২৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

গভীর বনে খাদ্য সংকট: লোকালয়ে হাতির পাল: ১৫ দিনে পিতা-পুত্রসহ তিন রোহিঙ্গার মৃত্যু

উখিয়ায় ১০ হাজার একর বন ভুমিতে রোহিঙ্গাদের বসতি

বিশেষ প্রতিবেদকঃ কক্সবাজার দক্ষিন বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের অধীস্থ ১০ হাজার একর ভুমিতে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের বসতি। কুতুপালং রেজিষ্টার্ড ক্যাম্পসহ পুরনো রোহিঙ্গা দখলে নিয়েছিল প্রায় ছয় হাজার এক বন ভুমি। এবার নতুন করে দখল করে নিয়েছে চারহাজার একর বন ভুমি। একের পর এক বন ভুমি দখল করে বন উজাড় করে স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে বনাঞ্চলে বেড়ে উঠা পশু-পাখির আভাষস্থল বিনষ্ট হচ্ছে এবং গভীর বনাঞ্চলে খাদ্য সংকট দেখা দেয়ার কারণে প্রতিনিয়িত লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতির পাল।
সোমবার রাতে হাতির পাল উখিয়ার বালুখালি এলাকায় হানা দেয়। এই ঘটনায় এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত হয়। আরও দুইজন আহত হয়। পৃথক ঘটনায় গত ১৫ দিনে বন্য হাতির আক্রমণে পিতা-পুত্রসহ তিন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়।
উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, সোমবার দিবাগত রাতে উখিয়ার বালুখালী অস্থায়ী শিবিরে বন্য হাতি তান্ডব চালিয়ে ১০টির মত রোহিঙ্গা খুপড়ি ঘর ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। এসময় মোবারেকা (১০) এক শিশু ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। নুরুল ইসলাম (৫০), তার স্ত্রী ফাতেমা (৪৫) ও আড়াই বছরের শিশু আয়েশা বেগম গুরুতর আহত হয়।
তিনি বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর কুতুপালং এর নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প মধুরছরা গুলশানপাড়ার এলাকায় এক হাতির পাল আক্রমণ চালায়। ওই সময় হাতির দল লোকজনের উপর হামলা চালায়। এই ঘটনায় পিতা-পুত্রসহ দুই জনের মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর কুতুপালং এর নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প মধুরছরা গুলশানপাড়ার এলাকায় এক হাতির পাল আক্রমণ চালায়। ওই সময় হাতির দল লোকজনের উপর হামলা চালায়। এই ঘটনায় পিতা-পুত্রসহ দুই জনের মৃত্যু হয়।
কক্সবাজার (দক্ষিণ) বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির পৃথক ভাবে রোহিঙ্গারা উখিয়া রেঞ্জের ১০ হাজার একর বন ভুমি দখলের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিদিনই নতুন নতুন পাহাড়ি জমি দখল করে ইচ্ছেমতো বস্তি তৈরি করছে রোহিঙ্গারা। অনেকেই ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করছে। অবশ্য কিছু কিছু রোহিঙ্গা বস্তি আমরা এরইমধ্যে উচ্ছেদ করেছি। পরবর্তীতে সরকার নির্ধারিত শুধু দুই হাজার একর ছাড়া সব জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সব রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় নিয়ে আসা হবে।
এদিকে উখিয়া রেঞ্জের বিভিন্ন বন বিটের সরকারি জায়গায় স্থানীয় লোকজন দখল করে বসতি গড়ে তুলে বসবাস করে আসছিল দীর্ঘ সময় ধরে। ওই সব জায়গাতেও রোহিঙ্গারা নতুন বসতি তৈরি করেছে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ লাখো মানুষের বসতি গড়ে উঠায় স্থানীয়দের দুঃখ ও আফসোসের শেষ নেই। কারণ বন বিভাগের জায়গা হলেও যুগ যুগ ধরেই তাদের দখলে ছিল এই পাহাড়ি এলাকা। প্রতিনিয়ত বন্য প্রাণী আর প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করেই তারা এতদিন সেখানে বসবাস করেছেন, অনাবাদী জমি চাষের যোগ্য করেছেন। যে জমিতে চাষ করে একসময় তারা ফসল ফলাতেন এখন সেই জমিতে লাখো রোহিঙ্গা এসে উঠেছে। ফলে কিভাবে তারা আগামীতে চলবেন তা নিয়েও চিন্তায় আছেন পুরোনো বাসিন্দারা।
উখিয়ার মধুরছড়ায় প্রায় দুই যুগ ধরে আছেন জাফর আলম। পাঁচ মেয়ে, দুই ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। জাফর আলম আফসোস করে বলেন, ‘এই মধুরছড়া আবাদ করে গোলা ভরে যেত ধানে। গোয়াল ভরা গরু ও মহিষ ছিল। রোহিঙ্গাদের বসতি সব কেড়ে নিয়েছে। আমার পাঁচ একর জমি ছিল। এখন সবখানে রোহিঙ্গাদের বসতি। এই বসতিই আমার সব কেড়ে নিয়েছে।’
সৈয়দুল করিম নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এসে শুধু বসতি নয়, গাছ গাছালি কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। পাহাড়ের মাটি কাটার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মূল ও শেকড় তুলে ফেলেছে। একের পর এক পাহাড় কেটে ন্যাড়া করছে। তাদের কাছে বনবিভাগও যেন অসহায়।
উখিয়া কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক ড. গিয়াস উদ্দিন বলেন, খাদ্য সংকট, পরিবেশ ধ্বংসের কারণে হাতির পাল লোকালয়ে হানা দেয়। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় দলছুট পুরুষ হাতি মেয়ে হাতির সঙ্গ পেতেও লোকালয়ে ছুটে আসে। তিনি পরিবেশ রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
প্রসঙ্গত: আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর তথ্য মতে গত ২ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ লাখ ৭ হাজার রোহিঙ্গা এদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের মতে, গত কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গা আসা আবারো বাড়ছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।