পতিত বনভূমির টিলার উপর প্রতিষ্ঠিত জামে মসজিদ, দাখিল, নুরানী মাদ্রাসা, হেফজ ও এতিমখানাটি ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা পাশা-পাশি দেশের প্রচলিত শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে গত ১৪ বছর ধরে। প্রায় ৩ একর পাহাড়ী টিলা জমিতে মাদ্রাসার পাশা-পাশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা, বাঁশ বাগান সৃজন করে সবুজায়িত করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় একটি ক্লাবের নামে একদল উচ্ছৃংখল লোক প্রকাশ্য দিবালোকে ৩ শতাধিক গাছ-বাঁশ কেটে মাদ্রাসার প্রায় এক একর জমি জবর দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার বিকালে কক্সবাজারের উখিয়া সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে থাইংখালী এলাকায় এ সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সাধারণ লোকজন, ছাত্র-শিক্ষদের মাঝে ক্ষোভ উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং দু’পক্ষের মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার দুপুরে মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, মাদ্রাসার গাছ-পালা উজাড় ও জমি দখলের বিরুদ্ধে শত শত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী এলাকায় প্রায় ১৪ বছর পূর্বে স্থানীয় দুবাই প্রবাসী হাফেজ শাহ আলমের অনুদানে প্রতিষ্ঠিত হয় থাইংখালী দাখিল, নুরানী মাদ্রাসা, হেফজ ও এতিমখানা। এ প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ জনের মত এতিম শিশুর ভরন পোষন সহ যাবতীয় ব্যয় বহন করে থাকে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা সহ স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিরা। হেফজ, নূরানী ও দাখিল পর্যায়ে প্রায় ৭ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত রয়েছে। মাদ্রাসা সুপার মাওলানা খাইরুল বশর ও হেফজখানার প্রধান হাফেজ হাকিম উদ্দিন বলেন, বুধবার ৪ টার দিকে মাদ্রাসা ছুটি দিয়ে সবাই যে যার মত চলে যাই। সন্ধ্যার দিকে খবর পাওয়া যায় স্থানীয় যুব কল্যাণ সংস্থা নামক ক্লাবের ৫০/৬০ জন লাঠি সোটা, দা, বল¬ম সহ দেশীয় অস্ত্রে সর্জিত হয়ে মাদ্রাসার দখলীয় জমিতে সৃজিত বাগানের ৩ শতাধিক গাছ, বাঁশ কেটে সাবাড় করে পাঁকা খুটি পুঁেত জবর দখল করে নেয়।
উক্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজী রফিকুল¬াহ বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যার আগে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্লাবের লোকজনদের মৌখিক ভাবে অনুরোধ করি মাদ্রাসার সম্পদ ক্ষতি না করতে। কিন্তু তাদের উদ্যত্ত আচরণে নিজেকে অনিরাপদ মনে করে সেখান থেকে চলে এসে কমিটির অন্যান্য লোকজনের সাথে আলাপ আলোচনা করি। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে স্থানীয় ওই ক্লাবের দখলে থাকা বন বিভাগের ৩.২০ একর পাহাড়ী টিলা জমি এভিডেভিট মূলে দখল ক্রয় করে সেখানে মাদ্রাসা সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। ওই সময় উক্ত ক্লাবের ৫২ জন সদস্য ও পরিচালনা কমিটির ১১ জন কর্মকর্তা স্বাক্ষর করে এসব জমি হস্তান্তর করে। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ মোহাম্মদ শাহ আলম ও পার্শ্ববর্তী থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোজাফফর আহমদ সওদাগর সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিগণ সন্ত্রাসী কায়দায় মাদ্রাসার গাছ-পালা কেটে ধ্বংস করা ও জমি জবর দখল করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করে অবিলম্বে প্রশাসনের নিকট আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান। গতকাল দুপুরে উক্ত মাদ্রাসা এলাকায় সরজমিনে শত শত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকগণ এ ঘটনায় ক্ষোভ জানাতে দেখা যায় এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবী জানান। স্থানীয় ক্লাব যুব কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ছিদ্দিক আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম উল্টো মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাদের জমি দখল করায় সে জবর দখলকৃত জমি উদ্ধার করা হয়েছে এবং সেখানে থাকা গাছ-বাঁশ কাটা হয়েছে। তবে ১০ বছর আগে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের নিকট উক্ত জমি বেআইনী ভাবে হস্তান্তরের কথা স্বীকার করলেও অন্য কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
বুধবার মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজী রফিকুল¬াহ ৬ জন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিলে¬াল বিশ্বাস বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্টানের স্থাপনা ধ্বংস ও জমি জবর দখলের ঘটনা করে থাকলে তা অবশ্যই শাস্তি যোগ্য অপরাধ ও বেআইনী। এ ব্যাপারে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উখিয়া থানার ওসিকে অনুরোধ করা হয়েছে। উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান বলেন, এ ধরণের একটি অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে থানার একজন উপ-পরিদর্শককে দ্রুত তদন্ত পূর্বক দায়ী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে শান্ত থাকার ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।