দেশে চিকিৎসকদের সংখ্যা বাড়ছে। বতর্মানে দেশে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রেশনধারী চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ৮৯ হাজার। এর মধ্যে এমবিবিএস ৮১ হাজার ১৮৫ ও ডেন্টাল ৭ হাজার ৪৮৪ জন চিকিৎসক রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসল চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের পরিচয়ে দেশজুড়ে ভুয়া চিকিৎসকের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। এক শ্রেণির প্রতারক চক্র আসল চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি তাদের নিজের নামের পাশে লিখছেন। ভুয়া হয়েও বড় ডাক্তার পরিচয়ে চেম্বার ও হাসপাতালে রোগী দেখে দেদারছে প্রতিদিন বিপুল অঙ্কের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর রেজিস্ট্রার ডা. জাহেদুল হক বসুনিয়া এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সম্প্রতি খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) সহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানকালে এমন বেশ কিছ সংখ্যক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এমবিবিএস ও বিডিএস চিকিৎসকদের বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা ভিজিটিং কার্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড ও সাইনবোর্ডে রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখছেন না। এ সুযোগে ভুয়া চিকিৎসকরা তাদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও ডিগ্রি অবাধে লিখছেন। আসল চিকিৎসকদের অসচেতনতা ও গাফিলতির কারণে ভুয়া ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
যে কোনো আইনি ঝামেলা থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসককে আবশ্যিকভাবে ভিজিটিং কার্ড, প্রেসক্রিপশন ও সাইনবোর্ডে রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিএমডিসির স্বীকৃত নয় এমন ডিগ্রির কথা উল্লেখ না করার উপদেশ দেন ডা. বসুনিয়া।
দেশের প্রচলিত আইনানুসারে যে কোন এমবিবিএস/ বিডিএস (ডেন্টাল) চিকিৎসককে সরকারি বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে হলে তাদের কাছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর বৈধ রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক।
বিএমডিসির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিএমডিসি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বর্তমানে বিশেষ ধরনের সফটওয়্যারের মাধ্যমে আসল চিকিৎসকদের সহজেই শনাক্ত করার জন্য বিশেষ ডাটাবেইজ সফটওয়্যার চালু রয়েছে। যেখানে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত এমবিবিএস ও বিডিএস চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ছবি, নাম ও ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্যউপাত্ত রয়েছে।
বিএমডিসির প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ওয়েবসাইটে প্রায় ৮৯ হাজার চিকিৎসকের ডাটা এন্ট্রি করা আছে। তাদের মধ্যে এমবিবিএস ৮১ হাজার ১৮৫ ও ডেন্টাল ৭ হাজার ৪৮৪ জন চিকিৎসক রয়েছেন।
বিএমডিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ বিএমডিসির ওয়েবসাইটে গিয়ে চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখে সার্চ করলেই সে চিকিৎসক সম্পর্কে তথ্য পেতে পারেন। কিন্তু দুভার্গ্যজনক হলেও আসল ডাক্তাররা বিএমডিসির নির্দেশনা ও অনুরোধ মানছেন না।
সম্প্রতি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান নিজে নতুন ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে দেশের অন্যান্য চিকিৎসকদের ভিজিটিং কার্ড, প্রেসক্রিপশন ও সাইনবোর্ডে রেজিষ্ট্রেশন নম্বর লেখার অনুরোধ জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহা-পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ গত বৃহস্পতিবার সারা দেশের ৬৪ সিভিল সার্জনদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্য্যমে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর লেখা ও চিকিৎসকরা তা লিখছে কিনা তা মনিটরিং করতে সকল সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দেন। এ সময় স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকরা সচেতন হয়ে রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখলে ভুয়া ডাক্তারের সংখ্যা ক্রমেই কমবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।