আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলিম উম্মার দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ঈদ উৎসব। এই দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু জবাই করে কোরবানি দিবেন সামর্থ্যবান মানুষেরা। এজন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সকাল ৮টায় জেলার প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে। প্রায় ২০ হাজার মানুষের ঈদের নামাজ আদায়ের সুবিধা রয়েছে এই জামায়াতের ময়দানে। এছাড়া শহরের বদর মোকাম জামে মসজিদে ঈদের জামাত হবে শুরু হবে সকাল সাড়ে আটটায় এবং বায়তুশ শরফ জামে মসজিদে শুরু হবে সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে।
এছাড়া নামাজ শেষে কোরবানির পশু জবাই করার জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এবং পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের ৩৪টি স্থানসহ জেলার অন্যান্য এলাকায় নির্দ্দিষ্টস্থানে পশু জবাই এর ব্যবস্থা, কোরবানির পশু বর্জ্য সঠিকভাবে সংরক্ষন এবং জীবানু নাশক ঔষধ ছিটানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানিয়েছেন, আজ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রতি বছরের ন্যায় ঈদগাঁহ কেন্দ্রীয় মাঠে সুপরিসরে প্যান্ডেল তৈরী করে অন্তত ২০ হাজার মানুষ এক সাথে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিবছরের ন্যায় ঈদগাঁহ মাঠে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোষাকেও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
হিজরি সাল অনুযায়ী, জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা পালিত হয়। আজ হিজরি ১৪৪০ সালের জিলহজ মাসের ১০ তারিখ। ঈদুল আজহা আমাদের দেশের মানুষের কাছে ‘কোরবানির ঈদ’ বা বকরা ঈদ নামেও পরিচিত। কোরবানির পশু কেনা, তার যতœ-পরিচর্যাতেই ঈদের মূল প্রস্তুতি ও আনন্দ।
হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর অনুসরণ করেই সারা বিশ্বের মুসলমানরা ১০ জিলহজ কোরবানি দিয়ে থাকেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নে তার প্রিয় বস্তু কোরবানিতে আল্লাহর নির্দেশ পেয়েছিলেন। পরপর দুবার তিনি পশু কোরবানি করেন। তৃতীয়বার একই নির্দেশ পেয়ে তিনি অনুধাবন করেন পুত্র ইসমাইলের চেয়ে প্রিয় তার কিছু নেই। আল্লাহ তাকেই কোরবানি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর নির্দেশ জানালেন। শিশু ইসমাইল (আ.) নির্ভয় চিত্তে সম্মতি দিয়ে বাবাকে আল্লাহতায়ালার নির্দেশ পালন করতে বলেন। কোরবানি করতে উদ্যত হজরত ইবরাহিম (আ.) পুত্র¯েœহে যেন হৃদয় দুর্বল না হয়ে পড়ে, সে জন্য চোখ বেঁধে নিয়ে পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আল্লাহতায়ালার অপার কুদরতে এ সময় হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। এর পর থেকে ইবরাহিম (আ.)-এর উম্মতরা কোরবানি করে আসছেন।
কোরবানি দেওয়া আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ওয়াজিব। যাদের ওপর যাকাত ফরজ, তাদের ওপর কোরবানিও ওয়াজিব। ১০ জিলহজ পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলেও পরের দুই দিন, অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও কোরবানি দেওয়া যায়। সাধারণত উট, দুম্বা, গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া কোরবানি করা হয়।
এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বাণীতে রাষ্ট্রপতি কোরবানির মর্ম অনুধাবন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করতে সবাইকে সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অপর এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজের মাধ্যমে বৈষম্যহীন, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, শান্তি, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় ঈদুল আজহা। তাই আসুন, আমরা সবাই পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
এ ছাড়া দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।