মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়াপাড়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সংগঠিত হওয়া চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার হত্যাকান্ডের মামলায় সন্দেহজনক ভাবে গ্রেপ্তারকৃত রিপু বড়ুয়া ও উজ্জ্বল বড়ুয়া প্রতিজনকে ১ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বুধবার ১৬ অক্টোবর উখিয়া থানার জিআর মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাং হেলাল উদ্দিন উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। বিষয়টি কক্সবাজারের কোর্ট ইনস্পেকটর মোঃ মাহবুবর রহমান ও উখিয়া কোর্টের জিআরও মোহাম্মদ মনির নিশ্চিত করেছেন।
গত ৯ অক্টোবর বুধবার উক্ত ২ জন আসামীকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তারের পর তৎকালীন আইও উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার এ দু’জনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য উপাত্ত বের করার জন্য আদালতের কাছে ৭ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করে আবেদন করেছিলেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত বুধবার ১৬ অক্টোবর রিমান্ড আবেদন শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করেছিলেন। পরে ১০ অক্টোবর মামলাটি পিবিআই’কে কক্সবাজার জেলা পুলিশ হস্তান্তর করলে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) ইনস্পেকটর পুলক বড়ুয়াকে নতুন আইও (ইনভেস্টিগেশন অফিসার) নিয়োগ দেয়। বুধবার ১৬ অক্টোবর রিমান্ড শুনানীতে পিবিআই এর নিয়োগ করা নতুন আইও পুলক বড়ুয়া রাষ্ট্র পক্ষে অংশ নেন। আসামীদ্বয়ের পক্ষে একাধিক আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের দীর্ঘ শুনানী শেষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাং হেলাল উদ্দিন ডকুমেন্টস দেখে পরে আদেশ দেবেন বলে এজলাসে ঘোষনা দেন। পরে আদালত উভয় পক্ষের শুনানী ও ডকুমেন্টস পর্যালোচনা করে রিপু বড়ুয়া ও উজ্জ্বল বড়ুয়া প্রত্যেককে একদিন রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। আদালত মহামান্য হাইকোর্টের রিমান্ড বিষয়ক নির্দেশনা মেনে চলে রিমান্ডে আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আইওকে নির্দেশ দেন।
পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) এর ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) পুলক বড়ুয়া হচ্ছেন এ চাঞ্চল্যকর মামলার ৩ নম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও)। মামলাটি কক্সবাজার জেলা পুলিশের তত্বাবধানে থাকাবস্থায় প্রথমে উখিয়া থানার এসআই ফারুক হোসেনকে, পরে একই থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মজুমদারকে আইও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
এই ফোর মার্ডার মামলার অগ্রগতি বিষয়ে কক্সবাজার পিবিআই এর আইও ইনস্পেকটর পুলক বড়ুয়া জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মতো মামলাটির প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছি। পেশাদারিত্বের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ে মামলাটির বিষয়ে একটা ইতিবাচক ফলাফল দিতে পারবো।
প্রসংগত, উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ৪ জনকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় ২ জনকে কক্সবাজার জেলা পুলিশ গত ৯ অক্টোবর গ্রেফতার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী রিপু বড়ুয়া (২৮) ও অপরজন হলো রোমেল বড়ুয়ার পুত্র উজ্জ্বল বড়ুয়া (২৪)।
গ্রেপ্তারকৃত ২ জনই রোকেন বড়ুয়ার নিকটাত্মীয়। তারমধ্যে, রিপু বড়ুয়া হচ্ছে-প্রবাসী স্বজনহারা রোকেন বড়ুয়ার সেজ ভাই শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী এবং ফোর মার্ডারে নিহত সনী বড়ুয়ার (৬) মা। অপর আসামি হলো রোকেন বড়ুয়ার ভাগ্নি জামাই উজ্জ্বল বড়ুয়া। উজ্জ্বল বড়ুয়ার বাড়ি রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের রামকোট এলাকায় অবস্থিত। উজ্জ্বল বড়ুয়াকে গত মঙ্গলবার ৮ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তার শ্বশুরবাড়ি উখিয়া উপজেলার কুতুপালং থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময়ে রিপু বড়ুয়াকে তার স্বামীর বাড়ি পূর্ব রত্নাপালং এর বড়ুয়া পাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়ীতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাত্রে রোকন বড়ুয়ার মা সুখী বালা বড়ুয়া (৬৫), সহধর্মিণী মিলা বড়ুয়া (২৫), একমাত্র পুত্র রবিন বড়ুয়া (৫) ও ভাইজি সনি বড়ুয়া (৬)কে কে বা কারা জবাই করে হত্যা করে। এরমধ্যে, নিহত রবিন বড়ুয়া রুমখা সয়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির ছাত্র এবং সনি বড়ুয়া একই স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো।
এবিষয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ৪৭/২০১৯, যার জিআর মামলা নম্বর : ৪৭৮/২০১৯ (উখিয়া) ধারা : ফৌজদারি দন্ড বিধি : ৩০২ ও ৩৪। মামলায় নিহত মিলা বড়ুয়ার পিতা ও রোকেন বড়ুয়ার শ্বশুর শশাংক বড়ুয়া বাদী হয়েছেন। মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামী করা হয়নি, আসামী অজ্ঞাত হিসাবে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।