আনছার হোসেন:
‘করোনা’ নামের এক অদেখা ভাইরাসের ভয়ে সবাই যখন ঘরবন্দি, চিকিৎসকরাও যখন তাদের চেম্বার বন্ধ করে দিয়ে ঘরের মাঝেই নিজেদের নিরাপদ ভাবছেন, তখনও একজন মানুষ আছেন যিনি ব্যতিক্রম। তিনিও একজন চিকিৎসক, সাথে মনে-প্রাণে একজন সমাজকর্মী। যিনি এই দূর্যোগে অসুস্থতা নিয়ে দিশেহারা মানুষদের পথের দিশা দিচ্ছেন!
তিনি একজন নাসির উদ্দিন, ডা. নাসির উদ্দিন চৌধুরী। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের নেতা। উখিয়ার পূর্ব মরিচ্যা সিকদার বাড়ির চৌধুরী পরিবারের এই সন্তান নিজের জীবন সংশয়ের কথা ভুলে প্রতিদিন তার চেম্বারে বসে ৭০ থেকে ১০০ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে চলেছেন। তাও আবার কোন ফি ছাড়াই।
তিনি আবার সরকারি নির্দেশনাও অমান্য করছেন না। করোনার এই সময়ে স্বাস্থ্য নির্দেশনা মতো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
চিকিৎসা সেবা দিয়েই ডা. নাসির উদ্দিন চৌধুরী বসে নেই। তিনি করোনার এই দূর্যোগে সহায় সম্বলহীন, অসহায়, দুস্থ মানুষের পাশেও এসে দাঁড়িয়েছেন।
‘সমাজ সেবা’ করতে গেলে ইদানিং কোন না কোন ব্যানারে দাঁড়াতে হয়। তিনিও একটি ব্যানারে দাঁড়িয়ে সেবা দিচ্ছেন। আর সেই ব্যানারটি হলো ‘রাবেয়া আলী ফাউন্ডেশন’। নিজের বাবা আর মায়ের নামে গড়া এই ফাউন্ডেশন থেকেই এই রমজান ও করোনা দূর্যোগে অন্তত দুইশত পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন। তার সহায়তা থেকে বাদ যাননি সাংবাদিকরাও। কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের পাশাপাশি করোনায় সংকটে পড়া সাংবাদিকদের জন্যও তিনি হাত বাড়িয়েছেন।
এই সেবা দিতে গিয়ে কখনও কখনও তিনি রাজনৈতিক ব্যানারটাকেও কাছে টেনেছেন। জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের হয়েও সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের ঘরে ঘরে।
দূর্যোগের এই সময়ে ডা. নাসির উদ্দিন প্রথম ধাপে নিজের তহবিল থেকে দুইশত পরিবারে ত্রাণ পৌছে দেন। পরে তাঁতী দলের হয়ে রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়ন ও কাউয়ারখোপ ইউনিয়নেও অসহায় মানুষদের দুয়ারে দুয়ারে সহায়তা পৌঁছিয়েছেন।
কক্সবাজার, রামু ও উখিয়া উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের হাতেও তুলে দিতে পেরেছেন খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা।
ডা. নাসির উদ্দিন চৌধুরী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা জগতে একটি প্রতিষ্টিত নাম। তিনি রামু সদরের রমিজ কমপ্লেক্সের ‘বিহারী হোমিও হলে’র নিজের চেম্বারের রোগীদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের সংগঠন ডিএইচএমএস ডক্টরস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখা ও কক্সবাজার হোমিওপ্যাথিক ডক্টরস সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হোমিওপ্যাথি (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকও তিনি।
এই পেশাগত গন্ডির বাইরে এসে তিনি প্রতিষ্টা করেছেন রাবেয়া আলী ফাউন্ডেশন। তিনিই ওই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্টাতা চেয়ারম্যান। মা রাবেয়া বসরী আর বাবা মরহুম চেহের আলী সিকদারের নামেই এই ফাউন্ডেশন। এটি কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্টান নয়। শুধুমাত্র মানুষের সেবা করতেই ডা. নাসির উদ্দিন এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্টা করেছেন।
তিনি একজন প্রতিষ্টিত ও স্বনামধন্য পরিবারের সন্তান। তার দাদা ছিলেন আশরাফ জামান সিকদার। তারা ৫ ভাই ও ৪ বোন। এক বোন সবার বড় হলেও ভাইদের মধ্যে তিনিই বড়।
তার ছোট ভাই জসিম উদ্দিন চৌধুরী একজন প্রতিষ্টিত ব্যবসায়ী। ভাই ভাই স্টোর ও লাইব্রেরীর মালিক। আরেক ভাই গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীও কক্সবাজার শহরের প্রতিষ্টিত ব্যবসায়ী। ওই ভাই ঢাকা হোটেল ও রেস্তোঁরা এবং ক্যাফে স্বাদের মালিক। ভাই ডা. জয়নাল আবেদীন চৌধুরী একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। তিনি উখিয়ার মরিচ্যা বাজারের চৌধুরী হোমিও হলে বসেন। এছাড়াও আরেক ভাই তাজ উদ্দিন চৌধুরীও একজন ব্যবসায়ী।
ডা. নাসির উদ্দিন চৌধুরী উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পূর্ব মরিচ্যা গ্রামের সিকদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ তার জন্ম।
১৯৯৬ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে তিনি চট্টগ্রাম ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ‘ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারী (ডিএইচএমএস)’ ডিগ্রী অর্জন করেন।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা জগতে ডা. নাসির উদ্দিন চৌধুরীর গুরু ছিলেন ডা. আবু বকর ওরফে বিহারী ডাক্তার। যিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সেবা কক্সবাজার জেলায় প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।