উখিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠা শত শত ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগীর পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাচ্চা ও খাদ্যের দামের উর্ধ্বগতির কারণে বিনিয়োগকারী খামারীরা গুটিয়ে নিচ্ছে পোল্ট্রি ব্যবসা। ফলস্বরুপ খামার ব্যবসায় শিক্ষিত বেকার যুবক উৎসাহ নিয়ে ঝুঁকেছিল তারা আবার বেকার হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে বেকার হয়ে পড়েছেন শত শত সাধারণ মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারী।
সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এক শ্রেণীর অসাধু পোল্ট্রি শিল্প ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে বাচ্চা ও খাদ্যের দাম নির্ধারণ করেন বলে এ পরিস্থিতি সৃষ্ঠি হয়েছে বলে জানান পোষ্ট্রি খামারীরা। বাচ্চার দাম ৩ গুন এবং খাবারের দাম বস্তা প্রতি কয়েকশ’ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় পোল্ট্রি ব্যবসায় ধস নামতে শুরু করেছে বলে দাবী করেন তারা।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় দু’শতাধিক খামার রয়েছে। আর এসব খামারীরা বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কাজী, ছিপি, আগা, প্রভিটা, ব্র্যাক, নিরিবিলি, গাওছিয়া, আফতাব, নাহার ও নারিস থেকে নিয়মিত বাচ্চা সংগ্রহ করে থাকে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পোল্ট্রি ব্যবসায়ে তারা একক আধিপাত্য বিস্তার করে আসছে। একটি বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৫-২৬ টাকা হলেও বর্তমানে ডিলারদের বিক্রি করছে ৭০ টাকায়। আর দুই হাত বদল হয়ে খামারীরা কিনছে ৭৩-৭৪ টাকা পর্যন্ত।
খুনিয়া পালং এর খামারী আওয়ামীলীগ নেতা জসিম উদ্দিন ভুলু জানান- বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে খামীরারা তাদের খামার বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয়ে দাড়িয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অল্প দিনের মধ্যে সব খামার বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।
উখিয়া সদরের বিউটি পোল্ট্রি’র মো: আনোয়ার ইসলাম জানান- পোল্ট্রির বাচ্চা আগে যে দামে কিনতে হতো এখন তা দ্বিগুণ দাম হয়েছে। একইভাবে বেড়েছে মুরগির খাদ্য ও ঔষধের দামও। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি দায়ী।
স্থানীয় তসলিমা পোল্ট্রি’র ছৈয়দ হোসাইন বাবুল জানান- উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলো সংঘবদ্ধ হয়ে অভিন্ন বাজার দর নির্ধারণ করে রাখায় খামারীরা লোকসানে পড়ছে। আর এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের ওপর।
উপজেলার মরিচ্যা বাজারের র্মেসাস জি,এম পোলট্রি ফিড এন্ড মেডিসিন সেন্টারের এম, জিয়াউল করিম বাহাদুর জানান- খামারীদের ভাষ্য মতে, অধিক মূল্যে বাচ্চা কিনে লালন পালন শেষে বর্তমানে বাজার মূল্য প্রতি কেজি মুরগী ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করে উৎপাদন খরচও মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো জানান- পোল্ট্রি খামারে এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছিল। আমরা খামারীদের বাকীতেও বাচ্চা সরবরাহ করে থাকি কিন্তু খামারে লোকসানের কারণে অনেক খামার ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ফলে লোকসানের ভাগ আমাদেরও গুনতে হচ্ছে। এছাড়াও অনেক খামারী ব্যাংক, এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় অনেক খামারী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই অবস্থার থেকে পরিত্রাণে সরকারের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ছি.পি পোল্ট্রি ফিডের কক্সবাজার জেলা দায়িত্ব কর্মকর্তা ডাঃ সোহেল পোল্ট্রি খাদ্যের কথা স্বীকার করে জানান- কাচামালের মূল্য বৃদ্ধির ফলে বাজারে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে।
প্রভিটা পোল্ট্রী ফিডের কক্সবাজার জেলা দায়িত্ব কর্মকর্তা মো: রাশেদ জানান- খাদ্যের মূল্য সম্প্রতি কিছুটা কমেছে। দেশের ১৭৫টি রেজিঃ কোম্পানীর মধ্যে তাদের প্রতিষ্ঠানটি উন্নত সেবা দিয়ে থাকেন। মূল্য বৃদ্ধির বিষয় তিনি বলেন- বর্তমানে একদিন বয়সী ব্রয়লার ও লেয়ার বাচ্চার অতিরিক্ত মূল্য আর ২০১৩ সনের শুরু থেকে একই ভাবে আছে। বর্তমানে তারা হ্যাচারী মূল্য ৬৮ টাকায় একদিন বয়সী বাচ্চা বিক্রি করছে। যা খামারীদের কিনতে হয়েছে ৭১-৭২ টাকায়।
এই বিষয়ে উখিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, বর্তমানে কোন রোগের প্রকোপ না থাকার পরও পোল্ট্রি শিল্পে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। খামারীরা লোকসানের সম্মুখীন হওয়ায় পোল্ট্রি শিল্পে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন। এক ধরনের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধ অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করায় এই নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্ঠি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।