উখিয়া টিভি রীলে কেন্দ্রের পশ্চিম পাশে পাতাছড়ি নামক গ্রামে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি উচ্ছেদ করতে গিয়ে রোহিঙ্গা ও বনবিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় নতুন আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বাঁধা দিলে বনকর্মীরা তাদের উপর গুলি বর্ষণ করলে অন্তত ১০/১২জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষ গুলি বিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। বিভাগ প্রায় ৫শতাধিক রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি উচ্ছেদ করে।
বৃহস্পতিবার ৫ জানুয়ারী দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রোহিঙ্গাদের একটি মসজিদ উচ্ছেদ করতে গিয়ে রোহিঙ্গা ও বন বিভাগের মধ্যে এ সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কুতুপালং গ্রামের মোজাফর জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বনকর্মীরা ঝুপড়ি উচ্ছেদ করতে পাতাছড়ি গ্রামে গেলে একেরপর এক নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ভাংচুর শুরু করে। একপর্যায়ে ঐ গ্রামে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা ঝুপড়ি উচ্ছেদেরর পর সেখানে গাছ বাঁশ দিয়ে তৈরী একটি মসজিদ ভাংচুর চালানোর সময় রোহিঙ্গারা দলবদ্ধ হয়ে বনকর্মীদের ধাওয়া করে। এসময় উত্তেজিত রোহিঙ্গাদের কবল থেকে রক্ষা পেতে উপর্যোপরি গুলি চালালে ১০/১২ জন নিরিহ রোহিঙ্গা গুলি বিদ্ধ হয়। আহতদের মধ্যে গুলি বিদ্ধ নুরু সালামের ছেলে আবদুর রশিদ (৩৫)ও আবদুর রহিমের স্ত্রী রেহেনা (৩০) গুরুতর আহত অবস্থায় কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতাণে চিকৎসাধিন রয়েছে।
তাদের দুজনের অবস্থা আশংকা জনক বলে কর্তব্যরত ডাক্তার জানিয়েছেন। আহত অন্যান্যদের মধ্যে আবদুল করিম (২৪), রেহেনা বেগম (৩৫), জাহেদা খাতুন (২৭), সিরাজ মিয়া (৩২), চেমন খাতুন (৩৮), গুল ফরাজ (২৮), আমিনা খাতু (৩০), সোনা খাতুন (১৮), নুর আলম (২৭), খুইল্লা মিয়া (৩৯) সহ আরো অন্তত ১০/১৫ জন রোহিঙ্গা নারী, শিশু পুরুষ সংঘর্ষে হালকাভাবে আহত হয়। বর্তমানে উচ্ছেদ অভিযান স্থানে খোলা আকাশের নীচে
পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। সরেজিমনে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ হওয়া ঝুপড়ি গুলো ভাংচুর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মাত্র কদিন আগে মিয়ানমার থেকে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদের আহাজারিতে টিভি রীলে কেন্দ্র এলাকার আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে। এখন তারা কি খাবে, কোথায় যাবে, কোথায় থাকবে, কি করবে এসব বিষয়ে নিয়ে হতাশায় ভোগছে।
নতুন টালের অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা কক্যাম্প চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক জানান, মিয়ানমারের সহায় সম্বল বাড়ি ঘর ছেড়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘের অনুরোধে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে নমনীয় হয়। কিন্তু কি কারনে বনবিভাগের পরিত্যাক্ত ন্যাড়া পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর উচ্ছেদের নামে এখানেও নির্যাতন করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ঠ বনকর্মী, স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও এমএসএফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক হয়ে গুলাগুলির ঘটনা নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। এমন কি ঘটনাস্থলে আসা সাংবাদিক, পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঠিক তথ্য দিতে সংশ্লিষ্ঠরা অস্বীকার করছেন।
কক্সবাজার দক্ষিন বিভাগীয় বনকর্মকর্তা আলী কবির বলেন, বনবিভাগের জায়গা দখল মুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে।
উখিয়া বন রেজ্ঞ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামও বিট কর্মকর্তা আবদুল মন্নান জানান, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার বনকর্মীদের নিয়ে প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা ঝুপড়ি ঘর উচ্ছেদ করেন। কি কারনে গুলি বর্ষন করা হয়েছে জানতে চাইলে উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা দেওয়ায় এ গুলাগুলির ঘটনা সৃষ্ঠি হয় বলে তারা জানান।
কুতুপালং শরনার্থী শিবির ইনচার্জ মুহাম্মদ শাকিল আরমান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তবে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গারা ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের আওতার বাইরে থাকায় তিনি বিস্তারিত জানাতে পারেনি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।