কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা জুড়ে এবার ব্যাপক বোরো বাস্পার ফলন হয়েছে। কৃষকদের দীর্ঘদিনের কষ্ট ও শ্রমের অনেকটায় স্বার্থকতায় রূপ নিয়েছে। তবে এখানে কৃষকদের দুঃশ্চিন্তারও যেন শেষ নেই। ধানের বাজার মূল্য কমে যাওয়ার কারণে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চলতি বেরো চাষাবাদ সৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবারও বোরো ধানের ঈর্ষানীয় সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন কৃষকরা। উখিয়ার শত শত ঋণগ্রস্থ কৃষকরা বোরো চাষাবাদ করলেও কম মূল্যের ভারতীয় চালের সাথে এখানকার কৃষকের শরীরে ঘাম, শ্রম ও বিনিয়োগ কুলিয়ে উঠতে পারছে না। ফলে তাদের দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই।
উখিয়ার পালংখালীর কৃষক আব্দুল জব্বার, মনজুর আলম, জালিয়াপালংয়ের কৃষক আবুল কাশেম বাবুল, ছগির আহমদ, রাজাপালং মালভিটার কৃষক মোঃ ইদ্রিস, এমদাদুল হক বলেন, ক্ষেত বা ফসল ভাল হয়েছে, কাটা প্রায় শেষ, চলছে মাড়াই- শুকানো ও মজুদের কাজ। অনেক আসা বুকে নিয়ে ধার-কর্জ করে শরীরের ঘাম, শ্রম দিয়ে করা ফসরের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিয়ে বড় সংশয়ে আছি। এসব প্রান্তিক চাষীদের অনেকে বলেন, ধান কাটার সাথে সাথে স্থানীয় পাওনা ধার ও কৃষি ব্যাংকের লোকজন দেনা শোধের তাগদা দিচ্ছে। এবার প্রতি কানিতে (৪০ শতকে ১ কানি) সর্বোচ্চ ২৫-৩০ মনের বেশী ফসল হবে না। এ বছর নতুন ধান প্রতি মন ৬ শ থেকে সাড়ে ৬ শ টাকার বেশী দাম দিতে চাচ্ছে না বেপারী ও মিল মালিকরা। অথচ প্রতি কানি বোরো চাষাবাদ করতে সর্ব সাকুল্যে ১৭-১৮ হাজার টাকার বেশী খরচ পড়েছে। কিন্তু উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে প্রতি কানিতে সর্বোচ্চ ১৬-১৭ হাজার টাকার বেশী মিলছে না। এ ছাড়াও অসংখ্য কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চাষাবাদ এখন আমাদের কাছে বোঝার পরিণত হয়েছে। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে কী দেনা শোধ করব, না নিজেরা খাব, নাকি অন্য কোন খরচ মেঠাতে পারব। উখিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো চাষ মৌসুমে এখানে ৬ হাজার ২ শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। ফলন ও ভাল হয়েছে, যেটিকে বাম্পার ফলন বলা চলে। উখিয়া কৃষি অফিসার শংকর কুমার মজুমদার বলেন, সরকার কৃষকদের কাছ থেকে খোলা বাজারে প্রতি কেজি ধান ২৭ টাকা কেজি হারে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র, প্রান্তিক কৃষক বা চাষীরা তাদের স্বল্প উৎপাদিত ধান সরকারী ক্রয় কেন্দ্র বেচতে পারে না। স্থানীয় বেপারী আড়তদার বা রাইচমিল মালিকরা এসব কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে এখানে সরকারী ক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করে থাকে। তাছাড়া বেরোর ভরা মৌসুমে ও কম মূল্যের ভারতীয় চালের অবাধ বাজার জাতের ফলে কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। উখিয়ার অটোরাইচ মিল মালিক হাজী কবির আহমদ মিল মালিক হাজী আহমদ কবির, রফিক সওদাগর, ফিরোজ আহমদ সওদাগর বলেন, গত বছর স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত যে চাল প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ২৮-৩০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। সে চাল এ বছর বিক্রি হচ্ছে ২২-২৫ টাকার। তা ছাড়া নতুন চাল অধিকাংশ লোক খেতে চয় না। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষকের উৎপাদিত চালের চেয়ে ভাল মানের পুরনো ভারতীয় চাল বিক্রি হচ্ছে ২২-২৪ টাকার কেজি। তাদের মতে যে ভাবে কম মূল্যের ভারতীয় ভাল মানের চাল প্রত্যেক গুদাম বা আড়তে মজুদ রয়েছে সে গুলো পাশা-পাশি এ বছর বোরোতে উৎপাদিত নতুন ধান-চাল তেমন মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এব্যাপারে সরকারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।