মিয়ানমারের সামরিক জ্যান্তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পালিয়ে আসছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। কোন অবস্থাতে রোহিঙ্গাদের থামানো যাচ্ছেনা। বিজিবি সদস্যরা রাত দিন সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে বিজিবি সূত্রে জানিয়েছেন। বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন গত ১ মাসে প্রায় ৫ শতাধিক মিয়ানমার নাগরিককে স্বদেশে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে। তাদের নির্যাতন সইতে না পেরে গতকাল রবিবার ভোরে আরো ১৫ রোহিঙ্গা পরিবারের শতাধিক নারী ও শিশু উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। কুতুপালং শরণার্থী শিবির সংলগ্ন রোহিঙ্গা বস্তিতে বসবাসকারিদের দাবী নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা তাদের নিকট আত্মীয় হারিয়ে হত বিহবল হয়ে যায়। এখানে এসেও খেতে না পেরে অনাহারে মানবেতর দিন যাপন করছে। মিয়ানমারের মংডু সিকদার পাড়া থেকে পালিয়ে এসে কুতুপালং বস্তির এ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলমের ঝুঁপড়িতে আশ্রয় নেওয়া স্বামী হারা ৬০ বছরের বৃদ্ধা জুহুরা খাতুন বলেন, মগ সেনারা তাঁর ছেলে আবু তৈয়ব (২২) কে নিমর্ম ভাবে নির্যাতন পরে গুলি করে হত্যা করে। চোখের সামনে তার মেয়ে রওশন বানু (৩০) ও বেগম বাহার (২৬) কে গণধর্ষণ শেষে নির্মম ভাবে হত্যা করার পর যাওয়ার সময় তারা বসতবাড়ীটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। সে আরো বলেন, দিনের বেলায় কোন রকম সময় কাটালেও রাতে সে ভয়াবহ দৃশ্য বার বার চোখে ভেসে উঠে। যে কারণে কান্না থামাতে পারি না। মংডু পোয়াখালী ছালিপাড়া থেকে আসা ইলিয়াছ (৩৫) বলেন, সেখানকার সেনাবাহিনী ও পুলিশ তার পিতা আব্দুস শুক্কুর কে জবাই করে হত্যা করেছে। এসময় তার স্ত্রী রহিমা (২৫) কে লক্ষ্য করে গুলি করলে ভাগ্যক্রমে বেচেঁ যায়। গুলিবিদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে অনেক কষ্টে এদেশে চলে আসি। সে আরো জানায়, তার পাশের বাড়ীতে থাকা বোন, তার স্বামী ও ছেলে মেয়েসহ ৫ জনকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তারা বেঁেচ আছে কিনা জানি না। শফিউল আলম (৩৫), স্ত্রী নুর বেগম (২৮) ও ৪ ছেলে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মংডুর পোয়াখালী গ্রাম থেকে। সে জানায়, সেনা সদস্যরা আসতে দেখে সে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে। তারা চলে যাওয়ার পর বাড়ী এসে দেখি বড় ভাই নুর মোহাম্মদের লাশ মাটিতে পড়ে আছে। পাশের বাড়ীর আলী হোছন (৬০), আবুল বশর (২৮), লালু (৪০)সহ সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে গেছে। পরে শুনেছি তাদেরকে নির্মম নির্যাতন করে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তির সভাপতি আবু ছিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুর, মীর কাশেম, মোঃ ছব্বির, তারেক উল্লাহ, আবু তৈয়ব, শফি উল্লাহ সহ একাধিক লোক বলেন, বস্তিতে যেসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে তারা কেউ না কেউ নিকট আত্মীয় হারিয়েছে। ভিটে বাড়ি ছেড়ে সহায় সম্বলহীন এসব রোহিঙ্গারা একদিকে যেমন স্বজন হারানোর ব্যাথা ভুলতে পারছে না, অন্যদিকে আশ্রয়হীন অবস্থায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। গত ক’দিনে ধরে উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তি ঘুরে ও আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রোববার ১৫ পরিবারের শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-শিশু বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে একজন মংডুর খেয়ারীপ্রাং থেকে আসা ৯ সদস্যের পরিবারের নুরুল আমিন (৪৫) বলেন, কুমিরখালী থেকে লম্বাবিল হয়ে দেড় লক্ষ (কিয়াত) দালালকে দিয়ে বস্তিতে এসেছে। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেন, অনুপ্রবেশের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দালালের মাধ্যমে এসব রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হচ্ছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।