনবসতি ও চিংড়িঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সম্ভানা রয়েছে বলে স্থানিয়রা জানিয়েছেন। আর এলাকার সাধারন মানুষের অন্যতম জীবিকার উৎস লবন শিল্প বেড়িঁবাধ না হওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিতে। ধলঘাট বাসি বলছেন, আপাতত দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ধলঘাটবাসীর কথা চিন্তা করে ভারত ঘোনার ভাঙ্গাটি মাটি দিয়ে নিমার্ণ করলে ধলঘাটাবাসী আগামী বর্ষা মৌসুমে পানির কবল থেকে কিছুটা হলে রক্ষা পাবে। অনেকের প্রশ্ন এভাবে আর কতদিন। সংবাদ কর্মীরা গেলে আক্ষেপের সাথে কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে থাকেন-আর কত ছবি উঠাবেন? আশাহীন মানুষগুলো বলতে থাকেন অসহায়ত্বের কথা। কিন্তু কে শুনে কার কথা,এদের শান্তনা দেবে কে? একের পর এক সরকার পরিবর্তন হলেও ধলঘাটার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি কোন কালে। তবে মানুষ এবার স্বপ্ন দেখছেন ভিন্নভাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধলঘাটবাসির প্রাণের দাবী পূরর্ণ করবেন। অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়নের হামিদ খালী থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার খোলা বাঁধের উপর জিও টেষ্টল ধারা টেন্ডার হয়ে ঠিকাদার কাজ শুরু করার কথা থাকলে এখনো পর্যন্ত দেখা মিলেনি।
ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, যে কোনো মুহূর্তে ভারত ঘোনা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা সাগরে তলিয়ে যাবে। কিন্তু ভাঙা বাঁধ সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। ফলে আতঙ্কে কাটাচ্ছে এই এলাকার হাজার হাজার মানুষ। তিনি আরোও বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে জন্য বøকের কাজের মান ভাল হচ্ছে। আমি চাই টেকসই বেড়িবাঁধ।
বেড়িবাঁধ নিমার্ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সাজেদ হোসেন বলেন, আমরা সিডিউল মোতাবেক কাজ করতেছি। এবং পুরো বেড়িঁবাধ নিমার্ণের আগে ভারত ঘোনা এলাকার বাঁধটি নিমার্ণ করব অতি শিঘ্রই।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।