সম্প্রতিক সময়ে প্রায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, জেলা হাইওয়ে ও আন্তঃ জেলা সড়কে রাত্রি কালীন সময়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে লোহার রড, নাট-বল্টু বা বিশেষ কোন যন্ত্রের মাধ্যমে গাড়ীর সামনে বা পিছনে আওয়াজ বা শব্দ করলে চালক মনে করে গাড়ির যন্ত্রপাতি পড়ে গেছে বা গাড়ি বিকল হয়ে পড়েছে। তখন গাড়ি থামানোর সাথে সাথে দূস্কৃতকারি ডাকাত/ছিনতাইকারিরা রাস্তায় ঘেরাও করে যাত্রি ও চালককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করতঃ মারধর করে সর্বস্ব লুন্ঠন করে নিয়ে যায়। সম্পত্তি রক্ষা করার চেষ্টা কালে যাত্রী ও চালক আহত নিহত হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই পত্রিকার শিরোনাম।
## রাস্তায় গাড়িতে শব্দ বা আওয়াজ হলে তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি না থামিয়ে কিছু দূরে আলো/বাজার/পেট্রোল পাম্প বা জন সমাগমাস্থলে গাড়ি দাঁড় করান। ভাল করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গাড়ি সচল করুন। গাড়ি চালানোর পূর্বে ভাল করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গাড়ি ড্রাইভ করা সর্বোত্তম।
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দূস্কৃতকারি কর্তৃক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার নতুন কৌশল অবলম্বন করতেছে। রাস্তার দুপাশে বা ব্রীজের উপর সুতা/দড়ি/তাঁর বেঁধে রাস্তায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেছে। হঠাৎ করে যখন মোটরসাইকেল তথায় আসে, তখন চালক কিছু বুঝে উঠার আগেই সুতা বা তাঁরের সাথে আটকা পড়ে এবং গাড়ি থেকে পড়ে যায়। তখন দূস্কৃতকারিরা মোটরসাইকেল সহ সম্পত্তি লুটপাট করে। মোটরসাইকেল আরোহী রাস্তায় পড়ে মারাত্মকভাবে আহত/নিহত হয়। অনেক সময় দূস্কৃতকারি কর্তৃক আরোহীকে আহত-নিহত করার ঘটনাও অহরহর।
মোটরসাইকেল আরোহী রাত্রি কালীন রাস্তার বাম পাশে গাড়ি চালানোর সময় ওতপেতে থাকা দূস্কৃতকারি কর্তৃক গাড়ির চাকায় লোহার রড় দিয়ে দূর্ঘটনা ঘটায়। তখন দূস্কৃতকারিরা মোটরসাইকেল সহ অর্থ সম্পদ লুন্ঠন করে নিয়ে যায়।
## যতদূর সম্ভব রাত্রি কালীন মোটরসাইকেল না চালানোই উত্তম। বাট প্রয়োজন মানে না কোন বিপত্তি। রাত্রি কালীন মোটরসাইকেল চালানোর সময় অধিক সতর্কতা অবলম্বন করুন। ঝাপসা গ্লাসের হেলমেট ব্যবহার করবেন না, ভাল মানের হেলমেট ব্যবহার করুন। সামনের দিকে গভীর সুদৃষ্টি রাখুন। হঠাৎ দড়ি/সুতা/তাঁরে আটকা পড়লে দৃঢ়তার সহিত গাড়ি কন্ট্রোল করুন। রাত্রি কালীন গাড়ি চালানোর সময় নির্ধারিত রাস্তার মাঝখানে গাড়ি চালানো উত্তম। তাতে রাস্তার পাশে ওতপেতে থাকা দূস্কৃতকারি ও গাড়ির যথেষ্ট দূরত্ব থাকে। বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন। যে কোন বিরূপ পরিস্থিতিতে আত্নরক্ষার কৌশল অবলম্বন করুন।
রাস্তায় চলার পথে প্রায় দেখা যায় কিছু সুন্দর ও ভাল মানের প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, হাইচ রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে, যেন মনে হচ্ছে অল্প সময়ে আরামদায়ক ভাবে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। গাড়ির ভিতরের যাত্রিবেসে অল্প কয়েকজন লোক থাকবে, তাদের কথা আচরণ এমনই হবে যে তারাও যেন যাত্রি। কিন্তু না, তারাই দূস্কৃতকারি চক্র। কিছুদূর যেতে না যেতে হঠাৎ করে আপনার উপর আক্রমণ করে বসবে। আপনার মোবাইল, মানি ব্যাগ, টাকা পয়সা লুটপাট করে করবে। এমন ঘটনার নজির হাজার হাজার। বাট আমরা তারপরও একই ভুল করে থাকি।
## অপরিচিত প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে চলাচল থেকে বিরত থাকুন। সুন্দর ও সখিন গাড়ি দেখে এবং গাড়ির ড্রাইভারের সুন্দর আচরণে মুগ্ধ হয়ে ভুল করেও এমন গাড়িতে উঠবেন না। এগুলো দূস্কৃতকারি চক্রের অপকৌশল মাত্র। আপনার সরলতাকে কাজে লাগিয়ে অপরাধীরা অপরাধ কার্য সিদ্ধ করে। আপনার সচেতনতাই আপনাকে যে কোন ধরনের দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করবে।
কোন এক নির্জন জায়গা, পরিবার নিয়ে বা একা গাড়ি ড্রাইভ করছেন অথবা ভাড়া গাড়িতে চড়ছেন। এমন সময় হঠাৎ এমন পরিস্থিতি দেখবেন, যেমন কোন অসহায় শিশু, বৃদ্ধ বা রক্তমাখা মানুষ যেন কোন বড় ধরনের বিপদে পড়েছে, বা এমন কোন সুন্দর স্মার্ট মেয়ে যেন কেউ দৌড়াচ্ছে তাকে, এমন বিপদে তারা আপনার নিকট সাহায্য প্রাথী!!। এমন সময় আপনি কিছু বুঝে উঠার আগেই সাহায্যপ্রার্থীর সমস্যা নিয়ে একেবারে অস্থির হয়ে পড়লেন। অথবা একজন লোক সামনে এসে বললো ভাই আমার মা বাবা/ ভাই বোন অনেক বড় বিপদে আছে, একটু হেল্প করেন। একটু সামনে চলেন। আপনার সরলতা ও উদারতাকে পূঁজি করে তখন অপরাধীরা সুকৌশলে আপনার এবং আপনার সাথে থাকা অন্যান্য সদস্যদের সম্মানহানি করবে, মারধর করবে, টাকা পয়সা অর্থ সম্পদ লুটপাট করবে। আহত নিহত করবে। আপনি ও আপনার পরিবার অপূরনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
## আমাদেরকে অবশ্যই মানবিকতার বিষয়ে সর্বোচ্চ বিবেচনা করতে হবে। অন্যর বিপদে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আসলে সেটা কোন বিপদ কিনা?? নাকি কোন অপরাধ সংঘটন করার কৌশল মাত্র সেটা বিচক্ষণতার সহিত বিবেচনা করতে হবে। এমন বিপর্যয় পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবণ করতে হবে। প্রয়োজনে সাথে সাথে পুলিশ কন্ট্রোলরুম, ডিউটি অফিসার বা থানার অফিসার ইনচার্জকে অবহিত করুন।
## যাত্রাকালে দূর্ঘটনায় পতিত হলে তাৎক্ষনিকভাবে জাতীয় জরুরী সেবা-৯৯৯ বা জেলা কন্ট্রোলরুম অথবা সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ বা ডিউটি অফিসারকে সরাসরি কল করুন।
সকলের যাত্রা হোক নিরাপদ ও আনন্দময়।
সবার জন্য রইল শুভ কামনা।
মহান আল্লাহ সবাইকে ভাল রাখুক, সুস্থ রাখুক, নিরাপদ হেফাজতে রাখুক।
# জনসচেতনতার লক্ষে বার্তাটি বেশি বেশি করে শেয়ার করুন।
লেখক-
শেখ নজরুল ইসলাম,
সহকারি উপ পরিদর্শক, ফেনী।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।