১৯ এপ্রিল, ২০২৫ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২০ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ   ●  ‘পটভূমি পরিবর্তনের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ – সরওয়ার জাহান চৌধুরী

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে

মিয়ানমারের রাখাইনে পরিস্থিতিরি আরো অবনতি হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নির্যাতন হত্যার পাশাপাশি জালিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের ঘরবাড়ি। রাখাইনে নিহতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা দলে দলে ছুটে আসছে বাংলাদেশে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ দিনে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ৯০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। সীমান্তে নাফ নদী পার হতে গিয়ে অনেকে ডুবে মারা যাচ্ছে। সর্বশেষ ২৫ আগস্ট ফের অভিযান শুরু হওয়ার পর পালাতে গিয়ে পরবর্তী এক সপ্তাহে নাফ নদীতে ডুবে অনেকে মারা গেছে। এ পর্যন্ত ৫৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

মিয়ানমারে চলমান বর্বর ঘটনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সোচ্চার ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। প্রতিবাদ যা হচ্ছে তা অনেকটা দায়সারা গোছের। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেবল বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। এখানে আরো উদ্বেগের বিষয়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে উগ্র বৌদ্ধরাও রোহিঙ্গাদের নিধনের পাশাপাশি তাদের বাড়িঘর, চাষাবাদ, এমনকি মসজিদসহ গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

তবে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চলে আসছে বছরের পর বছর। তাদের ওপর বর্বর হামলা- নির্যাতনের কারণে সেখান থেকে পালিয়ে এসে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে বসবাস করছে। বাংলাদেশে প্রথম রোহিঙ্গাদের ব্যাপক অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে ১৯৭৮ সালে। কয়েক লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল তখন। এদের মধ্যে পরে অনেকে ফিরে গেলেও অনেকেই থেকে যায় বাংলাদেশে। কিন্তু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা বন্ধ হয়নি। ’৭৮-র পর বড় ধরনের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে ১৯৯১ সালে। আর গত বছর সেনা অভিযানের মুখে ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

বছরের পর বছর সেখানে এ সংকট বিরাজ করলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে কোনো অগ্রগতি নেই। সর্বশেষ জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি জাতিসংঘ কমিশন গঠিত হয়। আশা করা হচ্ছিল, এবার স্থায়ী সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু আনান কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তরের পরের দিন সেখানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সে আশার আলো ফিকে হয়ে আসছে। এক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ ও বিপর্যয়কর হতে পারে। সেরকম কিছু হলে মানবতার জন্য তা হবে লজ্জাজনক।

তাই মানবতার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। আশার কথা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিভিন্ন মুসলিম দেশ রোহিঙ্গা ইস্যু জাতিসংঘে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টির সুরাহা করার জন্য এ মাসে সাধারণ পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করে মিয়ানমারের ওপর জোরালো চাপ তৈরি করতে হবে। সমস্যার স্থায়ী সমাধান ছাড়া সাময়িক উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম ভূমিকা রাখলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা যাবে বলে আমরা মনে করি। তাই শরণার্থী পুনর্বাসনসহ আনান কমিশনের রিপোর্টে করা সুপারিশ বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে জাতিসংঘ, ওআইসি, বিভিন্ন মুসলিম দেশসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। বস্তুতঃ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিয়ানমারসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।