উখিয়া উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে রাত বাড়লেই সরগরম হয়ে ওঠে মাদকের বাজার। যা চলে গভীর রাত অবধি। এ বাজারের কোন নির্ধারিত স্থান না থাকলেও সমগ্র উপজেলায় যেন মাদকের বাজারে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া মাদকসেবি ও মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা চলে সারারাত বিভিন্ন অন্ধকার অলিগলিতে। এসব মাদকসেবি অধিকাংশ মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেটে আসক্ত হওয়ায় এদের দিনের বেলা সাধারণত দেখা মেলে না। রাত বাড়লেই তারা বেড়িয়ে পড়ে মাদকের সন্ধানে। আর শুধুমাত্র মাদকের কারণেই উপজেলায় বেড়ে চলেছে একের পর এক দুর্ধর্ষ চুরি ও ডাকাতির মতো ঘটনা।
সম্প্রতি উখিয়ার পাতাবাড়ি বাজারে গণডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। গভীর রাতে ১৫/২০ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল বাজারে ডুকে একের পর এক ৭টি দোকান ভেঙ্গে নগদ টাকাসহ মালামাল লুটপাট করে।
এইছাড়া উপজেলার তেলখোলা হতে অস্ত্র সহ ৫ ডাকাত আটক হয়েছে।
আর এসব ঘটনার সাথে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবিদের একটি যোগসাজশ রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। আর এতে জড়িয়ে পড়ছে সম্ভ্রান্ত পরিবারের পাশাপাশি আর্থিক অনটনে থাকা পরিবারের শিশু-কিশোররাও।
উপজেলার উখিয়া সদর, বালুখালী, কুতুপালং, পালংখালী,কোটবাজার,মরিচ্যা বৌ বাজার,স্পনার পাড়া ও গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারে এদের অবাদ বিচরণ। আর এসব মাদক ব্যবসায়ী ও সেবিদের দিয়ে ঘটছে একের পর এক দুর্ধর্ষ চুরি ও ডাকাতির ঘটনা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন বয়সের ইয়াবা আসক্তদের কাছে রাত হচ্ছে সবচেয়ে আদর্শ সময়। তাই রাতের আঁধারে মাদক গ্রহণের পাশাপাশি এসব মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ী জড়িয়ে পড়ছে নানাবিধ অপরাধের সঙ্গে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ইয়াবা সেবনকারিই আবার সেবনের পাশাপাশি ইয়াবা বিক্রির সাথেও জড়িত রয়েছে।
এসবের মধ্যে কেউ জড়াচ্ছে কৌতুহলবশত, আবার কেউ জড়াচ্ছে রোজগারের আশায়। এর প্রধান কারন বর্তমানে মাদকে ব্যাপক সহজলভ্যতা।উপজেলায় এমন কোন স্থান নেই যেখানে বিশেষ করে মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেট না পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি অবশ্য ফেন্সিডিল, গাঁজাও পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন স্থানে। বর্তমানে সবচেয়ে সহজলভ্য ইয়াবা ট্যাবলেট। এই মাদক বহনে সুবিধা হওয়ায় এর প্রতি বেশি ঝুঁকছে উঠতি বয়সী মাদক প্রেমি এবং ব্যবসায়ীরা। ফলে দিন দিন বেড়েই চলছে মাদকাসক্তের সংখ্যার পাশাপাশি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মত অপরাধ এবং এই সকল মাদকসেবীর দ্বারা প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে যা পর্যাপ্ত নয়। তবে যেসব মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে তাতেই অবশ্য বিভিন্ন মাদকসহ মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার হচ্ছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে কিছুদিনের মধ্যেই তারা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার পুরোদমে শুরু করে মাদকের বাণিজ্য। কিন্তু এরপরেও দেখা যাচ্ছেনা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। নামে যে অধিদপ্তর রয়েছে তাদের কোন তৎপরতা বা স্থানিয় পুলিশ প্রশাসনের বাড়তি কোন নজরদারি। আর এই সুযোগেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে এইসব মাদকাসক্তরা ও মাদক ব্যবসায়ীরা।
মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেটের কুফল সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলছেন, যারা নিয়মিত ইয়াবা সেবন করছে তারা ভয়ংকর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারন হিসাবে তারা উলেখ করেন, ইয়াবা সেবনে মাদকাসক্তদের সাময়িক উত্তেজনা বা সুখকর অনুভূতি হয় এবং নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়। নিয়মিত ইয়াবা সেবনে তারা এক সময় ঘুমের অপূর্ণতার কারনে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখিন হয় এবং সবচেয়ে তিকর বিষয় হচ্ছে এসব মাদকাসক্তের ধীরে ধীরে শারীরিক শক্তি বা জীবনি শক্তি হ্রাস পায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ মতা খুব দ্রুত কমে যায়। তাই তারা সামান্য অসুখেই মৃত্যুর মুখে পতিত হতে পারে।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়েরের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে এলাকার চুরি ডাকাতি মাদক সহ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে।
তবে নিরপরাধ লোকজন যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা মাথায় রেখে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এলাকার প্রকৃত চুর, ডাকাত মাদক ও ইয়াবা ব্যবসায়িদের সম্পর্কে তথ্য পুলিশের নিকট জানানোর সচেতন মহলের নিকট অনুরোধ জানান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।