উখিয়া উপজেলার কুতুপালং গ্রামটি দিন দিন উন্নয়নের ডিজিটাল ছোঁয়ায় পাল্টে যেতে শুরু করেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে উখিয়া টেকনাফের সাংসদ আব্দুর রহমান বদি আলাদা ভাবে নজর দেন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কুতুপালং গ্রামটির দিকে। সাংসদের এ সুদৃষ্টির কারণে গ্রামটি পরিবর্তনের রূপ নিয়েছে। একের পর এক রাস্তা-ঘাট, স্কুল-মাদ্রাসা, মন্দির সহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে এখানকার মানুষের জীবনমান ক্রমেই বদলে যেতে বসেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ক্ষমতার ধারাবাহিকতায় একটি গোত্রভিত্তিক ও আত্মকেন্দ্রীক গোষ্টি এত দিন কুতুপালং উন্নয়ন বঞ্চিত করে আসলেও মানব দরদী সাংসদ আব্দুর রহমান বদি নির্বাচিত হলে গ্রামটিতে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। উখিয়া থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কুতুপালং গ্রামের অবস্থান। লোক সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। ৬ হাজার বড়–য়া, ৫ শতাধিক হিন্দু এবং অন্যান্ন ধর্মাবলম্বী। বাকীরা মুসলিম। জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ কৃষক, ব্যবসা বাণিজ্য, সরকারী-বেসরকারী চাকুরীজীবি ও বিদেশ প্রবাসীর বসবাস এ অঞ্চলে। কক্সবাজার টেকনাফ আরাকান সড়ক এ গ্রামকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। পশ্চিম পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, বাজার পাড়া, উত্তর পাড়া, ঘোনার পাড়া, স্বর্ণা পাহাড়, ধইল্যা ঘোনা, হাজিইম্যা রাস্তার মাথা, শৈলের ঢেবা, টিএন্ডটি, বড়–য়া পাড়া, হাঙ্গর ঘোনা, নাপিত পাড়া, চাকবনিয়া, কচু বনিয়া সহ ২০টি মহল্ল¬া বা পাড়া রয়েছে। আয়তন প্রায় ৪ কিলোমিটার। এর উত্তরে ওয়ালাপালং দরগাহবিল গ্রাম, পূর্বে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আজু খাইয়া গ্রাম, পশ্চিমে পাহাড়, শিক্ষা দীক্ষায় এ গ্রামের মানুষ পিছিয়ে নেই। বর্তমানে শতকরা ৭০ ভাগ নারী-পুরুষ অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। ধর্মীয় প্রতিষ্টান মসজিদ, মন্দির, ক্যাং সহ ২০ টি শিক্ষা প্রতিষ্টান রয়েছে। তৎমধ্যে ১টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি হাফেজিয়া মাদ্রাসা, ১টি হেফজ খানা, ৩টি মসজিদ, ৩টি বৌদ্ধ মন্দির, এনজিও পরিচালিত ১০টি শিশু শিক্ষা স্কুল রয়েছে। শিক্ষা দীক্ষায় যেমন এ গ্রামের মানুষ অগ্রগামী তেমনি সংস্কৃতির দিক দিয়ে এতদঞ্চলের মানুষ আরও বেশি অগ্রসর, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্টানে এখানকার মুসলিম ও বড়–য়ারা যৌথ ভাবে যেকোন অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। জাতিগত দিক দিয়ে ভেদাভেদ থাকলেও এরা একে অপরের সুখ দুঃখের চির সাথী। তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রতিবছর এখানে চলে নাটক, পালাগান, যাত্রাগান, জারিগান, কবিতা পাঠ ও পুঁথি পাঠের আসর। যার কারণে সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে জেলায় কুতুপালং গ্রামের সুখ্যাতি আছে। পৌরানীক কাহিনী থেকে জানা যায়, ১৬ শ সালের দিকে কুতুপালং গ্রামে প্রথমে বসতী গড়ে উঠে। তৎকালীন মগ সম্প্রদায় আরাকান থেকে এসে কুতুপালং আবাদ করে বসতী স্থাপন করেন। ১৭ শ সালের দিকে কুমিল্ল¬া জেলা থেকে ধর্নাঢ্য পরিবারের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী একই পরিবারের ৫জন ভাই এসে কুতুপালংয়ে বসতী স্থাপন করেন। এর পর থেকে বৌদ্ধদের বংশ পরস্পরায় বিস্তার লাভ করে। কুতুপালং এলাকার ধর্নাঢ্য প্রভাবশালী সাবেক ইউপি মেম্বার বখতিয়ার আহমদ বলেন, ১৮ শ সালের ১ম দিকে অজ্ঞাত এলাকা থেকে জনৈক আধ্যাত্বিক সুফি সাধক কুতুপালংয়ের বর্তমান উত্তর জামে মসজিদের দক্ষিণের বেতবন এলাকায় এসে ধ্যানে মগ্ন হন। তার নাম ছিল কতুব আওলিয়া। তিনি যে বেতবনে অবস্থান করতেন সে বেতবনে একটি অলৌকিক পালংয়ে (খাটে) ধ্যানে মগ্ন হতেন। এর পর থেকে স্থানীয় লোকজন কুতুব আওলিয়ার কুতুব এবং অলৌকিক পালং থেকে পালং সংযোজন করে গ্রামের নাম কুতুপালং নামকরণ করেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, এ এলাকায় যুগে যুগে যারা নেতৃত্ব দিয়ে সমাজ আলোক বর্তিকা প্রজ্বলন করে গেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, প্রয়াত ক্ষেমানন্দ বড়–য়া,। তিনি দক্ষিণ কক্সবাজার অঞ্চল থেকে ১ম কলকাতা থেকে গোল্ড মেডেল নিয়ে গ্রেজুয়েশন প্রাপ্ত। দেখা যায়, পাহাড়, খাল, বনভুমি সমৃদ্ধ এ গ্রামটি দক্ষিণ কক্সবাজারের একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম কুতুপালং। এখানে জেলার প্রসিদ্ধ জলাশয় মাছকারিয়া মাছের জন্য বিখ্যাত ও ধান উৎপাদনকারী স্থান হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে কুতুপালং গ্রামটির।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।