এ এইচ সেলিম উল্লাহ/জাহাঙ্গীর আলমঃ টেকনাফ সৈকতে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হতে না হতে এবার ইনানী সৈকত এলাকায় রোহিঙ্গা নারী-শিশুর মৃত্যুর মিছিল পড়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ইনানী পাটুয়ারটেক এলাকায় রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলার ডুবিতে ১৬ জনের মৃতৃদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২৬ নারী-পুরুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো আরো ৬০ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছে উদ্ধার হওয়া লালু মাঝি (৪৮) নামে এক রোহিঙ্গা। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে প্রচন্ড বাতাসের কারণে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি পাথরে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়।
তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার ভোররাতে বুচিদং সদর এলাকার প্রতিবেশী ১০০ নারী-পুরষ ও শিশু নাফনদীর মিয়ানমার সীমান্ত থেকে একটি ট্রলার করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছিল। বিকেলে তারা বাংলাদেশ সীমানায় পৌছালে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে। এতে ঢেউয়ের তীব্রতাও বেড়ে যাওয়ায় মাঝি ট্রলারটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। তাই ট্রলারটির গতিপথ পরিবর্তন করে উপকূলের দিকে আসলে পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে বিকট আওয়াজ করে ডুবে যায়। এসময় কে কোথায় চলে গেছে জানিনা। সাতরিয়ে এবং স্থানীয়দের সহায়তায় তারা কুলে আসে।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক জহুর আলম বলেন, ইনানী পাথুরে সৈকতের পাতুয়ারটেক এলাকায় বিকট আওয়াজ শুনে স্থানীয়রা সেদিকে দৌড়ে যায়। ট্রলার ডুবির বিষয়টি বুঝতে পেরে একজন অপর জনকে খবর দেয়। তখন তিনি রেড ক্রিসসেম্ট সোসাইটির দশকর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তাদের সাথে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ এবং পরে কোস্টগার্ডও যোগদেয়। তারা তৎপরতা চালিয়ে রোহিঙ্গা ২৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। উদ্ধার করা হয়েছে ৯ জন শিশু ও ৭ মহিলার লাশ। জীবিতদের ভাষ্যমতে এখনো ৬০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
স্থানীয় উদ্ধারকারী খলিল আহম্মদ, মোজাফফর, মোস্তাক জানান, বেঁচে যাওয়া ২৫ জন রোহিঙ্গা১৭ জনকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় উখিয়ার থানার পুলিশ।
বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গা জাফর জানান, আমরা সারাদিন ট্রলারে ছিলাম। কিছু খেতে পারিনি।
তিনি আরো জানান, টেকনাফের জাহাজপুরার এলাকার হানিফ তার বোটটি নিয়ে মিয়ানমার গিয়ে এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) কাই কিসলো জানান, সাগরে তিনটি ট্রলার ডুবে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৬ রোহিঙ্গা নারী-শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯জন শিশু, ৭ জন মহিলা।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইনউদ্দিন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের,
উখিয়া সহকারি কমিশনার (ভুমি) শিবলী নোমান সহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থল যান।
ইউএনও জানান, ১৬ জনের মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় অনেককে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
অপর একটি সূত্র দাবি করেছে, স্থলপথে সারাদেশে রোহিঙ্গা ছড়ানো রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় একটি চক্র এবার নৌ-পথে তাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিতে যাচ্ছিল। বৈরি আবহাওয়ায় পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার বাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সাগর পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটছে। রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাডুবিতে টেকনাফ ও আশপাশ এলাকা থেকে এ পর্যন্ত অন্তত দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের মৃত্যু হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।