২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

এবার খাদ্যাভাবে রাখাইন ছাড়ছে রোহিঙ্গারাঃ ১ সপ্তাহে ১৫ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

ফাইল ছবি

এএইচ সেলিম উল্লাহ,(সম্পাদক): মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে। স্থমিত হয়ে গেছে আক্রমণ ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া ঘটনা। এরপরও রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বন্ধ হচ্ছে না। রক্তাক্ত আক্রমণের পথ পরিহার করে খাদ্য অবরোধে এবার রাখাইন ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। গত এক সপ্তাহে নতুন করে প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ পয়েন্টে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের কড়াকড়ির কারণে রোহিঙ্গারা নৌকা যোগে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারলেও উখিয়ার আন্জুমান পাড়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রেখেছে। কিছু রোহিঙ্গা সাতরিয়ে নাফনদী পার হয়েও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ১৯ জনসহ এপর্যন্ত ৩৯ জন রোহিঙ্গা প্লাস্টিক কন্টেনারের সহায়তায় সাতরিয়ে নাফনদী পার হয়ে শাহপরীরদ্বীপে পৌছেন।

রোহিঙ্গাদের মতে, গোলাগুলি ও জ¦ালাও পোড়াও বন্ধ করলেও রাখাইন অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ পালিয়ে আসতে বাধ্য করতে নানা কৌশল নিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর মাঝে খাদ্য সংকট সৃষ্টি অন্যতম বলে উল্লেখ করছেন পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গারা। তাদের মতে যারা এখনো খুন হওয়া থেকে রক্ষা পেয়ে বেঁচে আছেন তাদের একপ্রকার ‘অবরুদ্ধ’ করে রেখেছে মিয়ানমার সেনারা। বাজারে কোন দোকানপাট খুলে বসা কিংবা অন্য কোথাও থেকে খাবার যোগাড় করতে দিচ্ছে না তাদের। ফলে শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেও ক্ষুধার তাড়নায় বাপদাদার ভিটেমাটিকে আর আঁকড়ে ধরা সম্ভব হচ্ছে না ওপারে অবস্থানরতদের।
এখন বাংলাদেশে আসার জন্য হাটা শুরু করেছে মিয়ানমারের বুচিদং ও রাচিদং এলাকার নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়া এলাকার বাসিন্দারা।

রাচিদং উপজেলার কেপ্রুদং এলাকা থেকে পালিয়ে আসা আবদু শুক্কুরের স্ত্রী রাবেয়া বসরী(৩০) বলেন, এখন শারীরিক নির্যাতন অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে তারা। তবে অবরুদ্ধ করে রেখে খাবার ও অন্যান্য অসুবিধার সৃষ্টি করছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি না পেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে জীবিত অবস্থানকারিরা। দিনের পর দিন অভুক্ত ক্ষুধা সইতে না পেরে অবশেষে তারা এপারে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে।

সীমান্তে দায়িত্বপালনকারি কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মো. ইকবাল আহমেদ জানান, শুক্রবার কুতুপালং ক্যাম্পে নেয়াদের কাছ থেকে তাদের পালিয়ে আসার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। তারা খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য প্রাপ্তীতে অবরোধ করে রাখার কথাটি উল্লেখ করেছেন। তাদের শারিরীক কন্ডিশন ও বাস্তবতা দেখে তাদের কথাটাই সত্য বলে প্রতিয়মান হয়েছে। তাই মানবিকতার কারণে শূণ্য রেখা অতিক্রম করা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে পাঠানো হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নতুন করে গত এক সপ্তায় কি পরিমান রোহিঙ্গা এসেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঠিক পরিসংখ্যান বলা যাবে না। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দিনে প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা উখিয়ার সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লকে স্থান দেয়া হয়েছে।

কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম বলেন, গত এক সপ্তাহে আঞ্জুমান পাড়া সীমান্ত থেকে প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার এবং গত দুই দিনে ২৫০ রোহিঙ্গা পরিবারকে (২ যাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার) নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের আশ্রয় ব্যবস্থা ও ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত এক সপ্তাহে নাফনদী পার হয়ে আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আবারো বেড়েছে। ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত এবং ক্যাম্পে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের হাতে এনজিও গুলো মোবাইল তুলে দেয়ায় নতুন করে রোহিঙ্গা আসা বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবসন সংগ্রাম পরিষদ আহবায়ক উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক পথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোষ্ট ও নজরদারি ফাঁকি দিয়ে দালালদের সহায়তায় অনেক রোহিঙ্গা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে বলে খবর পাচ্ছি। নতুন করে আরো রোহিঙ্গা আসা আমাদের জন্য বাড়তি চাপের। সবাই সবার অবস্থান থেকে এগিয়ে না আসলে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হবে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থাকে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।