২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

উখিয়ায় ধান রোপনে জনপ্রিয় হচ্ছে “রাইস ট্রান্সপ্লান্টার” যন্ত্র: ৭ উদ্যোক্তার মাঝে বিতরণ

উখিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রীকরণ প্রকল্পেরের আওতায় কৃষি বিভাগ কর্তৃক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭ জন কৃষি উদ্যোক্তার মাঝে ভর্তুকি মূল্যে ধান রোপণ যন্ত্র (রাইস ট্রান্সপ্লান্টার) বিতরণ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে কৃষকদের চাষাবাদ করার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে এবং কৃষকদের উৎসাহিত করতে উপজেলা কৃষি অফিস রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে ধানের চারা রোপণে সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছে। এমনকি কৃষি কর্মকর্তারা সরেজমিনে ধান রোপণের পদ্ধতি প্রান্তিক কৃষকদের শেখাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিজাম উদ্দিন জানান, শ্রমিক সংকটসহ নানা কারণে ধান আবাদ করে কৃষকেরা লাভবান হতে পারছেন না। শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়াই এর মূল কারণ। এ জন্য সরকার কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে স্মার্ট কৃষির উদ্যোগ নিয়েছে। যন্ত্রের মাধ্যমে ধান রোপণ ও মাড়াই করলে কৃষকেরা অনেক লাভবান হচ্ছেন তাই বর্তমান সময়ে কৃষিতে দিন দিন বেড়ে চলেছে নানা ধরণের প্রযুক্তির ব্যবহার। ইতোমধ্যে ধান রোপণ কাজে প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। এছাড়াও রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন দূরত্বে ও গভীরতায় ধানের চারা রোপণ করা যায়। একজন শ্রমিক ঘণ্টায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতক জমিতে চারা রোপণ করতে পারেন। যন্ত্রটি ব্যবহার করতে ঘণ্টায় মাত্র আধা লিটার পেট্রোল প্রয়োজন হয়। ফলে জ্বালানি খরচও খুব কম। এছাড়া আছে নিয়ন্ত্রিত ও নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে চারা রোপণ করার সুবিধা। নেই চারা নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কাও। তাছাড়া যন্ত্রটি ব্যবহার করলে বীজতলা তৈরির জন্যও আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির উঠানেই বীজতলা তৈরি করা সম্ভব। বৃষ্টির মধ্যেও খুব সহজে চারা রোপণ করা যায়।

এছাড়াও ফলন বেশি হয়, ফসলের মাঠে রোগা হয়না এবং পোকার আক্রমন কম হয়। তাই ধান রোপণ কাজে এ যন্ত্র ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সর্বোপরি অত্যন্ত কম খরচ, শ্রম ও সময়ে বেশি জমিতে চারা লাগানো সম্ভব হওয়ায় কৃষকরা যন্ত্রটির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে তিনি জানান।

কৃষকরা জানান, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণে কোনো ধারণা না থাকলেও এ নিয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং কৃষি কর্মকর্তারা সরেজমিনে ধান রোপণের পদ্ধতি শেখাচ্ছেন।

উপজেলার পশ্চিম রত্না এলাকার কৃষক নুরুল কবির ভুলু বলেন, ‘শ্রমিক সংকটে ধানের চারা রোপণে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এক কানি জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে ৪ হাজার ৫০০ টাকা শ্রমিকরা চেয়েছিল। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় কম খরচে কম সময়ে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে ধান রোপণ করেছি।’

রুহুল্লার ডেবার কৃষক বেলাল বলেন, ‘জমিতে ধানের চারা রোপণ করলে শ্রমিকের খরচ যদি ৪ হাজার ৫শ টাকা হয়, সেখানে এই মেশিন দিয়ে ধান রোপণ করলে খরচ হবে ২ হাজার ৫শ টাকা।’

ভালুকিয়ার রফিক সওদাগর বলেন, ‘বিঘা প্রতি জমিতে বীজতলা থেকে ধানের চারা উঠানো এবং জমিতে চারা রোপণ করা পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচজন শ্রমিক লাগে। তাঁদের পারিশ্রমিক দিতে হয় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর রাইস ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে প্রতি বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপন করতে পেট্রোল লাগে পাঁচশ মিলি লিটার। আর সময় লাগে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মিনিট। সে কারণে এ যন্ত্র দিয়ে ধানের চারা রোপন করছি।

তিনি আরও বলেন, শুরুতে এ মেশিন নিয়ে ভুল ধারণা ছিলো। পরে কৃষি অফিসের স্যারদের নিয়মিত পরামর্শে সেটি কেটে গেছে। এখন আমরা নিজেরাই ট্রেতে বীজ বপন এবং জমিতে মেশিনের সাহার্যে চারা রোপন করতে পারছি। অর্থ এবং সময় দুটোই কম লাগছে আমাদের। সে কারণে লাভের আশা করছি আমরা। ‘

হলদিয়ার কৃষক বাতেন বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হয়না। ধানের বীজ চারা হয় ট্রেতে। প্রথমে ট্রেতে এক ইঞ্চি পরিমাণ ঝড়-ঝড়ে মাটি দিতে হবে। ধানের বীজ ফেলতে হবে ওই মাটির উপর। এরপর ওই ধানের বীজের উপর আবারও এক ইঞ্চি পরিমাণ ঝড়-ঝড়ে মাটি দিয়ে ধানের বীজগুলো ঢেকে রাখতে হবে। তারপর সেখানে পানি স্প্রে করতে হয়। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে চারা রোপনে উপযোগী হয়ে উঠে। এরপর জমিতে ওই মেশিন দিয়ে চারা রোপন করতে হয়।’

উল্লেখ্য, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার প্রায় ১৫০ কানি জমিতে যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা হয় এবং এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।