কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাও. জহিরুল ইসলামের সাথে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে অহেতুক তর্কাতর্কীতে জড়িত যুবক প্রকাশ্য মাফ চেয়েও জনতার রোষানল থেকে মুক্তি পায় নি। উত্তেজিত জনতা তাকে জুতা নিক্ষেপ করতে থাকলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ঁেছাড়ে তাকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যান। এ নিয়ে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ৮ মার্চ দুপুর ২ টায় বাজারের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সংগঠিত ঘটনা চলাকালে মুসল্লীসহ শত শত মানুষের সমাগম ঘটে। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, ইসলামাবাদ তেতুলতলীর দারুস সালাম একাডেমীর শিক্ষক দাবীদার ও আহলে হাদিসের সক্রীয় কর্মী মোহাম্মদ তৈয়ব, কয়েকদিন আগে ঈদগাঁও বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ও পেশ ইমাম হাফেজ মাও. জহিরুল ইসলামের সাথে মসজিদের দ্বিতীয় তলাস্থ তাঁর রুমে গিয়ে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তর্কাতর্কীতে জড়িয়ে পড়ে। খতিব তার পরিচয় ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর রোববার এ বিষয়ে হক্কানী আলেম-ওলামাসহ তার সাথে কথা বলার সময় দেন। যথাসময়ে যুবকটি ঐদিন (রোববার) দুপুরে মসজিদে এসে খতিবের রুমে গিয়ে তাবিজ, দোয়া ও ঝাঁড় ফুঁক সম্পর্কে আবারও জানতে চায়। যুবকটির কথাবার্তা ও বেশ-ভূঁষায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে খতিব আবারো তাঁর বিস্তারিত পরিচয় জানতে চান। এ সময় যুবকটি হাদিসের বাংলা অনুবাদের একটি কপি দেখিয়ে তাবিজ, দোয়া করাকে ‘শিরক’ হিসেবে মন্তব্য করে। বিষয়টিকে ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত বিবেচনা করে খতিব তাঁর উপর ক্ষেপে যান। এ সময় মসজিদে উপস্থিত সাধারণ মুসল্লীরা খতিবের সাথে যুবকের এ তর্কাতর্কী ও তার অযৌক্তিক কথাবার্তা শুনে তাকে মসজিদের ২য় তলার বারান্দায় নিয়ে তালাবদ্ধ করেন। অপ্রীতিকর এ খবরটি বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের চতুর্দিকে ছাউর হলে মুসল্লী-সাধারণ জনতা মসজিদ প্রাঙ্গণে ব্যাপক আকারে সমবেত হন। এক পর্যায়ে পুলিশ ও সচেতন মহলের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত যুবক তৈয়ব তাঁর অহেতুক মন্তব্যের জন্য উপস্থিত লোকজনের কাছে প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। এতেও ক্ষিপ্ত জনগণকে সামলানো সম্ভব হয়নি। পুলিশ পাহারায় যুবকটিকে যখন মসজিদ থেকে বের করে আনা হচ্ছিল তখন উপস্থিত ধর্মপ্রাণ লোকজন তাকে জুতা নিক্ষেপ করতে থাকে একের পর এক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অসহায় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে তাকে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তবে ধৃত তৈয়বের মতে, সে ঈমান-আকীদা ভিত্তিক সংগঠন ‘আহলে হাদিসে’র অনুসারী ও সক্রিয় কর্মী। সে তার এলাকায় মাদ্রাসায় শিক্ষকতার সাথে সম্পৃক্ত মর্মে দাবী করে। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাও. জহিরুল ইসলামের মতে, অভিযুক্ত যুবক অহেতুক তাঁকে সহ যারা ইসলাম সম্মত তাবিজ-দোয়ার কাজ করে সাধারণ মানুষের কল্যাণ করেন তাদেরকে ‘মুশরিক’(?) হিসেবে আখ্যা দেয়ায় উপস্থিত আলেম-ওলামা ও মুসল্লিরা তার উপর ক্ষেপে যান। স্থানীয় আলেম হাফেজ আবদুর রহিমের মতে, বিরাজমান ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের হীন উদ্দেশ্যে বহিরাগত এ যুবকটি পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করে। ছাত্র মজলিসের জেলা সভাপতি ইমরান উদ্দীন দাবী করেন, উগ্রবাদী ধর্মীয় সংগঠনের আড়ালে দীর্ঘদিন যাবৎ যুবকটির সাংগ-পাঙ্গরা এলাকার ধর্মীয় ঐতিহ্য ও সুনাম ক্ষুন্নের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। ঈদগাঁও মাইজপাড়া আজিজিয়া নুরুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক ও ওয়ায়েজ হাফেজ মুবিনুল হকের মতে, আটককৃত যুবকটি ইসলামের বেশ ধরে কাফেরের দালালের মাধ্যমে ইসলামকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। গোমাতলী হোছাইনিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আলমগীর আজিজির মতে, আহলে হাদিসের কর্মীরা না’হকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। ওয়ায়েজ ও ঈদগাহ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন (কেজি শাখার) শিক্ষক এনামুল হক ইসলামাবাদীর মতে, একজন মৌলভীকে আটকের বিষয়ে আইন জনগণের হাতে তুলে নেওয়া পছন্দ করেননি বলে জানান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।