শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় দিন পহেলা মে। অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২য় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সব দেশেই আজ সোমবার পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশেও নেওয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসন থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে মে দিবস পালিত হয়। ওই বছরই সদ্য স্বাধীন দেশে পহেলা মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এর প্রেক্ষিতে উখিয়া উপজেলা সদরে কর্মজীবি কয়েক নারী শ্রমিকের সাথে কথা বললে তাঁরা হতাশা নিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, হোটেলে/রেষ্টুরেন্টে পুরুষের চেয়ে দৈনিক ৪ঘন্টা বেশি কাজ করে কিন্তু মজুরী পাই পুরুষের অর্ধেক। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নারীরা পুরুষের মতো মাটি কাটি, ইট ভাঙ্গি, আমন বোরো, আউশ, চারা রোপন করি, এমনকি ধান কেটে তা মাড়িয়ে ঝাড়িয়ে গোলায় তুলে দিয়। আবার সে ধান ঢেকিতে বেধে পুরুষদের রান্না করে খাওয়াই। তথাপিয় আমরা তাদের মতো সমপরিমাণ মজুরী পাই না। যে কারণে পুরুষ শাসিত এ সমাজ ব্যবস্থায় আমাদের জিম্মি হয়ে অভাব অনটনে মানবেতর দিনযাপন করতে হচ্ছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মহিলাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক চাকুরীতে নিয়োগ প্রদান করে তাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার ধারাবাহিকতায় নারীরা সর্বক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে দায়িত্বপালন করতে সক্ষম হলেও মজুরী ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যতার শিকার হয়ে আসছে। বিশ্ব নারী দিবসে উপজেলা প্রশাসন ডাক ঢোল পিটিয়ে নারীদের বাস্তব সম্মত অধিকার বাস্তবায়নের সভা সমাবেশ ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচী পালন করলেও কার্যত কিছুই হচ্ছে না। উপরোন্তু সমাজের রন্ধে রন্ধে নারীরা নির্যাতন শিকার হয়ে আসছে। চলমান উখিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস কর্তৃক বাস্তবায়িত হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচীর কয়েকটি প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, নারী শ্রমিকের অস্থিত্ব নেই। অথচ সরকারি ভাবে ৩০ শতাংশ নারী শ্রমিক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি শফি সওদাগর অভিযোগ করে জানান, উপজেলার অজপাড়া গায়ে শত শত নারী শ্রমিক হাঁড় ভাঙ্গা শ্রম দিয়ে পুরুষের সাথে পাল¬া দিয়ে শ্রমের কাজ করছে। অথচ ঐ নারী শ্রমিকেরা দৈনিক মজুরী পাচ্ছে সর্বোচ্চ দেড়শ টাকা। ঘিলাতলী গ্রামের হোটেল শ্রমিক আনোয়ারা বেগম(৩৫) জানান, সে বিভিন্ন হোটেলে সারাদিন মরিচ, মসল্লা পিষানো সহ রান্না বান্নার কাজ করে দৈনিক মজুরী পান একবেলা আহারসহ সর্বোচ্চ দু’শ টাকা। অথচ একজন পুরুষ হোটেল শ্রমিক ৮ঘন্টা চাকুরী করে একবেলা আহার সহ ৫শ টাকা মজুরী পাচ্ছে।
অপরদিকে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি, ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল পাশা বলেন, নারীরা পুরুষের দ্বিগুণ কাজ করলেও তাঁদের মজুরী বা বেতন দেওয়া হয় পুরুষের অর্ধেক, যাহা বেতন বৈষম্য। এর থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য শ্রমিকদের দাবী আদায়ে আমরা কাজ করছি।
এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন নারীরা মজুরী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে একথার সত্যতা শিকার করে বলেন, বর্তমানে সর্ব ক্ষেত্রে নারী সমতা ও নারী শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নে মাধ্যমে বৈষম্যতা দূরীকরণের জন্য সরকার কাজ করছে। মূলতঃ পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারনে নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে সরকারী যে সমস্ত দপ্তরে কর্তা বা কর্মী নিয়োগ হচ্ছে তাঁতে শতকারা ৩০% কোটা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়াও নারী-পুরুষ সমযোগ্যতা সম্পন্ন হলে সেখানে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বেসরকারী এনজিও ও গার্মেন্টস খাতে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব নীতি অনুসরণ করা হচ্ছেনা। বিশেষ করে নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি সরকারী ভাবে ৬মাস থাকলেও বেসরকারী ভাবে তা সর্বোচ্চ ১মাস। সম্প্রতি উখিয়ায় কর্মরত এনজিও গুলো ব্যাপারে আমাদের কাছে যে অভিযোগ এসেছে তা হচ্ছে, যে বেতনে নারী কর্মী নিয়োগ দিয়েছে এনজিও গুলো সে বেতন পরিশোধের সময় দেখা যাচ্ছে একটি অংশ কেটে রাখা হচ্ছে। যার ফলে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে নারীরা। তিনি এসময় আরো বলেন, শারিরিক ও মানষিক ভাবে নির্যাতিত নারীরা আমাদের কাছে বিচার প্রার্থনা করলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।