বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সরকারি কলেজের পেছনে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে সংঘটিত একটি ঘটনার ৫ দিনব্যাপী হলেও ঘটনাটি সম্পর্কে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। ঘটনায় শিকার এক স্কুল ছাত্রী এখনো গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধিন রয়েছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টেপ ক্রাইসিস সেন্টারে। ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ পুলিশ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তবে ঘটনাটিকে একটি পক্ষ সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের চেষ্ট বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণার পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের নানাভাবে তথ্য প্রদান করছেন। এমন কি কক্সবাজার সদর থানায় দায়ের করা একটি এজাহারের কপিও সরবরাহ করা হচ্ছে। এই এজাহারের কপিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে ৯৯৯ ফোন করে উদ্ধার এবং উদ্ধার পরবর্তী কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টেপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি রয়েছে এমন কথা উল্লেখ রয়েছে।
এজাহারে এক রোহিঙ্গাসহ দুই যুবক, তাদের সহয়তাকারি ৩ নারীসহ মোট ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ২/৩জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
কিন্তু কক্সবাজার সদর মডেল থানার দায়িত্বরত ওসি (তদন্ত) সেলিম উদ্দীন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন, ধর্ষণের চেষ্টার কোন এজাহার তিনি পাননি। সদর মডেল থানায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মারামারি হয়েছে বলে মুহুরীপাড়ার এক নারী বাদী হয়ে একটি এজাহার জমা দেয়া হয়েছে। এজাহারের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর যা পাওয়া যাবে সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঝিলংজা ইউনিয়নের মুহুরীপাড়া ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কুদরত উল্লাহ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটনাটি সম্পর্কে বলেন, যে নারী বাদী হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন; ওই নারী সঙ্গে এজাহারে উল্লেখিত আরেক নারী আসামী হিসেবে উল্লেখিত লায়লা নামের এক নারীর সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধের জের ধরে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তবে সেটি ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা নয়।
বিষয়টি নিয়ে মামলার বাদী ওই ছাত্রীর মা (আপাতত নাম পরিচয় গোপন রাখা হল) বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারী রাত ৮ টার দিকে বাড়ী থেকে অল্প দূরের প্রতিবেশী এক নারীকে ডাকতে তার ষষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েকে পাঠান। পথিমধ্যে এক খালি জায়গায় লাইলা বেগমের বাড়ীর লোকজন শ্রমিকদের দিয়ে মাটি কাটছিল। এসময় মো. ইরফান ও ছানা উল্লাহ নামের দুই ব্যক্তি তার মেয়েকে নাম ধরে ডেকে কাছে নিয়ে যায়।
“ এক পর্যায়ে ইরফান ও ছানা উল্লাহ আেমার মেয়ের গায়ে হাত দেয়। পরে আমার মেয়েকে তারা ববুকে টেনে নিতে চাইলে শোর-চিৎকার করে। মেয়ের চিৎকার শোনে বাড়ী থেকে বের হয়ে সেখানে গেলে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পাই। এসময় মেয়ে অজ্ঞান কেন জানতে চাইলে ৩/৪ জন মহিলা এসে আমাকে মারধর শুরু করে। “
তিনি বলেন, “ ঘটনার পর ৯৯৯ ফোন করে অভিযোগ করি। এরপর ঘটনাস্থলে কক্সবাজার সদর থানার এসআই রাসেলসহ পুলিশের একটি পেঁৗছে। তখন পুলিশের পরামর্শে আমার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করি। ওইদিন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছানা উল্লাহ নামের একজনকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়। “
“ আমার মেয়েকে চিকিৎসকরা হাসাপাতালের ওসিসি’তে ভর্তি করেন। পরদিন চিকিৎসকরা আমার মেয়েকে ছাড়পত্র দেন। বাড়ীতে আসার পর ওইদিন রাত থেকে আমার মেয়ের ব্লিডিং শুরু হয়। পরদিন (২১ ফেব্রুয়ারী) সকালে আমার মেয়েকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি। সে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে। “
ভূক্তভোগী মা বলেন, ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গত ২১ ফেব্রুয়ারী তিনি সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। কিন্তু এজাহার দায়ের করার দুইদিন পরও পুলিশ মামলা নথিভূক্ত করেনি। এ নিয়ে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) থানায় গিয়ে এজাহারের বিষয় কি ব্যবস্থায় নেওয়া হয়েছে পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম উদ্দিনের কাছে জানতে চান।
“ তখন ওসি (তদন্ত) এজাহারটি বের করে জানান অভিযোগটি মিথ্যা। উল্টো মেয়ের নামের মিথ্যা রটিয়ে কেন মামলার চেষ্টা করছেন জানিয়ে তিনি হুমকি দেন। “
তিনি বলেন, “ ঘটনার সময় আমার মেয়ে অজ্ঞাত অবস্থায় ছিল। তার সঙ্গে কি ঘটেছে তা আমি নিশ্চিত নই। তাই ব্লিডিং কেন হচ্ছে, মারধর করা হয়েছে; এসব বিষয় উল্লেখ করে থানায় ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে এজাহার দায়ের করেছি। “
এ ব্যাপারে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক সত্য উধগাটনের জন্য দাবি জানান ভূক্তভোগী ছাত্রীর মা।
এবার প্রশ্ন উঠেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে কক্সবাজার সরকারি কলেজের পেছনে আসলে কি হয়েছিল? ঘটনাটি ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারকারি বা বাদির বক্তব্য সত্যি নাকি পুলিশের বক্তব্য সত্য। জনপ্রতিনিধির ভিন্ন কথা বলার কারণ বা কি। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো এজাহারে ধর্ষণের চেষ্টা বলা হলেও পুলিশ মারামারি বলার কারণ কি?
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।