গণতন্ত্রের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলা উন্নত দেশগুলোর গণতন্ত্র চর্চার কদর্য রূপ বেরিয়ে এসেছে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলনে। সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান এমন দেশগুলোর সর্ববৃহৎ এই ফোরামটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদলীয় এমপি নির্যাতনের শত শত অভিযোগ জমা পড়েছে। ‘ফ্রি সেক্স কান্ট্রি’ হিসেবে বিবেচিত এসব উন্নত দেশগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগে তুলে ধরা হয়েছে নারী এমপিদের যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। আইপিইউর ‘কমিটি অন দ্য হিউম্যান রাইটস অব পার্লামেন্টারিয়ান্স’ এ তথ্য জানিয়েছে।
কমিটির তথ্য মতে, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের কাছে ৪২টি দেশের ৪৫৯ জন এমপি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দিয়েছেন। এদের অধিকাংশই উন্নত দেশের সংসদগুলোর সদস্য। অভিযোগকারীদের মধ্যে আমেরিকা মহাদেশের ১৫৫ জন, এশিয়ায় ১১০ জন, আফ্রিকায় ৮৯ জন, ইউরোপে ৬৩ জন, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকায় ৩৯ জন এবং সাউদার্ন প্যাসিফিকে ৩ জন রয়েছেন। এসব এমপি নিজেদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে বলেন, তাদের অন্যায়ভাবে সংসদ থেকে বহিষ্কার ও গ্রেফতার করা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কাজ করা আইপিইউর সংশ্লিষ্ট কমিটি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
ফিলিস্তিনের এক প্রতিনিধি জানান, আমাদের দেশের এমপিদের অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে ১২ জন এমপিকে ইসরায়েলের কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সম্মেলনে আসা আফগানিস্তানের প্রতিনিধিও নিজ দেশে এমপিদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। এ সময় আইপিইউ প্রেসিডেন্ট এ ঘটনার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তথ্য মতে, যে ৪৫৯ জন এমপি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাই বিরোধী দলের। ৩৬৯ জনই বিরোধী দলের এমপি যারা বিভিন্ন সময় অন্যায়ভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া সরকারি দলেরও রয়েছেন ৯০ জন এমপি। আর স্বতন্ত্র এমপিদের মধ্যে ১১ জন বিভিন্ন কারণে হয়রানির শিকার হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া সেন্টারে এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইপিইউর ‘কমিটি অন দ্য হিউম্যান রাইটস অব পার্লামেন্টারিয়ান্সের সভাপতি আফগানিস্তানের এমপি ফউজিয়া কাফি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইপিইউ মহাসচিব মার্টিন চুংগং ও কমিটির সাবেক সভাপতি বাংলাদেশের এমপি ফজলে করিম চৌধুরী। কাফি সাংবাদিকদের কাছে দেশে দেশে এমপি নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, অনেক এমপিকে অন্যায়ভাবে এমপি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কাউকে কাউকে বিনা অপরাধে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। আবার কেউ স্বাধীনভাবে তাদের মতামত দিতে পারছেন না। ফলে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।
এদিকে এসব দেশে নারী এমপিদের হয়রানি ও নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে সংস্থাটির পৃথক ফোরাম ব্যুরো অব ওম্যান পার্লামেন্ট। ফোরামটির প্রতিনিধি ও আইপিইউর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কারিন জাবরি এ সংক্রান্ত একটি জরিপ তুলে ধরেন। এতে দেখা যায়, বিশ্বের ৮১ দশমিক ৮ শতাংশ নারী এমপি কোনো না কোনোভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার। এর মধ্যে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ নারী এমপি যৌন হয়রানি এবং ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ শারীরিকভাবে হেনস্তার শিকার হন। এদের অধিকাংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ নারী এমপিকে হত্যা, ধর্ষণ বা অপহরণের মতো গুরুতর হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অশ্লীল মন্তব্য ও আচরণ দ্বারা হয়রানির শিকার হন ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ নারী এমপি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারিন জাবরি বলেন, এটি হচ্ছে রাজনীতি এবং সংসদে অংশগ্রহণকারী নারীদের একটি চিত্র। এ প্রতিবেদন সারা দুনিয়ার সংসদগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আমরা নারীর অধিকার এবং ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে থাকি বলে বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় আলোচনা করা হলো। নারীদের প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধের জন্য ব্যুরো অব ওম্যান পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে সবাইকে এ স্টাডি প্রচার এবং বিতর্ক করার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়। আমরা আশা করি আগামীতে এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।