নিজস্ব প্রতিবেদক:
টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার অন্তত ৩০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩ হাজারের পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন টানা ৪ দিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতে উখিয়ার ৩০ টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে ৫০ হাজার মানুষ। বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গ্রামীণ সড়ক লন্ডভন্ড হয়েছে। কালভার্ট বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি গাছপালা এবং পানের বরজ নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপ-সহকারি পরিচালক তোফায়েল আহমদ গত ৫১ ঘন্টায় কক্সবাজারে ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ডের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ২ জুলাই সকাল ৬ টা থেকে ৩ জুলাই সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৪ মিলিমিটার, ৩ জুলাই সকাল থেকে থেকে ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত ৩ ঘন্টায় আরও ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।তিনি জানান, আরও ২/৩ দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। তবে পরিমান কমবে। এ বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে উখিয়ার ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্য বলছে, উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের নম্বরী পাড়া, ঘাটঘর পাড়া, পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, মনখালি, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবুনিয়া, খেওয়া ছড়ি, বৌ বাজার, কুলাল পাড়া, মনির মার্কেট, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল, হিজলিয়া, পিনজির কুল, রত্না পালং ইউনিয়নের সাদৃকাটা, পশ্চিম রত্না, বড়ুয়াপাড়া, খোন্দকার পাডা, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমান পাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে।
জালিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম সৈয়দ আলম জানান, সমুদ্র উপকূলীয় ডেইল পাড়া, নম্বরি পাড়া ও ঘাটঘর পাড়ায় কয়েকশো পরিবার পানিতে আটকা পড়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উখিয়া সভাপতি মোহাম্মদ নুর মোহাম্মদ শিকদার জানান, ৪ দিন ধরে প্রবল বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে মাটির রাস্তা গুলো লন্ডভন্ড এবং কালভার্ট বিধ্বস্ত হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও পানের বরজ ভেঙ্গে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এম. মনজুর আলম বলেন, তার এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার দেয়া তথ্য মতে, ১৭ টি কাঁচা ঘর,১৮ টি রাস্তা তলিয়ে গেছে। এছাড়া আমন মৌসুমের বীজতলা পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও অসহায়দের খোঁজ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, রুমখা চৌধুরী পাড়া, বড়বিল মনি মার্কেট সহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবজি ক্ষেত সহ আমন মৌসুমের বীজতলা পানিতে ভেসে গেছে।
স্থানীয় মৎস্য চাষীরা জানান, মৎস্য ঘেরে ও পুকুরে পানি ডুকে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, টানা বর্ষনে উপজেলায় ৫ হেক্টর মতো আমন ধানের বীজ তলার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক রাসেল চৌধুরী বলেন, দুই দিনের টানা ভারি বর্ষনে পুরো উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমনকি বসতঘরে পানি ঢুকে সহস্রাধিক মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। বসতঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, রাস্তাঘাট, চিংড়ি ঘেরসহ ব্যাপক ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছেন মানুষ।
তিনি আরো বলেন, ভারি বর্ষনে ব্যাপক হারে কাঁচা ঘর তলিয়ে গেছে। এমনকি উপজেলার সোনারপাড়া এলাকায় প্রধান সড়কে গাছ পড়ে যানচলাচল বন্ধ ছিল। তিনি খবর পেয়ে নিজস্ব উদ্যোগে শ্রমিক দিয়ে গাছ সরিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করে দেয়। এছাড়া তিনি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও অসহায়দের খোঁজ নিয়েছেন বলে জানান। তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদের সমন্নয়ে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তানভীর হোসেন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া সত্যতা স্বীকার করে জানান, বুধবার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে নির্দেশনা দেন তিনি।
তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসরত মানুষগুলোকে নিরাপদ স্থানে চলে আসার জন্য মাইকিং সহ আশ্রয় কেন্দ্রগুলো খোলা রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরন করা হয়েছে। এনজিওদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাড়ানো নির্দেশ দেয়া হয়েছে
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।