বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে নকশা বর্হিভূত বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির অভিযোগ উঠেছে ওয়াল্ড বীচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। উক্ত স্থানে ইতোমধ্যে অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বাস কাউন্টার, দুইটি স্টীলের সিঁড়ি, রেষ্টুরেন্ট, অফিস, ড্রাইভওয়েতে দোকান নির্মাণসহ অনেক স্থাপনা। এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে নকশায় দেখানো পুরো গাড়ি পার্কিয়ের জায়গা নেই বললেই চলে। ফলে বহুতল ভবনের সংশ্লিষ্ট অসংখ্য যানবাহন বর্তমানে পার্কিং হচ্ছে প্রধান সড়কে। এতে করে একদিকে যেমন পর্যটন শহরের সৌন্দযর্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। পাশাপাশি ওই স্থানে হরদম লেগে রয়েছে দুর্ঘটনা।
বিষয় লক্ষ্য করতে পেরে এবং পর্যটকসহ স্থানীয়দের সুবিধার কথা চিন্তা করে হোটেল ওয়াল্ড বীচ রিসোর্ট এর নকশা বর্হিভূত বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর পক্ষ থেকে গত ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর অথরাইজড অফিসার স্বাক্ষরিত “অনুমোদিত নকশার বিচ্যুতি সম্পর্কিত কারণ দর্শানোর নোটিশ” দেয়া হয় ওয়াল্ড বীচ রিসোর্টের হাজী দেলোয়ার হোসেন ও মঞ্জুর আলমকে। উক্ত নোটিশে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার ৭টি বিষয় উল্লেখ করেন। যা হলো যথাক্রমে ওয়াল্ড বীচ রির্সোটের অনুমতিপত্রে বাণিজ্যিক ও নকশায় আবাসিক উল্লেখ আছে যা সাংঘর্ষিক, ড্রাইভারদের জন্য ওয়ের্টিং রুম ও টয়লেট নকশায় দেখানো হলেও বাস্তবে তা নেই, বাইরের দিকে দুইটি ষ্টীলের সিঁড়ি থাকলেও নকশায় এর কোন অস্থিত্ব নেই, সিঁড়ি ও লিফট এর অবস্থান পরিবর্তন করা হয়েছে, নকশায় যেখানে রেঁস্তোরা এবং শপ দেখানো হয়েছে বাস্তবে সেখানে নেই, তাছাড়া রির্সোটের নীচতলায় দুইটি অফিস থাকলেও নকশায় এর কোন অস্থিত্ব নেই, নকশায় যেখানে ড্রাইভওয়ে ও পার্কিং দেখানো হয়েছে বাস্তবে সেখানে রয়েছে দোকান। এরপর গত ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একই অথরাইজড অফিসার রিসাদ উন নবী স্বাক্ষরিত একটি চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয় ওয়াল্ড বীচ রির্সোট কর্তৃপক্ষকে। সেই নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছিল ৭ (সাত) দিনের মধ্যে নকশায় ব্যত্যয়/ব্যতিক্রম অংশ ভেঙ্গে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় কউক এর পক্ষ থেকে তা অপসারণ করা হবে। এরপর গত ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর ওয়াল্ড বীচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী দেলোয়ার হোসেন সেই নোটিশের জবাব দেন। সেখানে তিনি কউক কর্তৃক নকশা বর্হি:ভূত সকল প্রকার স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে উচ্ছেদে সহযোগিতার আশ্বাসের কথা বলেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ ১০ মাস হলেও রহস্যজনক কারণে সেখানে উচ্ছেদের আঁচড় লাগেনি। বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে হোটেল ওয়াল্ড বীচ রিসোর্ট এর নকশা বর্হিভূত বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। বরঞ্চ বর্তমানে সকল অবৈধ স্থাপনার পাশাপাশি আরো একটি সেখানে নতুন করে রেষ্টুরেন্ট তৈরির কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, “অনুমোদিত নকশার বিচ্যুতি সম্পর্কিত কারণ দর্শানোর নোটিশ” ও সর্বশেষ উচ্ছেদের জন্য চুড়ান্ত নোটিশ দেওয়ার পর সেখানে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী অথরাইজড অফিসার নাছির উদ্দিন কয়েকবার পরিদর্শনে যান। সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারি ও ব্যবহারকারিদের সাথে তার মোটা অংকের বাণিজ্য হয় বলে অভিযোগ ওঠে। স্থানীদের দাবী, যদি নোটিশ দাতারা ম্যানেজ না হয় তাহলে মালিকপক্ষ ও হোটেল ওয়াল্ড বীচ রিসোর্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী দেলোয়ার হোসেন উচ্ছেদের পক্ষে থাকার পরও কেন এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছেনা। তাদের মতে, বিশেষ করে গ্রীণ লাইন বাস কাউন্টার ও হোটেল পউষীর মালিক এর কাছ থেকে নোটিশ দাতার পক্ষে নাছির উদিন মোটা অংকে ম্যানেজ হয়েছে। যেকারনে চুড়ান্ত নোটিশ দেওয়ার পরও কোন প্রকার উচ্ছেদ অভিযান করেনি কক্সবাজার উন্নয়ন কতর্ৃপক্ষ।
অভিযোগের ব্যাপারে কক্সবাজার উন্নয়ন ককর্তৃপক্ষের সহকারী অথরাইজড অফিসার নাছির উদ্দিন বলেন, নোটিশ দেয়া হলেও এটি তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলয়ের কারণে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছেনা। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সাথে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কি সম্পর্ক বা উচ্ছেদ করার ক্ষমতা না থাকলে কয়েক দফায় নোটিশ দেয়ার কারন জানতে চাইলে সে উর্ধ্বতন কর্মকর্তরা জানে বলে প্রশ্ন এড়িয়ে যান। তবে এক পক্ষের কাছে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এর প্রমাণ কেউই দিতে পারবে না।
কক্সবাজার উন্নয়ন ককর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ রিসাদ উন নবী বলেন, আমি অথরাইজড অফিসার হিসেবে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। যেকারনে ওয়াল্ড বীচ রিসোর্ট এর দুই জনকে অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার জন্য নোটিশ দিয়েছি। তবে উচ্ছেদ কিংবা মোবাইল কোর্ট করার এখতিয়ার আমার নেই। তারপরেও বিষয়টি নিয়ে আমাদের সচিব স্যার ও চেয়ারম্যান স্যারের সাথে আলাপ করব। যেন দ্রুত সময়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যায়।
ওয়াল্ড বীচ রির্সোটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২১ অক্টোবর ২০২১ ও ৪ নভেম্বর ২০২১ সালে কক্সবাজার উন্নয়ন ককর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার রিসাদ উন নবী স্বাক্ষরিত দুইটি নোটিশ দেওয়া হয় আমাকে। প্রথমটি “অনুমোদিত নকশার বিচ্যুতি সম্পর্কিত কারণ দর্শানোর নোটিশ” দ্বিতীয়টি উচ্ছেদের জন্য চুড়ান্ত নোটিশ। আমি দুই নোটিশের জবাব দিয়েছি। পাশাপাশি উচ্ছেদকে স্বাগতম জানিয়েছি। কিন্তু তারপরেও কেন তারা উচ্ছেদ করছেনা তা আমি অবগত নই। তিনি আরো বলেন, আমি সর্বদায় আইনের পক্ষে এবং অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে।
কক্সবাজার উন্নয়ন ককর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ জানান, ওয়াল্ড বীচ রিসোর্টটি কউক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকে রয়েছে। কউক এর যাত্রা শুরুর পর অভিযোগের ভিত্তিতে সেই রির্সোট কতৃপক্ষকে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে মালিকানা নিয়ে জটিলতা থাকার কারণে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে নতুন করে যেসকল স্থাপনা হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি উক্ত বিষয় নিয়ে যদি কোন কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।