আজ শনিবার চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর। বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যে এক মাস সিয়াম সাধনার পর উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আজ বিকেল থেকেই শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য অগণিত মুসলিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। চাঁদ দেখা না গেলে সোমবার ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের দিন আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে সবাই শামিল হবেন ঈদগাহবিহীন মসজিদে।
ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে আজ শনিবার জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক বৈঠক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। চাঁদ দেখা গেলে কালই ঈদুল ফিতর, অন্যথায় পরশু মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল ফিতরের আনন্দে মেতে উঠবে সন্দেহ নেই। এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এবার খোলা মাঠে বা ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ হবে না। ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এই প্রথম দেশে বড় আকারের ঈদের জামাতও হবে না। সংক্রমণ ঠেকাতে সীমিত পরিসরে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা সাপেক্ষে ছুটি বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ঈদুল ফিতরের নামাজের ক্ষেত্রেও বর্তমানে বিদ্যমান বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে। উন্মুক্ত স্থানে বড় জমায়েত পরিহার করতে হবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জানিয়েছে ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় ঈদের জামাত হবে না। শুধু মসজিদে হবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ অর্থাৎ ঈদের জামাতের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকবে।
অপরদিকে ঈদের দিন মসজিদ কিংবা ঈদগাহে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করে থাকেন মুসলমানরা। বিগত বছরগুলোতে ঈদের নামাজ কাতারবন্দি হয়ে আদায় করতেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নামাজের শেষ হওয়ার পর পরই এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে জড়িয়ে ঈদের কোলাকুলি ও করমর্দন (হ্যান্ডশেক) করতেন। এবার করোনার কারণে দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ পড়তে হবে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের। একই সঙ্গে করা যাবে না হ্যান্ডশেক। পাশাপাশি বহু লোকের সমাগম যেন না ঘটে সে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে ঈদের দিন আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে সবাই ঈদগাহ ময়দানে শামিল হওয়ার কথা থাকলেও এবারই বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সে সুযোগ থাকছে না। এবারেই ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিদের মানতে হবে বিভিন্ন নিয়ম-কানুন। মসজিদে নামাজ আদায়ের বিষয়ে সরকারের দেয়া ১২টি শর্তের মধ্যে প্রথমটি হলো মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না।
ঈদের নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান-পানিসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং আগত মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে সুন্নত নামাজ আদায় করে মসজিদে আসতে হবে। অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। কাতারে নামাজে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব অর্থাৎ তিন ফুট পর পর দাঁড়াতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে। শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যে কোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি জামাতে অংশ নিতে পারবেন না। সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদের অজুখানায় সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যদিকে যারা এক মাস রোজা রেখে অভুক্ত থাকার কষ্টকে অনুভব করেছেন, নামাজ, তারাবিহ, ইবাদত-বন্দেগি ও ইসলামের অনুশাসন পালন করেছেন, তাদের জন্য এই ঈদ আনন্দ বেশি উপভোগের, উচ্ছ¡াসের ও শান্তির। তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের এক মহাপুরষ্কার হচ্ছে ঈদ। এবার ঈদে যাওয়া হবে না একে অন্যের বাড়িতে। সমাগম হবে না ঈদের দিন। আত্মীয়স্বজনরা আসবে না নিকটাত্মীয়কে দেখতে। খাওয়া হবে না সেমাই বা মিষ্টি, ফাইলসহ অন্যান্য জিনিস। শুধু নিজ বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ ভাগাভাগি হবে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। এদিকে দেশে এখনো করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি নেই, বরং দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। অপরদিকে পবিত্র কোরআনের বর্ণনা মতে, এক মাস রোজা রাখার পর মুসলমানরা যখন নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি তথা পছন্দের পোশাক পরে, দেহে আতর-খুশবু মেখে ঈদগাহে যান, তখন ফেরেশতারা তাদের সংবর্ধনা জানান। স্বর্গীয় সব বাণীতে তাদের অভিনন্দিত করা হয়।
ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসব তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধনী-দরিদ্র ছোট-বড়, শাসক-শাসিত ও আবালবৃদ্ধবণিতা সবার জন্য ঈদের আনন্দ যেন সমান ও ব্যাপক হয়, ইসলামে সেই ব্যবস্থা রয়েছে। পবিত্র রমজানে বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এবং দান-খয়রাত করলে, জাকাত ও ফিতরা প্রদান করলে দরিদ্ররা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারবে বেশি। তাদের মুখেও হাসি ফুটবে এবং ঈদের ভোর আসবে তাদের জন্য আনন্দবার্তা নিয়ে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঈদের খুতবায় দান-খয়রাতকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করতেন। এর আগে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘদিন জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেননি তারা। সরকার অনুমতি দেয়ার পর স¤প্রতি তারাবিহসহ ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতে আদায় করেন মুসল্লিরা। তাতে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমা এবং রমজান মাসের তারাবির জামাত সীমিত আকারে আদায়ের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করার কথা থাকলেও এবার তা হচ্ছে না করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে। আর ঈদের নামাজে দোয়া ও মোনাজাত করবেন বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম জাহানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনায়।
এছাড়া ঈদের নামাজে দোয়া করা হবে মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে দেশসহ বিশ্বের ঘূণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যারা এক মাস রোজা রেখে অভুক্ত থাকার কষ্টকে অনুভব করেছেন, নামাজ, তারাবিহ, ইবাদত-বন্দেগি ও ইসলামের অনুশাসন পালন করেছেন, তাদের জন্য এই ঈদ আনন্দ বেশি উপভোগের, উচ্ছ্বাসের ও শান্তির। তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের এক মহাপুরষ্কার হচ্ছে ঈদ। পবিত্র কোরআনের বর্ণনামতে, এক মাস রোজা রাখার পর মুসলমানরা যখন নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি তথা পছন্দের পোশাক পরে, দেহে আতর-খুশবু মেখে ঈদগাহে যান, তখন ফেরেশতারা তাদের সংবর্ধনা জানান। স্বর্গীয় সব বাণীতে তাদের অভিনন্দিত করা হয়। ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসব তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, শাসক-শাসিত ও আবালবৃদ্ধবণিতা সবার জন্য ঈদের আনন্দ যেন সমান ও ব্যাপক হয়, ইসলামে সেই ব্যবস্থা রয়েছে।
পবিত্র রমজানে বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এবং দান-খয়রাত করলে, জাকাত ও ফিতরা প্রদান করলে দরিদ্ররা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারবে বেশি। তাদের মুখেও হাসি ফুটবে এবং ঈদের ভোর আসবে তাদের জন্য আনন্দ বার্তা নিয়ে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঈদের খুতবায় দান-খয়রাতকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করতেন। এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এর মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি পড়ে যায়। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা পৃথক বাণীতে দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বাণীতে তারা বিশ্ব মুসলিমের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন। আজ চাঁদ দেখা গেলেই ঘরে ঘরে উপাদেয় খাদ্যসামগ্রী তৈরির তোড়জোড় শুরু হবে। সেমাই খাওয়ার ঈদ বলে প্রচলিত এই ঈদে সেমাইয়ের সঙ্গে থাকবে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, কোরমা, পোলাওসহ সুস্বাদু সব খাবারের সম্ভার। রোগীদের জন্য হাসপাতাল এবং এতিমখানা ও বন্দিদের জন্য জেলখানায় থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। সরকারি শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র এবং দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে থাকবে উন্নতমানের খাবার ও বিনোদনের ব্যবস্থা। এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগারেও পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার। লকডাউনের মধ্যেও ঈদের আনন্দ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরাও নিজ নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদআনন্দ ভাগাভাগি করবেন। ঈদ মানুষকে কাছে টানে। দৃঢ় করে সামাজিক ও সম্প্রীতির বন্ধন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।