আজ সেন্ট ভ্যালেনটাইন’স ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। পাশ্চাত্যে এই দিনটিতে প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পরকে উপহার প্রদানের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুসরণে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মালোয়েশিয়াসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দিনটি ভালোবাসা প্রকাশের দিন হিসেবে পালন করা হয়। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন উৎসব ও রীতি-রেওয়াজের মধ্য দিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকারা দিনটি পালন করেন।
ভ্যালেনটাইন’স ডের ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন প-িতের ভিন্ন ভিন্ন অভিমত। তবে অধিকাংশ প-িতের মতে, রোমের সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে এই দিবসের নামকরণ হয়েছে। প্রচলিত মত অনুসারে, ২৬৯ সালে রোমে ভ্যালেনটাইন নামে একজন সাধু ছিলেন। সেটি ছিল রোমান সম্রাট ক্রাডিয়াসের শাসনকাল। তখন খ্রিস্টধর্মের প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। রোম সম্রাট তার সৈন্যদের বিয়ে করতে নিষেধ করেন। কারণ তা হলে তারা মন দিয়ে যুদ্ধ করতে পারবে না। সম্রাটের এই অমানবিক আদেশকে মেনে নেননি সাধু ভ্যালেনটাইন। তিনি গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিয়েতে পৌরহিত্য করতেন; মতান্তরে তাদের খ্রিস্টধর্মেও দীক্ষিত করতেন। সম্রাট ভ্যালেনটাইনকে কারাবন্দি করেন। বন্দি ভ্যালেনটাইন কারাপ্রধানের দৃষ্টিহীন কন্যা জুলিয়াকে আরোগ্য করেন। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায় জুলিয়া। এদিকে ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুদ-াদেশ কার্যকর হয়। মৃত্যুর আগে সেন্ট ভ্যালেনটাইন জুলিয়ার উদ্দেশে চিঠি লিখে যান। চিঠির শেষে তিনি লেখেনÑ ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন।’ পরবর্তীতে রোমে খ্রিস্টধর্মের প্রসারের পর সেন্ট ভ্যালেনটাইনের শহীদ হওয়ার দিনটি পালিত হতে থাকে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে।
১৪শ শতকে ইংরেজ সাহিত্যিক চসারের লেখায় সেন্ট ভ্যালেনটাইন’স ডের সঙ্গে রোমান্টিক আবহ যুক্ত হয় এবং এটি প্রেমিক-প্রেমিকার দিবস হিসেবে পালিত হওয়া শুরু হয়। অনেক প-িতের মতে, ফেব্রুয়ারি মাসে উদযাপিত প্রাচীন গ্রেকো-রোমান ঐতিহ্যের প্রেমপ্রস্তাব দিবস লুপার সালিয়ার রীতি-রেওয়াজ এই দিবসে অঙ্গীভূত হয়েছে। তবে এই দাবির কোনো বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মধ্যযুগে ও ঊনবিংশ শতকে ইউরোপে ভ্যালেনটাইন’স দিবসে প্রিয়জনকে চিঠি, কার্ড, উপহার এবং মিষ্টিজাতীয় সামগ্রী প্রদানের রেওয়াজ চালু হয়। চিঠির শেষে লেখা হয় ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন। প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য দিনটি প্রসিদ্ধি লাভ করে। ভ্যালেনটাইন’স ডের প্রতীক হলো এমেথিস্ট পাথর, হৃদয় আকৃতি, লাল গোলাপ, প্রেমের দেবতা কিউপিড ইত্যাদি। কথিত আছে, সেন্ট ভ্যালেনটাইনের হাতে অ্যামেথিস্ট পাথর বসানো একটি আংটি ছিল এবং এই পাথর ভালোবাসা লাভে সাহায্য করে।
আমেরিকায় পঞ্চাশ দশক ধরে দিনটির বাণিজ্যিক গুরুত্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। উপহার আদান-প্রদানের দিক থেকে ক্রিসমাসের পরই গুরুত্ববহ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভ্যালেনটাইন’স ডে।
বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশক থেকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নামে ১৪ ফেব্রুয়ারির দিনটি উদযাপিত হতে থাকে। বর্তমানে এই দিবসে প্রচুরসংখ্যক গোলাপ ও ফুলের মুকুট বিক্রি হয়। বিশেষ করে ঢাকার শাহবাগ এলাকা, রমনা পার্ক ও ধানম-ি লেক পরিণত হয় তরুণ-তরুণীদের মিলনমেলায়।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।