পুরো নাম পিপলু দাশ।চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর আমিরাবাদ গ্রামের ছেলে।২০১৬ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট(জেএসসি) পরীক্ষায় লোহাগাড়ার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্টান উত্তর আমিরাবাদ এম.বি.উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। পিতা উত্তর আমিরাবাদ ২নং ইউনিয়নের ৫নং ওর্য়াডের উত্তর আমিরাবাদ গ্রামের দরিদ্র জেলে শ্যামল দাশ, মাতা বুলু দাশ। তার পিতা দিন মজুর হিসেবে কাজ করে সংসার চালান। বাড়ি বলতে একটি টিনের ছাউনি। যার চারপার্শ্বে পলিথিনের কাপড় দিয়ে ঢাকা। বৃষ্টির সময় ফুটো দিয়ে পানি পড়ে আর রোদের সময় ভিতরে সব সময় রোদ থাকে। তাদের আরো ৪ ছেলে মেয়ে রয়েছে। খুব কষ্টে তাদের নিয়ে সংসার চললেও মেঝ ছেলে লেখাপড়ায় ছিল নাছোঁড় বান্দা। মায়ের শত বকোনীর শর্তেও ভাঙ্গা কুঁড়িরে কখনো মাঠিতে আবার কখনো চট বিছিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। সে পড়বেই। কুঁড়েঘরটি স্বর্ণের খনিতে রুপান্তর হওয়া শুরু করেছে অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরিক্ষায় ভাল রেজাল্টের মাধ্যমে। সে সবার সহযোগিতায় অনেক দূর যেতে চাই। লোহাগাড়ায় তার ভাল রেজাল্ট আজ সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয়।
২৯ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় সরোজমিন উত্তর আমিরাবাদ গ্রামে ওই ভাঙ্গা কুঁটিরে গিয়ে তাদের পিতা মাতা কর্মে থাকায় পাওয়া না গেলেও (সন্ধ্যা ৬টায় পাওয়া যায়) স্বর্ণের খনি পিপলুকে পাওয়া যায়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার সাথে কথা বলতে চাই। সে সাংবাদিক কি বুঝতে না পারলেও তার লেখাপড়া কিভাবে চলছে এবং কিভাবে এতো ভাল রেজাল্ট তার প্রশ্ন শুনে সে বলব আপনি কি পেপারে দিবেন। তখন আমি বলি তাই করবো। তখন সে অকপটে বলতে শুরু করলো তার লেখাপড়া ও পরিবারের অবস্থান।
আমি উত্তর আমিরাবাদ এম. বি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ি।আমরা ৫ ভাই বোন। বাপ (পিতা) দিন মজুরী কাজ করেন। অনেক কষ্ট সংসারে। ১ম শ্রেনী থেকে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করি। ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায়ও সব বিষয়ে এ+ পেয়ে বৃত্তি পায়।স্কুল থেকে বই আর উপবৃত্তির টাকা দেয়। বাড়ি ভাংগা ঝর(বৃষ্টি) হলে পড়ালেখা করতে ন পারি। আর রইদ(রোদ)হলে আরো বেশি হষ্ট(কষ্ট) হয়। তারপরও আমি লেখাপড়া ন ছাড়ি। আপনারা দোয়া করলে আরো বেশি পড়তে চাই। কিন্তু আর বাপরতে টাকার অভাব। এ বলে সে আর বলতে চাইনি।পরে সন্ধ্যায় ৬টায় আবারো তার বাড়িতে গেলে পিতা শ্যামল ও মাতা বুলুর সাথে কথা হয়। আনুষাঙ্গিক লেখাপড়ার খরচের অভাবে তারা ছেলের লেখাপড়া বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে তাদের কোন কথা না শুনে লেখাপড়া চালিয়ে যান। পুরো স্কুলে সে ভাল রেজাল্ট করায় অনেক খুশি। ভবিষ্যতে আরো বেশি লেখাপড়া করার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও আর্থিক অভাব অনটন এর কারণে পারবে কিনা সন্দেহ পোষন করেছেন। তিনি ছেলের উচ্চ শিক্ষার্থে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।উত্তর আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও তার প্রাইভেট শিক্ষক জনাব মনসুর সংবাদ মাধ্যকে জানান, আমাদের স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরিক্ষায় ৭ জন এপ্লাস পেয়েছে। তার মধ্যে পিপলু প্রথম হয়েছে। অত্যন্ত মেধাবী, ধৈর্যশীল বিনয় প্রকৃতির ছেলে সে।তার পরিবার অনেক অসহায়। সবার সহযোগিতা ফেলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।