অতিবড় ভক্তও মানেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে টাইগারদের সামনে প্রায় মুর্তিমান আতঙ্ক হয়েছিলেন আফগানরা বোলাররা। বিশেষ করে মুজিবুর রহমান আর রশিদ খান- এই দুই স্পিনারের বোলিংয়ের বিপক্ষে রীতিমত জুজুর ভয়ে ভীত ছিলেন টাইগাররা। ১৫ সেপ্টেম্বর শেরে বাংলায় প্রথম ম্যাচে দুই আফগান স্পিন ‘মিসাইল’ মুজিবুর রহমান (৪/১৫) আর রশিদ খানের (২/২৭) স্পিন ভেলকিতে কুপোকাত হয়েছে সাকিবের দল।
২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ফিরতি লড়াইয়ের আগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সাহসের ‘বড়ি’ খাইয়েছেন জিস্বাবুয়ান অধিনায়ক- ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ২০ সেপ্টেম্বর বন্দর নগরীতে আফগানদের বিপক্ষে, বিশেষ করে দুই স্পিন ট্রাম্পকার্ড মুজিবুর রহমান-রশিদ খানকে অনায়াসে খেলে জিম্বাবুয়েকে জয়ের স্বাদ উপহার দেন মাসাকাদজা। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন আফগানরা অতিমানব নন। তাদের বল ‘আনপ্লেয়েবল’ নয়।
মাসাকাদজা দেখিয়ে দিলেন বোলারের নামের দিকে না তাকিয়ে তাদের বলের মেধা ও গুনাগুন বিচার করে খেলাই প্রথম কাজ। সে সাথে উচ্চাভিলাসি-অপ্রয়োজনীয় শট না খেলে ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধি খাটিয়ে খেললেই খেলে ফেলা যায়।
২১ সেপ্টেম্বর জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক মাসাদকাজদার পথে হেঁটেই দলকে জিতিয়েছেন টাইগার ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান। তার ব্যাট থেকে আসা ৭০ রানের (৪৫ বলে) হার না মানা ইনিংসেই হয়েছে রক্ষা। না হয় ম্যাচের যা চালচিত্র ছিল, তাতে সাকিব একদিক আগলে রাখার পাশাপাশি ১৫৫.৫৫ স্ট্রাইকরেটে ম্যাচ জেতানো ইনিংসটা না খেললে বাংলাদেশ ১৩৯ রানের মামুলি টার্গেটও ছুঁতে পারতো কিনা সন্দেহ।
এখন প্রশ্ন হলো, সাকিব কি প্রতিবারই আফগানদের বিপক্ষে এমন ম্যাচ জেতানো ব্যাটিং করবেন? তিনি তো আর অতিমানব নন। তার পক্ষে প্রতিদিন ভাল খেলা সম্ভব নয়। অন্যদের এগিয়ে আসতে হবে। ভাল খেলা জরুরি। অন্যরা, বিশেষ করে টপ অর্ডার বা দুই ওপেনারের অন্তত একজন ভাল না খেললে আফগানদের বিপক্ষে ফাইনাল জেতা কঠিন।
মোটকথা, টপঅর্ডারে রান দরকার, শুধু সাকিবের দিকে চেয়ে থাকলে হবে না, ওপেনারদেরও রান করতে হবে। শুধু আফগানিস্তানের বিপক্ষেই নয়, পরিসংখ্যান পরিষ্কার সাক্ষী দিচ্ছে পুরো আসরে একটি ম্যাচ কোন খেলাতেই বাংলাদেশের ওপেনাররা রান করেননি।
shakib-al-hasan
উদ্বোধনী জুটি ৫ ওভারও পুরো টিকতে পারেনি। শুধুমাত্র জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ফিরতি লড়াইয়ে লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্ত প্রথম উইকেটে ৫.৫ ওভারে ৪৯ রানের জুটি গড়েছেন। এছাড়া বাকি তিন খেলার একটিতেও শুরুটা ভাল হয়নি।
প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গেছে ২৬ রানে (২.৬ ওভারে)। ওই ম্যাচে ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে’তে টাইগারদের রান ছিল ৪ উইকেটে ৪১। আর ইনিংসের অর্ধেক যেতেই (১০ ওভারে) টাইগাররা ৬৫ রানে খুইয়ে বসে ৬ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে শূন্য রানে ভাঙ্গে উদ্বোধনী জুটি। ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে’তে ৪ উইকেট খোয়া যায় ৩৮ রানে। আর ১০ ওভারে রান ছিল ৪ উইকেটে ৫৯।
১৮ সেপ্টেম্বর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের সাথেই শুধু ওপেনিং ভাল হয়েছিল। ওই ম্যাচে লিটন আর নাজমুল হোসেন শান্ত ৫.৫ ওভারে তুলে দিয়েছিলেন ৪৯ রান। ওই ম্যাচে পাওয়ার প্লে’তে ছিল ২ উইকেটে ৫৫। আর ১০ ওভার শেষে ৩ উইকেটে সাকিব বাহিনীর রান ছিল ৮৩।
শেষ ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে আবার শুরুতেই উইকেটের পতন। ২.২ ওভারে ৯ রানে ভাঙ্গে ওপেনিং জুটি। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ২৮। আর ১০ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৬২। এটাই শেষ নয়।
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বাংলাদেশের ওপেনাররাও ফর্মে নেই। লিটন দাস এক ম্যাচে ৩৮ করলেও বাকি তিন ম্যাচে (১৯+০+৪) রান পাননি। আর সৌম্য সরকার ২ ম্যাচে (এক ম্যাচে অবশ্য ওপেন করেননি) ৪ রান করার পর বাদ পড়েছেন। আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর অবস্থাও ‘তথৈবচ।’ তার ব্যাটেও রান নেই। তিনি দুই ম্যাচে করেছেন মোটে (১১+৫) = ১৬ রান।
কাজেই ওপরের দিকে, মানে ওপেনারদের ব্যাটে রান চাই। একদিন সাকিব তিন নম্বরে নেমে আর অন্য দু’ম্যাচে আফিফ আট নম্বরে নেমে (৫২) আর মাহমুদউল্লাহ ৬ নম্বরে খেলে ৪১ বলে ৬২ রান করে দল জিতিয়েছেন।
বাকিরা সবাই ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দিয়েছেন। ফাইনালে সে ব্যর্থতার মিছিল বড় করা যাবে না। ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। সবার আগে দরকার ওপেনারদের ভাল খেলা। তাদের রান করা। লিটন-নাজমুলরা কি তা পারবেন?
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।