কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে এক ব্যক্তির একই নামে তিনটি সারের ডিলার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে পড়েছেন কৃষকরা। ‘মেসার্স আলমগীর এন্ড ব্রাদার্স’ নামে ডিলার প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ইসলামাবাদের বাঁশঘাটায় আউটলেট দিয়ে কৃষকদের মাঝে সার সরবরাহ করে আসছিলো। কিন্তু গত ৪-৫ বছর ধরে হুবুহু একই নামে ঈদগাঁও এবং ইসলামাবাদে আরো দুটি সারের দোকান খুলে বসেছেন উপজেলা বিএনপির নেতা সেলিম মাহামুদ নামে জনৈক ব্যক্তি।
এ দোকান দুটির একটির অবস্থান ঈদগাঁও বাস স্টেশন সংলঘ্ন যাত্রী ছাউনীর পূর্বপাশে এবং অপরটি ইসলামাবাদ খোদাইবাড়ি মহাসড়কের পাশে পূর্ব পাশে। একই নামে নতুন আরও দুটি আউটলেট হয়ে ভিন্ন মানুষ দিয়ে তা পরিচালিত হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা নানামুখী হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। প্রতারিত হচ্ছেন নতুন গজিয়ে উঠা অবৈধ সারের দোকানগুলো থেকে। অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্যমূল্যে সার প্রাপ্তি থেকেও।
স্থানীয় সুত্র জানায়, ইসলামপুর ভিলেজার পাড়া এলাকার বদর আমিন হেডম্যানের ছেলে বর্তমানে জালালাবাদ ইউনিয়নের পালাকাটা এলাকার বাসিন্দা ঈদগাঁও উপজেলা বিএনপি নেতা সেলিম মাহমুদ সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে এ সার ডিলার আয়ত্তে নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। নিয়মানুসারে যে ইউনিয়নের সারের ডিলার তাকে ওই সুনির্দিষ্ট ইউনিয়নের নাগরিক হতে হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ভিন্ন ইউনিয়নের হয়েও তিনি (সেলিম মাহমুদ) ডিলারশীপ ভাগিয়ে নিয়েছেন। প্রথমে তিনি সম্মুন্দিদের দিয়ে ইসলামাবাদ বাঁশঘাটায় দোকান খুলে কৃষকদের সার সরবরাহ দিলেও বছট ছয়েক আগে হতে একই নামে ঈদগাঁও এবং ইসলামাবাদে তিনটি আউটলেট খুলে বসেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, এভাবে একই নামে একাধিক সারের ডিলার চালু করার কোনো অনুমোদন নেই। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অগোচরে মূল ডিলার ‘আলমগীর এন্ড ব্রাদার্স’এর নামের সাথে হুবুহু মিল রেখে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ঈদগাঁও বাস স্টেশন এবং ইসলামাবাদের খোদাইবাড়ি এলাকায় পৃথক আরও দুটি সারের ডিলারের কথা শোনা গেছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এসব দোকানের ভেতরে মানা হয়নি কোনো শর্ত ও নীতিমালা। বিষজাতীয় পণ্যের সাথে বিভিন্ন ভোজ্য এবং দাহ্য পন্যও বিক্রি করতে দেখা গেছে। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঁশঘাটা এলাকার এক কৃষক জানান- একই নামে এতগুলো সারের দোকান হয়ে গেছে; যার ফলে কোনটা চসল তা বুঝতে হিমসিম খেতে হয়। কোনো ভাবে কষ্ট করে পাইকারী দোকানটি খুঁজে বের করতে সক্ষম হলেও সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় সার পাওয়া যায় না। এভাবে করে প্রতিনিয়ত অহরহ কৃষক প্রতারিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট বোনের জামাতা সেলিম মাহমুদকে সামনে দিয়ে বিএনপি আমলে তার সম্মন্ধি জাহাঙ্গীর আলম নিজ এলাকা ইসলামাবাদে সার ডিলারটি নেন। ছোট ভাইয়ের নামে ‘মেসার্স আলমগীর এন্ড ব্রাদার্স’ নাম দিয়ে ডিলারশীপটি যাত্রা করে এলাকার নির্ভরযোগ্য একটি সারের দোকানে পরিণত হয়। এর মালিক হিসেবে শুরু থেকে সবাই জানতো ইসলামাবাদ ইউছুফেরখীল এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। আর নির্ধারিত খরচ নিয়ে বোন জামাই হিসেবে সেলিম ডিলার সনদটি নবায়নে অফিস মেনটেন করতো। কিন্তু সবার অগোচরে সেলিম ডিলারশীপটির মালিকানা বদলে নিজের নামে করে নেন। বছর ছয়েক আগে হঠাৎ বিষয়টি প্রকাশ করে সেলিম দোকানটি সরিয়ে নিবে বলার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান জাহাঙ্গীররা। খোঁজ নিয়ে দেখেন তাদের সরলতার সুযোগ নিয়েছেন সেলিম মাহমুদ। চরমভাবে প্রতারণায় কাগজপত্র নিজের নামে করে খোদাইবাড়ি ও ঈদগাঁও বাস স্টেশনে দুটি আউটলেট খুলে বসেন। কিন্তু নিয়মানুসারে এক ইউনিয়নের সার অন্য ইউনিয়নেনিয়ে বিক্রির কোন সুযোগ নেই।
সেলিমের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির হয়ে অপপ্রচার করে। স্যোসাল মিডিয়ায় তার অপতৎপরতা লক্ষ্যনীয়। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে বিএনপির এই নেতা আইনের ধরপাকড় থেকে রক্ষা পেয়ে যান। এরপেছনে রয়েছে তার শ্বশরের মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি। এ সাইনবোর্ডের কারণে সরকার বিরুধী বিভিন্ন অপকর্ম করেও পার পেয়ে যান বলে স্থানীয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘নাম একই হলেও মালিক তো ভিন্ন। এতে আইনের ব্যতয় ঘটেছে বলেও মনে হয় না। তিনি মুল্য হ্রাস করে কৃষকদের মাঝে সার সরবরাহ করেন বলেও দাবী করে। তবে, এক ইউনিয়নের সার অন্য ইউনিয়নে নিয়ে বিক্রি এবং ভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে ডিলারশীপ নেয়া অনৈতিক কিনা, এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি।
এবিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে বিষয়টি আগে জানবো। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পেলে তার ডিলারশীপ বাতিল করা হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।