দেশ-বিদেশের পর্যটক আকর্ষণে এবার কক্সবাজারের ইনানীতে তৈরি করা হচ্ছে দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের সি অ্যাকুরিয়াম। সমুদ্রের তলদেশের সমস্ত জীবন্ত জীব-বৈচিত্র্য এতে তুলে ধরার পাশাপাশি সংরক্ষণও করা হবে। মেরিন ড্রাইভের পাশে রেজুখালের তীরে ৪২ একর জায়গার উপর অ্যাকুরিয়াম তৈরিতে এগিয়ে এসেছে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। সরকারের নীতিগত সম্মতি পাওয়ার পর এ প্রকল্প নিয়ে চীনের ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
উন্নত সব দেশে পর্যটক আকর্ষণের জন্য থাকে নানা ব্যবস্থা। কিন্তু বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের অবস্থান বাংলাদেশের কক্সবাজারে হলেও পর্যটক আকর্ষণে নেই তেমন কোন ব্যবস্থা। আর বিদেশি পর্যটক না আসায় দেশি পর্যটকরাই কক্সবাজারের মূল ভরসা। এক্ষেত্রে পর্যটকদের শুধুমাত্র সৈকত এলাকায় ঘোরাঘুরি এবং পানিতে নেমে গোসল করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। বিনোদনের উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা না থাকায় দেশি পর্যটকরাও ক্রমশ কক্সবাজারের প্রতি হতাশ হচ্ছেন।
সমুদ্র সৈকতে সী-ইন পয়েন্টে বেড়াতে আসা পর্যটক জহিরুল ইসলাম বলেন কক্সবাজার সৈকতটা খুবই সুন্দর। এটাকে যদি আরও উন্নত এবং বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটানো গেলে আরও বেশি ভাল লাগত।
ইনানী সৈকতে বেড়াতে আসা ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন সৈকত এলাকায় বসার সুন্দর জায়গা, সি-অ্যাকুরিয়াম ও শিশুদের খেলার জন্য যদি পার্ক করা গেলে কক্সবাজারে বেড়াতে বেশি ভাল লাগবে।
বেস্ট ওয়েস্টার্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মজিুবুর রহমান বলেন উন্নত দেশে যেমন সি-অ্যাকুরিয়াম, ক্যাবেল কার বা অন্যান্য যে সমস্ত বিনোদনের ব্যবস্থা আছে; তার একটিও কক্সবাজারে নেই। এসব ব্যবস্থা যতদিন করা হবে না ততদিন বিদেশি পর্যটক যেমন আমরা টানতে পারবো না; তেমনি দেশি পর্যটকরাও পরিপূর্ণ বিনোদন পাচ্ছে না।
সমুদ্রের তীর ঘেঁষে নির্মাণাধীন সড়ক মেরিন ড্রাইভের কাজ শেষ হওয়ায় সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে ইনানী সৈকত এলাকায়। ইনানীতে পরিকল্পিত ট্যুরিস্ট জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এখানেই গড়ে তোলা হবে দেশের প্রথম সী অ্যাকুরিয়াম।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সরোয়ার উদ্দিন আহমেদ বলেনÑ মালয়েশিয়ার লংকাবি কিংবা সিঙ্গাপুরের ওয়ার্ল্ড সেন্টোসার কথা বলি; যে সমস্ত সি-অ্যাকুরিয়ামে ঢুকলেই আমরা সারাদিন কাটাতে পারি। ৪২ একর জমির ওপর এই ধরনের একটি বড় সি-অ্যাকুরিয়াম হতে যাচ্ছে কক্সবাজারে।
তিনি আরও বলেনÑ শুধুমাত্র সি-অ্যাকুরিয়ার নয়; তার সাথে মিউজিয়্যাম ও ক্যাবেল কার সম্বলিত পার্ক পার্ক হতে যাচ্ছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ জানানÑ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ায় ইনানীতে সী অ্যাকুরিয়ান স্থাপনে আগ্রহী চীনা প্রতিষ্ঠানটির সাথে আলোচনা চলছে। তাদেরকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। সেটা নিরাপত্তা কিংবা জমিজমা হোক সব ধরনের সহযোগিতা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করবে।
এতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে পর্যটকরা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানো মতো করে সমুদ্রের তলদেশের দৃশ্য উপরিভাগে দেখার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াতেন। এবার পর্যটক আর্কষনের জন্য কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের ইনানীতে তৈরী করা হবে দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের সি-অ্যাকুরিয়াম। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে বলে আশা করছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।