২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

আজ সিরিজ জয়ের ম্যাচ?


কাল সন্ধ্যা পর্যন্তও মনুষ্যচালিত স্থায়ী স্কোরবোর্ডের সংখ্যাগুলোকে মুছে ফেলা হয়নি। আগের ম্যাচের স্কোরটা তখনো জ্বলজ্বল করছিল। শ্রীলঙ্কা অলআউট ২৩৪। বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ৩২৪। মুক্তার মতো ঝিকমিক করছিল যেন তামিমের ১২৭, সাকিবের ৭২, সাব্বিরের ৫৪।

এই স্কোরবোর্ডের সামনেই অনুশীলন করে গেল দুই দল। সকালে শ্রীলঙ্কা। বিকেলে বাংলাদেশ। দুই দলের কাছে বিশাল এই নির্জীব ক্যানভাসটি দুই রকম অনুভূতি ছড়িয়েছে। বাংলাদেশের জন্য যা আনন্দের, শ্রীলঙ্কার কাছে বিষাদের। এই আনন্দ থেকে আরও বড় আনন্দের উৎসমুখে যাওয়ার প্রেরণা খুঁজেছে বাংলাদেশ। তা হলো, কোনো বড় দলের বিপক্ষে তাদের মাঠেই প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়।

আজ দুটি সম্ভাবনা নিয়েই সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। বাংলাদেশ জিতে হয় স্কোরলাইন করবে ২-০, নতুবা শ্রীলঙ্কার জয়ে তা হবে ১-১। অর্থাৎ রণগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটায় শুরু সিরিজ জয়ের কিংবা সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচ।

এটা একটা চেনা দৃশ্য কিংবা পরিচিত ঘটনা যে, সিরিজের প্রথম ম্যাচটি জিতলেই বাংলাদেশের ক্রিকেট-জনতা ধবলধোলাইয়ের সুবাস পায়। ২-০ হয়ে গেলেই ‘ধবলধোলাই’, ‘ধবলধোলাই’ ‘হোয়াইটওয়াশ’ ‘হোয়াইটওয়াশ’ শব্দ উচ্চারিত হয় বাতাসে। সাংবাদিকেরা বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপের বাসিন্দা নন। তাঁদের মনে জনতারই আকাঙ্ক্ষা বাজে। একজন কাল মাশরাফি বিন মুর্তজাকে বলেই ফেললেন, ২-০ যখন করার আশা আছে, ৩-০ হতেই পারে।

এই কথার আসলে দুটি দিক। সিরিজ জিতলে বাংলাদেশের দুটি র‍্যাঙ্কিং পয়েন্ট বাড়বে। আর র‍্যাঙ্কিংয়ের সাতে অবস্থান হবে পোক্ত। ৩-০ হলে বাংলাদেশ ৯৬ পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ভগ্নাংশের ব্যবধানে টপকে উঠে যাবে ছয়ে। সিরিজ জিতলে পরবর্তী বিশ্বকাপে খেলা অনেকটাই নিশ্চিত, ৩-০ করে জিতলে সামান্য সংশয়ও থাকবে না। কিন্তু মাশরাফির এই র‍্যাঙ্কিংয়ের সাপ-লুডু খেলা নিয়ে আগ্রহ নেই। ওটা মাথায়ই আনতে চান না। মাশরাফির মুখে স্পষ্ট বিরক্তির আভাস, ‘একটা ম্যাচ জিতলেই ৩-০, ৩-০ কথাটা আমরা শুনি। কিন্তু আমি বলি, ওসব নিয়ে আমরা ভাবতে চাই না। সামনে যে ম্যাচ সেটিই আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। আমরা শুধু শুধু নিজেদের ওপর চাপ নিয়ে আসতে চাই না।’

হ্যাঁ, বাংলাদেশ এর আগে কয়েকবার প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করেছে। প্রায় বলে-কয়েই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ ও ২০১৩ সালে সেই ধবলধোলাই ক্রিকেট অভিধানে এনেছে নতুন শব্দ ‘বাংলাওয়াশ’। বাংলাদেশ এরপর পাকিস্তানকেও করেছে ধবলধোলাই। কিন্তু উল্টো পা হড়কানোর ঘটনাও আছে। পাকিস্তান ধবলধোলাই হয়ে ফিরে যাওয়ার পর ভারতের বিপক্ষে মোস্তাফিজ-জাদুতে ২-০ এগিয়ে গিয়েও ৩-০ করা যায়নি। শেষ ম্যাচে ভারতের জয়ের পর মহেন্দ্র সিং ধোনির চোখে দেখা গিয়েছিল ‘লজ্জা’ এড়াতে পারার স্বস্তি। আর মাশরাফির চোখে একটু নিভে যাওয়া আনন্দ। মাশরাফিও যে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন, ভারতকে ধবলধোলাই করা যাবে!

সেই মাশরাফি এখানে সিরিজটা ২-০ না হতেই ৩-০ করার কথা ভাবেন কেমন করে? তা ছাড়া শ্রীলঙ্কা হতে পারে সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে, দিলশান নামের কয়েকটি মহিরুহকে হারিয়ে বিগতযৌবন, কিন্তু তারা খেলছে নিজেদের মাঠে। দিনেশ চান্ডিমাল, উপুল থারাঙ্গা, থিসারা পেরেরা ও কুশল মেন্ডিসের মতো কুশলী কিছু খেলোয়াড় তো আছে, যাঁরা বদলে দিতে পারেন ম্যাচের রং। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, হৃদয়ে হচ্ছে রক্তক্ষরণ—শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা তো করবেই।

দ্বিতীয় ম্যাচে একটু সিমিং পরিবেশের গন্ধ পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। এতে বদলে যেতে পারে বোলিং লাইনআপও। কালই নেটে দেখা গেল দুই অভিজ্ঞ পেসার—নুয়ান কুলাসেকারা ও নুয়ান প্রদীপকে। সাকিবের বুলেটগতির শট থেকে বাঁচতে গিয়ে সুরঙ্গা লাকমলের আঙুলে একটু চোট লেগেছে। এতে একেবারেই তিনি খেলতে পারবেন না, অবস্থা মনে হয় এমন নয়। আসলে একটা উপলক্ষ পেয়ে স্কোয়াডে ডেকে আনা গেল দুই পেসারকে। তাতে বোলিংয়ের ধার একটু বাড়ল!

উইকেটটা একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে। প্রথম ম্যাচের উইকেটের চেয়ে কাল দুপুর পর্যন্ত তাতে অনেক ঘাসের অস্তিত্ব। সন্ধ্যার মুখে পানি দিয়ে ভেজাতেও দেখা গেল এক দফা। শ্রীলঙ্কা হয়তো বাড়তি একজন পেসার নিয়েই নামবে।

তাতে অবশ্য মাশরাফির কিছুই এসে যায় না। বলে গেলেন, উইকেট যা-ই হোক, দলে সব রকম প্রস্তুতিই আছে। যদিও একাদশটা ঠিক করা হবে মাঠে এসে উইকেট দেখার পর। কন্ডিশন একই থাকলে জয়ের সমন্বয় অনেক দলই ভাঙতে চায় না। এখানে উইকেট একই রকম থাকবে কিনা সেই গ্যারান্টি যেহেতু নেই, মাশরাফিই বা কীভাবে নিশ্চয়তা দেন যে, জয়ের সমন্বয়টা অটুট থাকবে। সুতরাং শ্রীলঙ্কার মতোই বদল হতে পারে বাংলাদেশের একাদশ।

বাংলাদেশের একটি বিষয় অবশ্য বদলাচ্ছে না। জয়ের অদম্য ইচ্ছা। তাই আগের ম্যাচটির মতোই খেলতে চান মাশরাফিরা। চান তামিমের গড়া ও রকম বড় একটি ইনিংস। সাকিব, সাব্বির, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক, মোস্তাফিজ, মিরাজদের ঔজ্জ্বল্য—আসলে ১১ জনের মিলিত অবদান। আর তাহলেই হতে পারে ২-০। তাহলেই আজ রাতে সিরিজ জয়ের উৎসব হবে রাতের ডাম্বুলায়!

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।