২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

উখিয়ার রেজু খালের মোহনায় নির্মিত হচ্ছে যাত্রীবাহী সামুদ্রিক টার্মিনাল

উখিয়ার রেজু খালের মোহনায় নির্মিত হতে যাচ্ছে দেশের আন্তর্জাতিক সমুদ্র যাত্রীবাহী টার্মিনাল। এর মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপিত হবে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন, থাইল্যান্ডের ফুকেট, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কলম্বো কিংবা চেন্নাই বন্দরের সঙ্গে।

একইসাথে নাফ নদীর উজানে দেশের ভেতর সাবরাং এলাকায় গড়ে উঠতে যাওয়া বিশেষ ট্যুরিজম স্পট, নাফ ট্যুারিজম পার্ক, সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া কিংবা মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করা যাবে এ টার্মিনালের মাধ্যমে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) তত্ত্বাবধানে নির্মিত হবে এই টার্মিনাল। ইতিমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সার্ভের কাজও শুরু করে দিয়েছে বন্দরের দুটি টিম।

রেজু খালের মোহনায় যাত্রীবাহী আন্তর্জাতিক টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে চবক চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বলেন, ‘কক্সবাজার ও টেকনাফের মধ্যবর্তী এলাকাকে ঘিরে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের পর্যটন শিল্প। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) ইতিমধ্যে টেকনাফের সাবরাংসহ কয়েকটি এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। সেই আলোকে আমরা রেজু খালের মোহনায় একটি টার্মিনাল করে দিতে পারলে মানুষ যেমন দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথে যাতায়াত করতে পারবে, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াতও করতে পারবে।’

কক্সবাজার থেকে সমুদ্রপথে অন্য দেশে যাওয়া যাবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বলেন, ‘সিঙ্গাপুর থেকে ক্রুজ জাহাজগুলো মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন হয়ে ভারতের চেন্নাই, বোম্বে ও শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে পৌঁছে। এখন আমরা যদি কক্সবাজারে এ ধরনের একটি টার্মিনাল করতে পারি, তাহলে এসব ক্রুজ জাহাজ আমাদের এখানেও ভিড়বে। তাহলে যাত্রীরা সমুদ্রপথে এক দেশ থেকে অন্য দেশে সহজে যাতায়াত করতে পারবে।’

কীভাবে টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রেজু খালের মোহনায় সাগরের ড্রাফট (গভীরতা) ভালো রয়েছে। সামান্য পরিমাণে ড্রেজিং করলে এখানে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী ক্রুজগুলো ভিড়তে পারবে। সেজন্য আমাদের হাইড্রোগ্রাফি বিভাগ সার্ভে করছে এবং অবকাঠামো ব্যবস্থার জন্য ভূমি সার্ভে করছে ল্যান্ড বিভাগ। প্রাথমিকভাবে আমরা একটা পল্টুন বসিয়েও এই জেটি চালু করে দিতে পারি। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে জেটি নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে।’

চবক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্বের সব বন্দরের দুটি অংশ থাকে। একটি হলো যাত্রী পরিবহন, অন্যটি হলো মালামাল পরিবহন। ১৯৮৬ সালের দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের এক নম্বর জেটি দিয়ে সৌদি আরবে হজ্ব যাত্রা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সমুদ্রপথে বিদেশে যাত্রী পরিবহনও বন্ধ হয়ে যায়। এখন কক্সবাজার হলো পর্যটন শহর। এখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে অনেক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে একমাত্র রেজু খালের মোহনায় এ ধরনের একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল গড়ে তোলা যায়। অন্য কোথাও তা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বন্দর কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগে দেশের অর্থনীতি ও পর্যটন শিল্প অনেক এগিয়ে যাবে জানিয়ে বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘এই ধরনের একটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে আমরা পুরো রেজু খালকে ঘিরে একটি পর্যটন জোন গড়ে তুলবো। এতে সাবরাং ও নাফ ট্যুরিজম পার্কসহ যেসব বিশেষ পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখানে সহজেই মানুষ কক্সবাজার থেকে জলপথে যাতায়াত করতে পারবে। ফলে সমগ্র এলাকাটি ট্যুরিস্ট জোন হিসেবে গড়ে উঠবে।’

এ ধরনের একটি পরিকল্পনা নিজেরও রয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহম্মদ বলেন, ‘কক্সবাজার একটি পর্যটন শহর। কিন’ এখান থেকে সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, মহেশখালী কিংবা কুতুবদিয়া যাওয়ার জন্য ভালো কোনো জেটি নেই। রেজু খালের মোহনায় এ ধরনের একটি টার্মিনাল করা হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প আরো এগিয়ে যাবে।’

টার্মিনালটি করা হলে দেশের পর্যটন শিল্প অনেক এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মঈনুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘রেজু খালের মোহনায় পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য থিম পার্কসহ এমিউজমেন্ট পার্ক গড়ে তোলা যায়। একই সাথে টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে অভ্যন্তরীণ রুটে পর্যটক সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাবে। তবে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী হবে কিনা -তা এখনো প্রশ্নসাপেক্ষ।’

চিটাগং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘কক্সবাজারে যদি এ ধরনের একটি টার্মিনাল হয়, তাহলে অভাবনীয় সাফল্য আসবে। দেশের পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও গতি আসবে।’

বিশ্বের বেশিরভাগ বন্দরে যাত্রী পরিবহনের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে চিটাগং জুনিয়র চেম্বারের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এ ধরনের টার্মিনাল করা হলে দেশের অর্থনীতিতে গতি আসবে। এতে দেশের পর্যটন শিল্প যেমন ডেভেলপ করবে, তেমনি বিভিন্ন দেশের সাথে আমাদের কানেকটিভিটিও বাড়বে।’

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মহেশখালীতে গড়ে উঠছে ১২০০ মেগাওয়াটের কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ও এলএনজি প্ল্যান্ট; টেকনাফে নাফ নদীর মাঝে অবসি’ত জালিয়ার দ্বীপে হচ্ছে নাফ ট্যুরিজম পার্ক। আর নাফের উজানে হতে যাচ্ছে সাবরাং বিশেষ পর্যটন জোন।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।