কক্সবাজারের মাদক অধ্যূষিত সীমান্ত জনপদ টেকনাফ, উখিয়ার ২৫টি পয়েন্ট ইয়াবা পাচারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চিহ্নিত এসব পয়েন্টে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে ইয়াবা পাচার বন্ধ ও নির্মুলে ” স্পেশাল ফোর্স ” গঠন করতে যাচ্ছে। ইয়াবার শহর টেকনাফে ২৮ এপ্রিলও উদ্ধার করা হয়েছে ৪০ কোটি টাকার ১৩ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা।এনিয়ে গত ১৫ দিনে কক্সবাজার ও চট্রগ্রামে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব,বিজিবি,কোস্টগার্ড ও পুলিশ।।আর দেরিতে হলেও এই মরণ নেশা ইয়াবার ছোবল থেকে দেশের যুব সমাজকে রক্ষা করতে অবশেষে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে মাদকবিরোধী ‘স্পেশাল ফোর্স’।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।পাশাপাশি উখিয়া,রামু লাগোয়া সীমান্ত উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির কিছু পয়েন্ট ইয়াবা ও মাদক বিরোধী ” স্পেশাল ফোর্স “এর আওতায় থাকবে। এসবেও চলবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান।
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার চিহ্নিত ২৫টি পয়েন্ট টার্গেট করে কাজ করবে এ ফোর্স। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) তত্ত্বাবধানে ওই এলাকায় ইয়াবা প্রতিরোধেই মূলত এ ফোর্স কাজ করবে। এছাড়া একই লক্ষ্যে কক্সবাজারে বিশেষ জোন গড়ার কাজও এগিয়ে চলেছ জোরালো ভাবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশে যে পরিমাণ ইয়াবা ঢুকছে, এর ৯০ শতাংশই ঢুকছে কক্সবাজারের ওই দুর্গম সীমান্তের ২৫টি পয়েন্ট দিয়ে। তাই প্রবেশপথেই ইয়াবা ঠেকানো গেলে দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে। এতে দেশের ভেতরে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মূলত এ লক্ষ্যেই ইয়াবা পাচারের চিহ্নিত ২৫ রুটে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে ওই স্পেশাল ফোর্স। ফোর্স গঠনের অনুমোদনের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশনস্ ও গোয়েন্দা) ডিআইজি সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইয়াবা তথা মাদক প্রতিরোধে স্পেশাল ফোর্স গঠনের জন্য ডিএনসি থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ও ইতিবাচক অবস্থায় আছে।
তিনি জানান, ডিএনসির সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে এ ফোর্স বা যৌথ অপারেশন ইউনিট হবে। এ স্পেশাল ফোর্স মাদকদ্রব্য পাচারের রুটগুলোতে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে।
ডিআইজি সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, কক্সবাজারে মাদকবিরোধী ‘বিশেষ জোন’ তৈরির কাজ খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এ জোন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্যের প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করা। মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে মনিটরিং, অপারেশন ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিয়ে সেখানে নিয়মিত প্রয়োজনীয় কর্মকা- চালানো হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইয়াবা তথা মাদকদ্রব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে। সেদিক থেকে ডিএনসি, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও একই নীতি মেনে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও যেহেতু দেশের ভেতরে প্রচুর চাহিদা ও সরবরাহ রয়েছে, সে কারণেই সরবরাহ বন্ধের দিকে বেশি নজর দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্পেশাল ফোর্স গঠন ও মাদকদ্রব্য পাচারবিরোধী বিশেষ জোন গড়ে তোলা হবে।
ডিএনসির গোয়েন্দা শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমার থেকে নাফ নদ হয়ে উখিয়া, টেকনাফসহ কক্সবাজারের ২৫টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে দেশে। পরে ওইসব ইয়াবা নানা কৌশলে মাদক ব্যবসায়ী চক্র সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণে কক্সবাজারের চিহ্নিত পয়েন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে ইয়াবা চালান ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, স্পেশাল ফোর্সের পাশাপাশি উৎস বন্ধের দিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ইয়াবার উৎস বন্ধের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের জন্য খুব শিগগিরই মিয়ানমারে যাবে ডিএনসির নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
ডিএনসির তথ্য মতে, মার্চ মাসে দেশব্যাপী সব বাহিনী মিলে ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৬১৯টি ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিএনসির অভিযানে জব্দ হয়েছে ৬৬ হাজার ১৮১ ট্যাবলেট। তবে শুক্রবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের কুচুবুনিয়া এলাকার একটি পানের বরজের ভেতর থেকে উদ্ধার করেছে ১২ লাখ ১০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট।দিন -দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও বাড়ানো হচ্ছে। ইয়াবা,অন্য মাদক ও চোরাচালান রোধে বিজিবি,কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীও পুলিশের ভুমিকায় অগ্রগতি হয়েছে। সীমান্ত জনপদে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে ইয়াবা সহ অন্য মাদক পাচার অনেকটা বন্ধ হবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।