উখিয়া উপজেলা পরিষদের চলতি অর্থ বছরে উন্নয়ন খাতে বরাদ্ধকৃত ২ কোটি টাকা ফেরত যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ২জনই নিজেকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান দাবী করায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছেনুয়ারা বেগমকে আর্থিক লেনদেনের ক্ষমতাসহ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ প্রদান করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরী প্যানেল চেয়ারম্যান-১ হিসেবে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করলে আদালত তাকে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দিলেও আর্থিক লেনদেনের ক্ষমতা দেয়নি। ফলে উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদের পক্ষে হাইকোর্টে দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছেনুয়ারা বেগম সুপ্রীম কোর্টের একটি বেঞ্চে লিভ টু আপীল করলে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি শুনানী শেষে স্থিতিশীল অবস্থার আদেশ দেন। এমতাবস্থায় দু’জনই ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দাবী করে বসলে উপজেলা প্রশাসন বেকায়দায় পড়ে যায়। গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ্বাসের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান না থাকায় উপজেলা পরিষদের সমস্ত উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী মোস্তফা মিনহাজ বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান নিয়ে দ্বিধাদন্ডে পড়ে যাওয়ার কারণে রাজস্ব খাতের ১ কোটি ও এডিবি প্রকল্পের জন্য বরাদ্ধকৃত ৫টি ইউনিয়নে ২৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ফেরত যেতে বসেছে। যা নিয়ে গ্রামীণ উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কথা ছিল। উখিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ বাকি বিল্লাহ বলেন, টি আর ১ম পর্যায়ে ১১৪ মেক্ট্রিক টন ও কাবিখার ১৩০ টন চাউল ফেরত যেতে যাচ্ছে। তিনি জানান, ওই টিআর, কাবিখা প্রকল্প গুলো ডিসেম্বর মাসে শুরু হওয়ার কথা এবং ৩১ মার্চ শেষ ডিও উত্তোলনের শেষ দিনছিল। উপজেলা চেয়ারম্যানের কারণে তা ফেরত যাচ্ছে।
রাজাপালং ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচিত সদস্য কামরুন্নেছা জানান, সে ইতিমধ্যে সাড়ে ১০ মেক্ট্রিকটন বরাদ্ধের কাজ সম্পন্ন করেছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের অভাবে সে ডিও উত্তোলন করতে পারেনি। এমতাবস্থায় তার ব্যয়কৃত টাকা গুলো ভেস্তে গেছে বলে সাংবাদিকদের জানান। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দাবিদার ছেনুয়ারা বেগম জানান, সুপ্রীম কোর্ট যেহেতু তাকে স্থিতিশীল অবস্থার আদেশ দিয়েছেন, সে হিসেবে আমি উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। উন্নয়ন খাতে বরাদ্ধকৃত এবং এডিবির উন্নয়ন কাজ করার জন্য প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের অসহযোগীতার কারণে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারছেনা। অপর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান দাবিদার সুলতান মাহমুদ বলেন, সে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করলেও আর্থিক লেনদেনের ক্ষমতা না থাকায় উন্নয়ন কাজে হাত দিতে পারছে না।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।