উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের উপকুল জুড়ে পাহাড়ী এলাকার নির্জন আস্তানায় বসে শতাধিক মানবপাচারকারী দালাল চক্র মানবপাচারের হাট বসিয়েছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের খবর আগেই ফাঁস হয়ে পড়ায় মানবপাচারের গডফাদাররা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঘন ঘন কৌশল ও অবস্থান পাল্টিয়ে সাগর পথে চালিয়ে যাচ্ছে মানবপাচার। বিশেষ করে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি সদস্যরা মানবপাচার প্রতিরোধে উপকূল জুড়ে নিরাপত্তা ও টহল জোরদার করার কারণে সাময়িক ভাবে মানবপাচার কিছুটা হ্রাস পায়। যেখানে প্রতিরাতে সাগরের অন্তত ১০টি পয়েন্ট দিয়ে শত শত লোকজনকে ট্রলারে তুলে দিয়ে মালয়েশিয়ায় পাচার করা হত। আইন শৃংখলা বাহিনীর কড়া নজরদারী থাকায় এখন মাসে অন্তত ৫/৬ টি করে মানবপাচারের চালান সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয় বলে দালালদের বিশ্বস্থ একটি সূত্র জানিয়েছে।
কক্সবাজারের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, থাইল্যান্ডে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার খবরে স্বাভাবিক ভাবে পুলিশ সহ অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা উদ্বিগ্ন। সে সাথে জেলার আওতাধীন সকল থানা পুলিশের কর্মকর্তাদের মানবপাচার প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশনাও দেয়া হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগের যথাযথ তদন্ত ও অনুসন্ধান পূর্বক মানবপাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের কড়া নির্দেশ দেন পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তারা।
জানা যায়, পুলিশ, বিজিবি সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে তৎপর হলে সংঘবদ্ধ পাচারকারীরা পাচারের নিরাপদ পয়েন্ট হিসাবে জুম্মপাড়া, সোনাইছড়ি, ডেইলপাড়া, মাদার বনিয়া, রূপপতি, মনখালী, শামলাপুর, জাহাজপুরা, পাইন্যাশিয়া, সোনারপাড়া, রেজুর মোহনা সহ নির্জন পাহাড়ে পাচারকারী দালালরেরা আস্তানা গড়ে তুলেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। পাচারকারীরা টার্গেট করে বিভিন্ন এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়–য়া শিক্ষার্থী সহ বহিরাগত লোকজন কৌশলে অপহরণ করে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য ওই এলাকাকে নিরাপদ আস্থানা হিসাবে ব্যবহার করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের গোয়ালিয়া গ্রামের আলোচিত ইয়াবা সম্রাট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত অপরাধী চিহ্নিত মানবপাচারকারী মোস্তাক আহমদ গত মঙ্গলবার পুলিশের হাতে আটক হয়। এ সময় মোস্তাকের সহযোগিরা পুলিশের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। মোস্তাক বাহিনীর সাথে পুলিশের ৩০ রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। তবে খুনিয়াপালং গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ইয়াবা সম্রাট মোস্তাককে আইন শৃংখলা বাহিনী কবে ক্রস ফায়ার দেবেন এমন প্রশ্ন।
এদিকে ইয়াবা সম্রাট মোস্তাক আটক হলেও তার সহযোগিরা জেলার সর্বত্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তার অন্যতম সহযোগিরা মফিজ মিয়া প্রঃ মনছুর, আবুল কালাম প্রঃ দাড়ী কালাম, সালামত উল¬াহ, গোয়ালিয়ারধোয়া পালং গ্রামের বেলাল উদ্দিন, লেইঙ্গা আলীর ছেলে আব্দুল করিম, হামিদুল হক, সিরাজের ছেলে মনজুর আলম, মরিচ্যা এলাকার বাবুল, আলী সওদাগর, থায়াইঙ্গা কাটার বাদশা, পশ্চিম গোয়ালিয়ার মহিলা মেম্বারের ছেলে ছুট্টো, চেকপোষ্টের সিএনজি জাফর, পাগলির বিলের রুবেল আবছার, জাহাঙ্গীর, সালাহ উদ্দিন, আলী আহমদ, আবুল কালাম,
মনখালী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দু রাজ্জাক (২৮), মোঃ ফয়সাল (৩২), মোহাম্মদ হোছন (৩৫), তোফাইল আহম্মদ, বাহাদুর, গোলাম শরিফের ছেলে নুরুল বশর, চেপটখালীর ফয়েজুর রহমান, মাদারবুনিয়ার শফিকুর রহমানের ছেলে আব্দুল জলিল (২৫), মোঃ ইউনুছের স্ত্রী রোকসানা আক্তার, মোঃ জাফরের ছেলে আব্দুল জলিল, মোজাহের মিয়ার ছেলে মোঃ উল্যাহ, চোয়াংখালী গ্রামের, জাহেদুল আলম, বর্মাইয়া হাশেম মাঝি, শামশুল আলমের ছেলে রুবেল, আব্দুল¬াহর ছেলে আব্দুল আজিজ, ছৈয়দুর রহমানের ছেলে আব্দুর রহিম, আবুল কাছিম প্রঃ সুদি কাছিমের ছেলে মনজুর আলম, সোনার পাড়ার নুরুল কবিরের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা রেজি প্রঃ রেবি ম্যাডাম, রতœাপালং ইউনিয়নের গয়ালমারা গ্রামের রোস্তম আলী বৈদ্যের ছেলে আনোয়ার ইসলাম প্রঃ আনোয়ার ড্রাইভার ওরপে ডঙ্গী আনোয়ার, পূর্ব সোনার পাড়া বড় পাড়ার হাজী হোছন আলীর ছেলে আব্দুর রশিদ, সোনার পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পার্শ্বে বাড়ী বদিউল আলমের ছেলে নুর হোছন, পূর্ব সোনার পাড়া গ্রামের কালা মন্টুর ছেলে নুরুল কবির, সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত ইউছুপ আলীর ছেলে রোস্তম আলী, সোনার পাড়া গ্রামের অজি উল্যাহর ছেলে কাউছার আহম্মদ জনি, ওমর সওদাগরের ছেলে আলমগীর হোছন রানা, পশ্চিম সোনাইছড়ি গ্রামের আবু ছৈয়দের ছেলে মাহাদু, নুর মোহাম্মদের ছেলে আহম্মদ শরিফ, মৃত হোছন আলীর ছেলে শাহ আলম, মৃত রশিদ আহম্মদের ছেলে আব্দুল¬্যাহ, আব্দুল জলিলের ছেলে লাল মাঝি, মৃত মোজাফ্ফর আহম্মদের ছেলে রাসেল, ফজল আহম্মদের ছেলে শামশু আক্তার, উত্তর সোনাইছড়ি গ্রামের হাবিব উল¬্যাহর ছেলে জয়নাল উদ্দিন জুনু, আমির হামজার ছেলে ছৈয়দ আলম, সুলতান আহম্মদের ছেলে মুজিবুল হক, সোনার পাড়ার জমির আহম্মদ প্রঃ কালা জমির, সোনাইছড়ি গ্রামের শফি আলম, জমির আহম্মদ, শামশুল আলম সোহাগ, লম্বরী গ্রামের ছৈয়দ আলম তাবাইয়া, বেলাল প্রঃ লাল বেলাল, উখিয়ার রূপপতি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে জমির মিয়া, গফুর মিয়া (৩৮), সোনার পাড়া গ্রামের মির আহম্মদ প্রঃ মিরু বলির ছেলে মোঃ শফিউল আলম (৩০), নাজির হোছন প্রঃ নাজুর ছেলে জয়নাল আবেদিন (২৮), শামশুল আলমের ছেলে জালাল উদ্দিন (২৮), মৃত কাদের হোছন বৈদ্যর ছেলে নুরুল কবির (৪০), নুরুল কবিরের ছেলে নুরুল আবছার (২০), বশির আহম্মদের ছেলে নজরুল ইসলাম (২৫), মোঃ ইলিয়াছের ছেলে সাগের আলী প্রঃ সাগর (৩০), নুরুল আলম মাঝি মোঃ আলম (৩৫), সোনাইছড়ি গ্রামের মোঃ সোলতান প্রঃ হাতী সোলতানের ছেলে জিয়াউল হক (৩৮), শফি আলম (৩৮) সহ সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র জড়িত রয়েছে। মানবচারকারীদের কারনে এলাকার সার্বিক আইন শৃংখলার মারাত্মক অবনতি হচ্ছে। উখিয়া সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, স¤পূর্ণ ভাবে উখিয়া-টেকনাফের উপকুল জুড়ে মানবপাচার রোধ করতে পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানবপাচারকারী দলের মুল হোতাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।