করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। রোববার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, পরীক্ষা আপাতত স্থগিত করা হলেও আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার পরবর্তী তারিখ জানানো হবে।
জানা গেছে, শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা করে পরীক্ষা পেছানের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। রোববার মন্ত্রণালয়ে সে প্রস্তাব পাঠালে তার ভিত্তিতে এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইতোমধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক স্থগিত হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র চলমান বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করেছে সব শিক্ষা বোর্ড। এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা শনিবার বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক রোববার জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজন করাটা সম্ভব নয় বলে পরীক্ষা স্থগিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ পরীক্ষা স্থগিত রাখা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিন পর পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এ বিষয়ে সভা করে এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে পরবর্তী পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, করোনাভাইরাসের জন্য এইচএসসি পরীক্ষা ১ এপ্রিল শুরু না করে এটি ঈদুল ফিতরের পর আয়োজন করার প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। এরপর সুবিধামতো সময়ে এ পরীক্ষা আয়োজন করা যেতে পারে। তবে শিক্ষার্থীরা যাতে সেশনজটে না পড়ে, সেটি মাথায় রেখে এইচএসসি পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি প্রকাশ করা হবে।
গত শনিবারই (২১ মার্চ) আন্তঃজেলা শিক্ষাবোর্ড ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের সব শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান সভা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম আমিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরণ স্থগিতকরেছে দেশের সব শিক্ষাবোর্ড।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। এতে সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত তিন লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় ৯৬ হাজার মানুষ।
বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিন দিন এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। সবশেষ হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত ২৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন দুজন।
করোনার বিস্তাররোধে এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর। চারটি দেশ ও অঞ্চল ছাড়া সব দেশ থেকেই যাত্রী আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মুলতবি করা হয়েছে জামিন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ছাড়া নিম্ন আদালতের বিচারিক কাজ। এমনকি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে লকডাউনও ঘোষণা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। ৪ মে পর্যন্ত তত্ত্বীয় পরীক্ষা আয়োজনের সময়জুড়ে দেয়া হয়। এরপর ৫ মে ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়ে ১৩ মে পর্যন্ত আয়োজন করতে বলা হয়েছিল। সারাদেশের প্রায় ১২ লাখ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।