আজ ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট দিনটিকে পালন করছে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর খোন্দকার মোশ্তাক আহমাদ ক্ষমতা নেন। তিনি ২০শে আগস্ট সামরিক শাসন জারি করেন। ৩রা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খোন্দকার মোশ্তাক সরকার উৎখাত হয়। তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ৬ই নভেম্বর খালেদ মোশাররফ বিচারপতি সায়েমকে প্রেসিডেন্ট করেন। এ ঘটনার পর ঢাকা সেনানিবাসে জওয়ানদের একটি অংশের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়। তারা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে তারা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে নানা কমূসূচি গ্রহণ করেছে দলটি। আজ সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরস্থ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিল হবে। ওদিকে ৭ই নভেম্বর উপলক্ষে এবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। সে অনুযায়ী সার্বিক প্রস্তুতি ও প্রশাসনের অনুমতিও চেয়েছিল। কিন্তু সরকারদলীয় নেতারা এ সমাবেশ প্রতিহতের ঘোষণা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে একদিন পিছিয়ে ৮ই নভেম্বর সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি চায় বিএনপি। কিন্তু পুলিশের তরফে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়। শেষপর্যন্ত নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি চেয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিক চিঠি দিলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের তরফে অনুমতি মেলেনি।
গণতন্ত্র রক্ষায় এখনো দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ বিএনপি: খালেদা জিয়া
গণতন্ত্র রক্ষায় বিএনপি এখনো দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ জানিয়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ৭ই নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ৭ই নভেম্বর জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সৈনিক-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিলো জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা ও হারানো গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে। তাই ৭ই নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। স্বাধীনতা উত্তর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, তৎকালীন ক্ষমতাসীন মহল নিজ স্বার্থে জাতীয় স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে আধিপত্যবাদের প্রসারিত ছায়ার নিচে দেশকে ঠেলে দেয়। আর এটি করা হয় শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য। আর সেইজন্য মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যার মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল গঠন করে বিভীষিকাময় শাসন চালু করা হয়। দেশের সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একটি মাত্র দল বাকশাল গঠন করা হয়। ফলে দেশে চরম অশান্তি ও হতাশা নেমে আসে। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারগুলোকে হরণ করে। দেশমাতৃকার এই চরম সংকটকালে ’৭৫-এর ৩রা নভেম্বর কুচক্রীরা মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে। এই অরাজক পরিস্থিতিতে ৭ই নভেম্বর স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনতার ঢলে রাজপথে এক অনন্য সংহতির স্ফুরণ ঘটে এবং জিয়াউর রহমান মুক্ত হন। এই পটপরিবর্তনে প্রেসিডেন্ট জিয়ার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। বিদেশি শক্তির এদেশীয় অনুচররা উদ্দেশ্যসাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করে। জিয়া শাহাদাতবরণ করলেও তার আদর্শে বলীয়ান মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনো দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমানে আবারো বিদেশি শক্তির ক্রীড়ানকে পরিণত হওয়া শিখণ্ডি সরকার রাষ্ট্রক্ষমতাকে জোর করে আঁকড়ে ধরেছে। সরকারের নতজানু নীতির কারণেই দেশের সার্বভৌমত্ব দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে পড়েছে। গোপন চুক্তি সম্পাদন করে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রভুত্ব কায়েমের বেপরোয়া কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ভোটারবিহীন এই সরকার জবরদস্তি করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াকু নেতাকর্মীদেরকে বীভৎস নির্মমতায় দমন করছে। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে নির্দয় ফ্যাসিবাদী শাসনের যাঁতাকলে পৈশাচিকভাবে পিষ্ট করছে। ভোটারবিহীন সরকারের নতজানু নীতির কারণেই আমাদের আবহমানকালের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর চলছে বাধাহীন আগ্রাসন। তাই আমি মনে করি, ৭ই নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। আলাদা বাণীতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দেশবাসী সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং সবার সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।