ঢাকাই চলচ্চিত্রে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ করে শোকের ছায়া নেমে আসে।
শুটিংয়ের উদ্দেশ্যে রাত ৮টায় কমলাপুর থেকে দিনাজপুর যাবার পথে ট্রেনে হার্ট অ্যাটাক হয় বর্ষীয়ান অভিনেতা ও প্রযোজক মিজু আহমেদের। পরে তাকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে নামানো হলে তিনি সেখানেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এর আগে এ অভিনেতা সোমবার সকাল থেকে শাহাদাৎ হোসেন লিটনের ‘অহংকার’ সিনেমার শুটিং করছিলেন। দুপুরের দিকে তিনি শুটিং শেষ করেন। এটিই ছিল তার জীবনের শেষ শুটিং। শুটিং শেষে পরিচালক যখন তাকে জানালেন তার অংশের শুটিং শেষ তখন তিনি বললেন, ‘দেখ কোনো কিছু বাকি আছে কি না? বাকি থাকলে এখনই করে নাও। আমাকে কিন্তু আর পাবা না।’ এটিই ছিল পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন লিটনের সঙ্গে সদ্যপ্রয়াত চলচ্চিত্র অভিনেতা মিজু আহমেদের শেষ কথা।
সোমবার রাতে বিএফডিসিতে এ সিনেমার শুটিং চলাকালে রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে এমনটিই জানান লিটন। লিটন বলেন, ‘মিজু ভাইয়ের সঙ্গে অনেক সিনেমায় কাজ করেছি। আমার প্রায় সব সিনেমায় তিনি কাজ করেছেন। আজ শুটিং শেষে আমি তাকে বলি- ভাই, দুপুরের খাবার খাবেন, নাকি বাসায় গিয়ে খাবেন? তখন তিনি মজা করেই বললেন, তুমিতো দেখছি কোন দেশের লোকের মত বলছ। এখন খাবেন নাকি অন্য সময় এসে খাবেন। কথাগুলো এখনো কানে বাজে।’
এদিকে একই সিনেমায় সোমবার শুটিং করেছেন খলনায়ক কমল পাটকের। মিজু আহমেদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে দিয়ে তিনি অঝোরে কাঁদলেন। বললেন, ‘মিজু ভাই আমাকে খুব পছন্দ করতেন ছোট ভাই হিসেবে। শুটিং করে আসরের নামাজ পড়েছেন শিল্পী সমিতিতে। এটিই হয়ত তার জীবনের শেষ নামাজ। শুটিংয়ের পরে আমি তাকে বলি- ভাই, চা খান। তখন তিনি বলেন, যাচ্ছি যখন দাও চা-টা খাওয়াই দাও। আমি তাকে চা দেই তিনি চা খেয়েছেন। এটা তার সঙ্গে আমার শেষ কথা ও শেষ দেখা। পরে আমি শুটিং করে সন্ধ্যায় বাসায় গেলাম মাত্র। এর পরই ফোন আসে মিজু ভাই এয়ারপোর্টে মারা গেছে। আমি শুনেই তাড়াতাড়ি এফডিসিতে চলে আসি। আমাকে খুব ভালোবাসতেন। চলচ্চি্ত্রে আমি ৩৯ বছর কাজ করছি। মিজু ভাইতো আর আসবেন না। জীবনে বেঁচে থাকলে অনেক সিনেমা করতে পারব। কিন্তু মিজু আহমেদকে ইন্ডাস্ট্রিতে আর পাব না।’
এদিকে শিল্পী সমিতির বয় রাকিব জানালেন তার প্রিয় স্যারের কথা। তিনি রাইজিংবিডিকে হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোথায় এসে বসতেন তার প্রিয় স্যার। কোথায় তিনি নামাজ পড়তেন।
আবেগাপ্লুত হয়ে রাকিব রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি দুই বছর ধরে এ সমিতিতে কাজ করি। স্যার সব সময় ওই সোফাটায় বসতেন এবং ওখানে বসেই নামাজ পড়তেন। আজও তিনি ওখানে বসেছেন। ওখানেই ভাত খেয়েছেন। আজ এসে আমাকে বলেন, রাকিব আমার স্যান্ডেল জোড়া দে। আমি তাকে স্যান্ডেল দিলে তিনি ওজু করে নামাজ পড়েন। এখনো সোফার ভাঁজ যায়নি।’
কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে থেমে যান রুবেল। এর পরে আবার বলেন, ‘স্যার বেশিরভাগ সময় আমার সঙ্গে খেলা নিয়ে আলাপ করতেন। স্যার অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।’
মৃত্যুর পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে থেকে অভিনেতা মিজু আহমেদের মরদেহ মোহাম্মদপুরে গোসলের জন্য নেওয়া হয়। এর পরে তার নিজ বাসভবন রাজধানীর পান্থপথে নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিএফডিসিতে জানাজা শেষে তার মরেদেহ দাফন করা হবে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কোটবাড়ীতে।
মিজু আহমেদের বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।