মিয়ানমারের আরকান রাজ্য থেকে সে দেশের সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের কাছে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালী বস্তি পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। পরিদর্শন কালে সে দেশের সেনাবাহিনী ও রাখাইন সম্প্রদায়ের মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন, হত্যা, অগ্নি-সংযোগ ও ধর্ষণের মত মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের বিভৎস বর্ণনা শুনেন সে দেশ থেকে পালিয়ে আশা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে। ১০ জন পুরুষ ও ৩০ জন নারীর নির্যাতনের কাহিনী শুনেন তিনি। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাথে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ও সফরত প্রতিনিধি দলের সাথে কথা বলার সসয় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রবেশ অধিকার দেওয়া হয়নি। পরিদর্শন শেষেও প্রেস ব্রিফিং না করে বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে বালুখালী বস্তি ত্যাগ করেন সফরত প্রতিনিধি দল।
২১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে জাতিসংঘের মানবঅধিকার বিশেষক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি উখিয়া উপজেলার বালুখালীতে গড়ে উঠা নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে এসে পৌঁছান। এ সময় তাকে স্বাগত জানান উখিয়া কুতুপালং ও টেকনাফ লেদা শরণার্থী শিবিরে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও আইওএম প্রতিনিধিরা।
এরপর তিনি উখিয়া উপজেলার বালুখালী অনিবন্ধিতরোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শকালে তিনি বস্তিতে অবস্থানরত মিয়ানমার নাগরিকদের সাথে প্রায় ২ ঘন্টা ধরে কথা বলেন। তাদের মুখ থেকে সে দেশের সেনা বাহিনী ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নির্যাতনের নানান কাহিনী শুনেন। এ সময় পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব বাকি বিল্লাহ, উখিয়া উপজেলা ভূমি কমিশনার শিবলী নোমান, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধি, আইন শৃঙ্খংখলা বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি জানতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ৪ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। পরের দিন (সোমবার) তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ মাহমুদ আলী এবং প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কুটনৈতিকদের সঙ্গে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে তিনি গত ৯ অক্টোবর থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের প্রকৃতপক্ষে ঠিক কত সংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে সে বিষয়ে জানতে চাইবেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষষ সম্পর্কেও অবহিত হবেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি।
কক্সবাজারে কর্মরত আন্তরর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) এর প্রোগ্রাম অফিসার সৈকত দাশ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে গত ৯ অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গাদের উপর কি ধরণের মানবাধিকার লঙ্গনের ঘটনা ঘটেছে-সে বিষয়টি এখানে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তিনি জেনেছেন। পরে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করবেন বলেও জানান। তিনি আজ ২২ ফেব্রুয়ারি ও আমাগীকাল ২৩ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার কুতুপালং রেজিষ্ট্রাট ও আনরেজিষ্ট্রাট এবং টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন করবেন।
এর আগে তিনি গত জানুয়ারী মাসের ১০ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত মিয়ানমারে ১২ দিন সফর করেন। তিনি সফর শেষে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।