কক্সবাজারসময় ডেস্কঃ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানিয়দের চাকরি না দেয়ায় এনজিওতে স্থানিয়দের চাকরির দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া যুবনেতা ইমরুল কায়েসের রক্তের উপর দিয়ে এনজিওদের যেতে হবে বলে ঘোষনা দিয়েছেন। আজ ইমরুল কায়েস এ নিয়ে তার নিজের ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে ইমরুল কায়েস লিখেছেন “রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানিয়দের চাকরির দাবিতে গত ৪০ দিন ধরে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও এনজিওদের কাছে বারবার অনুরোদের সত্বেও আমাদের দাবি মানা হয়নি। এক মাস সময় নেয়ার পরও প্রশাষন আমাদের ন্যায্য দাবি এনজিওদের মানাতে পারেনি। উল্টো গত একমাসে এনজিওর চাকরিতে বহিরাগতরাই প্রাধান্য পেয়েছে। তাই আমার ভাই-বোনদের চাকরির দাবিতে কালথেকে রাজপথে নামছি। এবার হয় চাকরি দিতে হবে, অন্যথায় আমার রক্তের উপরদিয়ে এনজিওদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেতে হবে।”
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এনজিওতে চাকরিতে স্থানিয়দের অধিকার আদায়ের জন্য ১৪ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছে স্থানিয়রা। তারা ১৪ দফা নিঢে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, রোহিঙ্গা ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, ইন্টার সেক্টর কোর্ডিনেশন গ্রুপ ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।
অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি উখিয়া সংগঠনের নামে আন্দোলনকারীরা স্থানিয়দের পাশাপাশি বিদেশি এনজিও কর্মকর্তাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি যোগ্যতা সম্পন্নদের আইএনজিওতে অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি জানান।
গত জানুয়ারীর শেষের দিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সমন্বয় সভায় এনজিওরা স্থানিয়দের দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই কাল থেকে আবারও আন্দোলনে নামছে স্থানিয়রা।
আন্দোলনকারীদে ১৪ দফা দাবি গুলো হলোঃ
১। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে রোহিঙ্গা এনজিওর চাকুরীতে স্থানিয়দের ৭০% কোটা দিতে হবে।
২। স্থানিয়দের পরিকল্পিত ছাটাই কারী এনজিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩। এনজিও ও আইএনজিওতে প্রত্যেক বিভাগের উচ্চ পদে নুন্যতম ২ জন স্থানিয়কে চাকরি দিতে হবে।
৪। যে সকল এনজিও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ঐ সকল এনজিও তাদের পরবর্তী প্রকল্পে পূর্বের প্রকল্পের স্থানীয়দের চাকুরীতে বহাল রাখতে হবে।
৫। নিয়োগের কার্যক্রমে সচ্ছতা আনতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন ও স্থানিয়দের প্রতিনিধি একটি মনিটরিং সেল করতে হবে।
৬। এনজিওরা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রাপ্ত অনুদানের ৭০ ভাগ অপারেটিং খরচ হিসেবে ব্যয় করে এতে রোহিঙ্গারা ও স্থানীয়রা তাদের ন্যায্য অনুদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এনজিওদের এসকল দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বিদেশী কর্মকর্তারা নুন্যতম ৫ লক্ষ টাকা বেতন পাচ্ছে সেক্ষেত্রে একজন স্থানীয় বেতন ১০-১৫ হাজার টাকা। এনজিওতে চাকরিতে বেতন বৈষম্য দূর করতে স্থানীয়দের নুন্যতম বেতন ৫০ হাজার টাকা করতে হবে।
৮। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত ১৩শ বিদেশী কর্মকর্তার বেতন ও আনুসাঙ্গিক খরচ মিলে ২শ কোটি টাকার বেশী অর্থ খরচ করছে। এ সকল বিদেশী কর্মকর্তার স্থলে দেশীয় যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের চাকুরী দিতে হবে।
৯। বিদেশী এনজিওরা মোট বরাদ্ধের ৯০ ভাগের বেশী অনুদান পাচ্ছে এবং এ সকল অনুদান বিভিন্ন কৌশলে আবার বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশ থেকে অর্থ পাচাররোধে টঘ সংস্থা গুলো ছাড়া সকল বিদেশী এনজিওদের ফেরত পাঠাতে হবে। বিদেশী এনজিওদের স্থলে দেশীয় এনজিওদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
১০। প্রতিমাসে সকল এনজিওকে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর স্থায়ী ঠিকানাসহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
১১। দক্ষতা অর্জনের জন্য স্থানিয়দের উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১২। এনজিওতে চাকরির জন্য প্রতিটি অফিসে সরাসরি আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৩। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করতে এনজিওদের বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে।
১৪। প্রত্যাবাসন বিলম্ব হলে বিশ্বেও অন্যান্য দেশেরমত উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো কাটাতারের বেস্টনি দিয়ে রোহিঙ্গা সুনির্দিষ্ট গন্ডির ভিতর রাখার প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ।
আন্দোলনকারীরা গত জানুয়ারী থেকে তাদের দাবি আদায়ের জন্য মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদান সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।