চারদিকে ম-ম গন্ধ। ফসলি মাঠে এখন শেষ মুহূর্তের জন্য ঝিলিক দিচ্ছে আমন। কাটা শেষ হয়েছে অর্ধেকের বেশি জমির ধান। তবে এখনও কোন কোন মাঠে শুইয়ে রাখা হয়েছে ধানের গোছা, শুকানো শেষেই তা যাবে উঠানে। সেখানে মাড়াই শেষে তা উঠবে কৃষকের গোলায়। আবার কারও ধান বিক্রি হচ্ছে মাঠ থেকেই সরাসরি। মাঠে মাঠে কৃষকের মহাব্যস্ত সময় অতিবাহিত হচ্ছে আমনের শেষ সময়। আর ধানের দাম পেয়ে এবার কৃষকও খুশি। সবমিলিয়ে এবার বাম্পার ফলনে সোনালি ধানের মতো কৃষকের মুখেও দেখা দিয়েছে সোনালি হাসি।
কৃষকের ঘরে নবান্ন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য নবান্ন উৎসবে মেতে উঠেছে কৃষক কৃষাণী। বাড়িতে বাড়িতে নতুন ধানের ভাপাপিঠে, কুসলি পিঠে, পায়েস, মুড়ি, চিড়া আর মিষ্টি খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু খাদ্যসামগ্রী।
জেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলার ৮ উপজেলায় প্রায় ৭৭ হাজার ৯ শত ৫০ হেক্টর জমিতে আমনসহ বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৭ হাজার ৭ শত ৯২। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রেকর্ড সংখ্যক আমন ধানের ফলন হয়েছে।
তার মধ্যে ৪৯ বীজ জাতের ধানের ফলন হয়েছে বেশী। অন্যান্য জাতের মধ্যে ৩৪ বীজ জাতের সুগন্ধি ধান, স্থানীয় লাল ধান (পায়জাম), ৫৬, ৫৭ ও ৩৪ ধানের ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে জিংক সমৃদ্ধ বিরি জাতেরও ভাল ফলন হয়েছে। বিরি ধানের চাল প্রতিবন্ধি শিশুদের জন্য খুব উপকারী। ৩৯ বীজ জাতের আগাম ফলন হওয়ায় জমিতে সরিষা ও রবি (শীতকালিন সবজি) শস্য উৎপাদন করছে কৃষকরা। জানা যায়, চলতি মৌসুমে ভেজালমুক্ত সার-কিটনাশকের ব্যবহার, আবহাওয়া অনুকুলে থাকা ও পোকামাকড়ের আক্রমন ছিলনা।
এছাড়া কক্সবাজার জেলা কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক আ.ক.ম শাহরিয়ার এর নেতৃত্বে জেলাব্যাপী ব্যাপক তৎপরতার কারনে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। যার ফলে ধানে তেমন কোন রোগ-বালাই পরিলক্ষিত হয়নি। এতে বিগত বছরের তুলনায় এবার রেকর্ড সংখ্যক ধানের ফলন বেশি হয়েছে।
ধান কিনতে আসা ব্যবসায়ী আবছার জানান, দেশের অন্যান্য এলাকার চাইতে কক্সবাজরের ধানের গুনগতমান খুবই ভাল। এখানকার ধানের চাল ফলনেও ভাল হয়। তাই এই এলাকার ধানের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। ঢাকা থেকে ধান কিনতে আসা ব্যবসায়ী সিফাত হোসেন জানান, এই এলাকার ধানের গঠন, চালের মান সবচাইতে বেশি। তাই অন্যান্য বাজারের চাইতে আমরা এখানকার ধান বেশি দামেই কিনে থাকি।
টেকনাফ উপজেলার রংগীখালী এলাকার কৃষক নুর মোহাম্মদ বেক্কা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে এবার ধান উৎপাদন করতে হালচাষ, ধান লাগানো, সার প্রয়োগ, পানি সেচ কিটনাশক ও ধান কাটাসহ প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। বাজারে বিক্রি করতে গেলে স্বর্ণা, বিনা সেভেন ও বিআর ৪৯ জাতের প্রতিমন ধান ৮শত ২০ থেকে সাড়ে আটশত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার রোপা-আমন ধানে অনেক বেশি ফলন হওয়ায় বেশী লাভ হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ.ক.ম শাহরিয়ার জানান, কক্সবাজার কৃষি বিভাগ কৃষকদের উন্নয়নে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ভাল ফলন ও কৃষকদের উন্নয়নে ইতিমধ্যে গঠনমূলক কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি হওয়ায় ফলনও ভাল হয়েছে। আশা করছি এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান, এবার আমন উৎপাদনে জাতের ক্ষেত্রে বৈচিত্রতা লক্ষ্য করা গেছে। আমনের আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক সংখ্যক জমিতে। এখন পর্যন্ত প্রায় জমির ধান কাটা হয়েছে। অনুকূল আবহওয়া থাকায় সবমিলিয়ে এবারও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।